ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য: জর্দা, সাদাপাতা, গুল খেতে আনন্দ কিন্তু ক্ষতির শেষ নাই

ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য কি?

না পুড়িয়ে যে তামাকজাত দ্রব্য সরাসরি সেবন করা হয়, সেটা মুখে রেখে দিয়ে, চিবিয়ে বা নাক দিয়ে গন্ধ শুঁকে হতে পারে, তাই ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ইংরেজীতে smoke-less tobacco (SLT) নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এতে কোন ধোঁয়া বের হয় না। বেশীর ভাগ সেবনকারী মুখে চিবিয়ে খান, কিংবা পিকের সাথে ফেলে দেন। যেকোন তামাকদ্রব্যের মতোই ধোঁয়াবিহীন তামাকে নিকোটিন (Nicotine) আছে, এবং তা মুখের ভেতরের আস্তরণ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে।

দুই ধরণের ধোঁয়াবিহীন তামাকদ্রব্য পাওয়া যায়:

১. চোষণ ও চিবানো (চর্বণ) তামাক (Chewing Tobacco): এগুলো খোলা পাতা আকারে, যেমন সাদা পাতা (আলা পাতা), গুঁড়ো বা টুকরো করে নানা ধরণের সুগন্ধি মিশিয়ে (যেমন জর্দা) পান ও সুপারির সাথে খাওয়া, আবার তামাকপাতার পাউডার দিয়ে মুখে বা মাড়ির নীচে রাখা (যেমন গুল)। 

২. শুঁকে নেয়া তামাক (Snuff Tobacco): তামাক পাতা খুব সুক্ষভাবে কেটে অথবা পাউডার করে সুগন্ধি মিশিয়ে শুকনো অথবা ভেজাভাবে তৈরি করা হয়। নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেয়ার মতো করে সেবন করা হয়।

কোম্পানি ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে আগ্রহী

তামাক কোম্পানিগুলো সাধারণত সিগারেটের নানা ব্রান্ড তৈরির ওপর মনোযোগ দিলেও পাশাপাশি বাজারজাতের কৌশল হিসেবে ধোঁয়াবিহীন তামাকদ্রব্যও তৈরি করছে। ২০১২ সালে সিগারেট কোম্পানি ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য উৎপাদনের জন্য ৪৩.৫ কোটি ডলার বিজ্ঞাপন প্রচারণার কাজে ব্যায় করে। [ তথ্য সুত্রঃ Federal Trade Commission. Federal Trade Commission Smokeless Tobacco Report for 2012[PDF–180 KB]. Washington: Federal Trade Commission, 2015]

কিছু তামাক কোম্পানি প্রচার করছে যেখানে ধুমপান নিষেধ আছে সেখানে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য সেবন করা যাবে। [তথ্য সুত্রঃ Timberlake DS, Pechmann C, Tran SY, Au V. A Content Analysis of Camel Snus Advertisements in Print Media. Nicotine and Tobacco Research 2011;13(6):431–9]

ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য ব্যবহাকারী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই বেশী

উত্তর আমেরিকা, উত্তর ইওরোপ, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং এশিয়ায় এই ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের বিভিন্ন ধরণের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে সারা পৃথিবীর ৭০টি দেশে ৩০ কোটি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন, এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যবহারকারী রয়েছে ৮৯%। বাংলাদেশ ও ভারতে রয়েছে ৮০% ব্যবহারকারী।

বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য ব্যবহার

বাংলাদেশে সাধারণভাবে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে সাদা পাতা বা আলা পাতা, জর্দা, গুল, কিছু পরিমাণে নস্যি। পনের বছর বয়স ও তার উর্ধ্ব বয়সের নারী ও পুরুষের মধ্যে ২৭% সাদা পাতা বা আলা পাতা, জর্দা ও গুল ব্যবহার করেন। ধুমপানের ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা বেশী (পুরুষ ৪৩.৩%, নারী ১.৫%) হলেও ধোঁয়াবিহীনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সমান। নারীদের মধ্যে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বরং একটু বেশী পাওয়া যায়, পুরুষ ২৮%, নারী ২৯%। অর্থাৎ প্রায় প্রতি তিন-চার জনের মধ্যে একজন নারী পানের সাথে জর্দা, আলাপাতা সেবন করেন। ধুমপায়ীদের মধ্যে ধুমপানের সাথেই জর্দার ব্যবহার দেখা যায়, যদিও এই উভয় ধরণের তামাকদ্রব্য ব্যবহারের পরিসংখ্যান নেয়া হয় নি। জর্দা-গুলের ব্যবহার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশী এবং ধনী ও মধ্যবিত্তের চেয়ে গরিবের মধ্যে বেশী বলে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়।

আরো জানতে এই বইটি পড়ুন: খেতে আনন্দ কিন্তু ক্ষতির শেষ নাই

Back to album