২০১৫ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ডাক


“সকল প্রকার গুম-খুন, হত্যা ও সহিংসতা বন্ধ কর, জনগণের অংশগ্রহণে অবিলম্বে রাজনৈতিক সমাধান চাই” এই দাবীতে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ও ‘আমরাও নারী’ এর যৌথ আয়োজনে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস,২০১৫ উপলক্ষে ঢাকায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, নারীপক্ষ, নারীগ্রন্থের সোমবারের মেয়েদের আড্ডা, প্রতিশ্রুতি মহিলা সংগঠন, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ইনার হুইল ক্লাব, তাফসি উইল কোরান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, উইমেন ফর গুড গর্ভনেন্স, গণবিশ্ববিদ্যালয়, শ্রমিক সংগঠন, তেল গ্যাস পানি রক্ষা কমিটি, সমাজকর্মী এবং উবিনীগ।

শ্রমিক নারী মিলি আকতার বলেন, আমরা গার্মেন্টে যে শ্রম দেই তার মূল্যায়ন আমরা কিছুই পাইনা। সকাল আটটা থেকে কাজ শুরু করি। কথায় কথায় শ্রমিক ছাটাই করে। আমরা যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার, ঘরভাড়া, কাপড়, লেখাপড়া চালাই। ঠিকমতো বেতন পাই না। আমরা নারীরা ঘরে বাইরে সবখানেই নির্যাতিত। থানায় জিডি করতে গেলেও করতে পাইনা। কেন পাইনা? আমরা নারী বলে কি? আমরা সমান অধিকার চাই। আমরা বাবার সম্পত্তিতে সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।

তেল, গ্যাস, পারি রক্ষা আন্দোলন এর ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল্লাহ বলেন, কবি নজরুল বলেছে অর্ধেক নারী অর্ধেক নর। আমি বলবো নারীই বেশি। কৃষির উৎপত্তি নারীর হাতে হয়েছে। নারী, শিশু সবার জন্য গ্যাস না হলে জীবন দূর্বিসহ হয়ে পড়ে। আন্দোলনের মাধ্যমে অবশ্যই সমাজের উন্নয়ন আসবে।

উইমেন ফর গুড গর্ভনেন্স এর অধ্যাপক দিলারা চেীধুরী বলেন, নারী অধিকার আদায়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনৈতিক কবষমতায়নে নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের শোষণ বন্ধ করার যে নীতি তৈরী করা সেখানে অত্যান্ত প্রান্তিক। প্রথমত: মুনাফা হলো তাদের কাজ দ্বিতীয়ত: হলো যারা নীতি তৈরী করে তারা পুরুষ। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে নারীর অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না। দেশের গুম, হত্যা, ককটেল, সহিংসতা বন্ধের দাবী জানাই। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক ভাবে হওয়ার দাবী জানাই।

নারীপক্ষ সংগঠনের রওশন আরা বলেন, আজকে একসাথে হয়েছি নারীর অধিকার আদায়ের জন্য। সরকার সম্প্রতি বাল্যবিয়ের বয়স কমানো নিয়ে কাজ করছে। পত্রিকায় খবর এসেছে বিয়ের বয়স ১৮ থাকবে কিন্তু যদি বাবা মা চাইলে ১৬ বছর বয়সেও বিয়ে দিতে পারবেন। আমাদের দাবী সরকার এমন কোন উদ্যোগ যেন না নেন, যাতে নারী নির্যাতন বেড়ে যায়। আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে দাঁড়িয়ে বলছি ১৬ বছর বয়সে বিয়ে আমরা আপত্তি জানাই।

বাঁচতে শেখ নারী সংগঠনের ফিরোজা বেগম বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন মানবতার উন্নয়ন। নারীকে পিছিয়ে রেখে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। নারীরা এখনও পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকারী নয়। বাংলাদেশে যত রকমের ঝামেলা হয় তা নারী ও শিশুর উপর এসে পড়ে। সমাজে, রাষ্ট্যে, পারিবারিক ভাবে নারীরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তা আইনের জটিলতার কারণে। নারীর প্রতি বৈষম্য সনদ সেটা সরকার সমাধান করবে আশা করি। পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য প্রকল্প গ্রহন করবে।

বিশিষ্ট লেখিকা অনামিকা হক লিলি বলেন, কণ্যা জায়া জননী এই তিন রূপে আমরা নারীরা অগ্রসর হই। মৌলবাদীরা নারীদের সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের পিছিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ইসলামে মেয়েদের সম্পর্কে বলে, মেয়েদের মুখ দেখলে পাপ, মেয়েরা শয়তানের কারখানা। মেয়েরা যেন শুধুই সন্তান জন্মদানের জন্য। নারীকে জানতে হবে তার অধিকার সম্পর্কে। ছেলে মেয়েরা ভাল কিছু করলে বাবার নাম হয়। মায়ের নাম হয় না। আমরা এখন স্কুলে মায়ের নাম ব্যবহার করছি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আনোয়ারা খাতুন বলেন, নারীদের সুযোগ দিলে তারা সবকিছুই করতে পারে। নারীর অংশগ্রহনে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নারী নারী নারী ! আমরা সব করতে পারি। মুক্তিযোদ্ধা নারী দিয়েই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র শুরু হয়। আমরা সকল স্থলেই নারীরা কাজ করি। ধূমপায়ীদের আমরা চাকুরীতে নেই না। নারীদের ঘরের বাইরে আসতে দেয়া হয় না। নারী না হলে সমাজে একা পুরুষ সবকিছু করতে পারে না।

আমাদের দাবী:

১.সকল প্রকার গুম-খুন, হত্যা ও সহিংসতা বন্ধ করা

২. রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চাই

৩. বিয়ের বয়স ১৮ বছর করা

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।