ইপিজেডে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি না ট্রেড ইউনিয়ন!


ইপিজেডে কর্মরত পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার পেলেন না। সম্প্রতি (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬), ইপিজেড শ্রমিক সংগঠন আইন, ২০১৬ নামে যে অনুমোদন দিয়েছেন মন্ত্রিসভা সে আইন অনুযায়ী সংগঠনের নাম হবে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি। এই সমিতির মাধ্যমে মনে করা হচ্ছে মালিক পক্ষের সাথে যৌথ দরকষাকষি এবং ধর্মঘটের অধিকার পাবে শ্রমিকেরা। কিন্তু আসলে কি তাই মিলবে?

দেশী বিদেশী মিলিয়ে ১০টি রপ্তাতি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেড রয়েছে বাংলাদেশে। যেখানে কাজ করেন কয়েক লক্ষ শ্রমিক। বাংলাদেশের শ্রম আইনের পরিবর্তে ইপিজেডগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে ইপিজেড শ্রমিক কল্যাণ সমিতি এবং শিল্প সম্পর্ক আইন নামের দুটি পৃথক নির্দেশিকা অনুযায়ী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা জিএসপি ফিরে পেতে তাগিদ ছিল ইপিজেডের জন্য নতুন আইন প্রণয়নের। যেখানে থাকবে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার বিধান।

আর এ লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন দিল বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রমিক আইন, ২০১৬ এর খসড়ার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, শ্রম আইন বিবেচনায় নিয়ে এবং ইপিজেড এর আলাদা বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে এই আইন।

নতুন আইনে সংগঠন এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার শ্রমিকেরা পাবেন এমন দাবী করা হচ্ছে। শ্রমিকদের জন্য থাকবে ১২ সদস্যের স্থায়ী মজুরী বোর্ড। ইপিজেড এর শ্রমিকেরা অন্যান্য শ্রমিকদের চেয়ে বেশী আর্থিক সুবিধা পাবেন। আরও পাবেন অর্জিত ছুটি নগদায়ন সুবিধা, খাদ্য ভাতা এবং বিনা মূল্যে চিকিৎসা সুবিধা।

ইপিজেড শ্রম আইনের এ উদ্যোগ সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ। শ্রমিকদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা বলেছেন, এতে তাদের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়বে হয়তো। তবে তাদের মন্তব্য, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার এখনই নিশ্চিত হচ্ছে না। আমাদের দেশে বহু আইন আছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নাই। তাই এই আইনকে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের তদারকীর প্রয়োজন রয়েছে। এদিকে ইপিজিডগুলো আলাদা বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ায় সামগ্রীকভাবে এটি খুব বেশী প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছে পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশী ক্রেতারা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে পৃথক বিধি দ্বারা পরিচালিত ইপিজেডগুলোতে এতোদিন সিলেকটেড্ ওয়ার্কাস্ এসোসিয়েসন থাকলেও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার ছিল না। এছাড়া নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অজুহাত ছিল। এ অবস্থায় ট্রেড ইউনিয়নের আদলে নির্বাচিত শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠনের অধিকার দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়ালেও পূর্ণাঙ্গ ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত হচ্ছে না বলে মত শ্রমিক সংগঠনের।

এদিকে নতুন আইনকে স্বাগত জানিয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, এখন ইপিজেড ও বাইরের কারখানার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য থাকবে না। অর্থনীতিবিদদের মতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা না রাখতে পারলেও এ আইন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

নতুন ইপিজেড শ্রম আইনে দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ২ লক্ষ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ছাড়াও নারী শ্রমিকদের পূর্ণ বেতনে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

ইপিজেড শ্রম আইনে দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের জন্য যে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ রাখা হয়েছে তা যথোপযুক্ত নয় বলে দাবী তুলেছে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। তাদের দাবি পোশাক কারখানার দূঘটনায় যদি একজন শ্রমিক ৩০ বছর বয়সে মারা যায় তার জন্য ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ অতি সামান্য। তাই নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বাবদ কেবলমাত্র ২ লক্ষ টাকা নয়। এর মূল্য অবশ্যই আরও বাড়াতে হবে। সর্বপরি পোশাক কারখানায় এই আইনের বাস্তবায়ন তাড়াতাড়ি সরকারকে কার্যকরী করতে হবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।