নয়াকৃষি
আন্দোলন


পাঁচফোঁড়ন

পাঁচফোড়ন কি?

পাঁচটি মসলা জাতীয় খাদ্যের বীজ রান্নার পরে ‘ফোঁড়ন’ হিসাবে ব্যবহারকে পাঁচফোঁড়ন বলে। ‘ফোঁড়ন’ মানে হাল্কা তেলে কিম্বা ঘিয়ে বীজগুলো টেলে রান্না বা সেদ্ধ করা শাক বা শব্জির ওপর দেওয়া। ব্যস। উদ্দেশ্য হচ্ছে শাকশব্জির ঘ্রাণ ও স্বাদ উসকে দেওয়া। গরম তেল বা ঘিয়ে বীজগুলো লাফায়। আমাদের রান্না পদ্ধতির মধ্যে এই প্রকার ‘উসকানি’র গুরুত্ব অপরিসীম। এখান থেকে আমরা ‘ফোঁড়ন’ কাটা কিম্বা কারো কথায় উসকানি দেওয়া অর্থে শব্দটি ব্যবহার করি।

তেলে কিম্বা ঘিয়ে টেলে বীজের দানার ‘ফোঁড়ন’ দেওয়া কথাটা সম্ভবত ভোজপুরি বা মৈথিলী ভাষা থেকে আসা। পাঁচফোঁড়ন বাংলাদেশ ও তার আশপাশের ভূখণ্ডের মানুষদের খাদ্য ও রান্না ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশেষত বাংলাদেশ, আসাম ও উড়িষ্যার। আরেকটি শব্দের সঙ্গে আমরা পরিচিত, বাঘার বা বাঘাড় দেওয়া। এটা আদিতে উড়িয়া শব্দ। আমরা যাকে ‘ফোঁড়ন’ বলি উড়িয়াতে সেটাই বাঘার দেওয়া। তবে বাংলাদেশে তেলে বা ঘিয়ে ভেজে গরম গরম ডালে বা শব্জিতে পেঁয়াজ, রসুন সহ যে &lsquo আরো পড়ুন


চৈত্র সংক্রান্তি ও নারী

বাংলা সনের বছর শেষ হয় চৈত্র মাসের ৩০ তারিখে। এই দিনটাই চৈত্র সংক্রান্তি হিসেবে গ্রামের মানুষ পালন করে খুব নিষ্ঠার সাথে। কোন ঘটা করে নয়, কিন্তু তারা নিয়মটা ঠিকই মেনে চলেন। নিয়মটাও তেমন শক্ত কিছু নয়। সোজা কথা হচ্ছে এই দিনে তারা কমপক্ষে চৌদ্দ রকম শাক বাড়ীর আলানে-পালানে, ক্ষেতের জমি থেকে তুলে এনে রান্না করেন। কিছু শাক মিশ্র আকারে রান্না হয় আর কিছু শাক আলাদাভাবে রান্না, কিংবা ভর্তা বা ভাজি করে খেতে হয়। সাধারণভাবে এই শাকগুলো হচ্ছে হেলেঞ্চা, ঢেঁকি, সেঞ্চি্‌, নটে শাক (কোথাও ন্যাটাপ্যাটাও বলে), বথুয়া, তেলাকুচা, গিমা, দণ্ডকলস, নুনিয়া, কচু শাক, গুরগুরিয়া শাক, মরুক, ঢেঁকি শাক, নুনিয়া শাক, হাগড়া, আম খুইড়ে শাক, খুড়ে কাটা, থানকুনি পাতা, নুন খুরিয়া, কানাই, পাট, রসুন, পিপল, খাড়কোন, ইত্যাদি। আরো অনেক শাক রয়েছে। সাধারণত গ্রামের মেয়েরা জানে কোন শাক পুষ্টির দিক থেকে ভাল, কোনটা কি ওষুধি গুন আছে; কোনটা শুধু পাতা তুলতে হবে, কোনটার আগাটা কাটতে হবে। এই জ্ঞানের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। কিন্তু এই জ্ঞান গাছপালা সম্পর্কে জ্ঞান ও কৃষিচর্চা থেকে আলাদা কিছু নয়। আধুনিক কালের পুষ্টি বিজ্ঞান পুষ্টিকে কৃষি ও উদ্ভিদের জ আরো পড়ুন


অল্পকথায় নয়াকৃষি

নয়াকৃষি বা প্রাণের চর্চা

নয়াকৃষি কৃষকদের আন্দোলন। চাষাবাদে কোন প্রকার বিষ,  কীটনাশক এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক সার বা অন্য কোন পদার্থ ব্যবহার না করে এবং স্থানীয় প্রাণ ও পরিবেশের উপযোগী কৃষকের উদ্ভাবিত দেশীয় জাতের বীজ ব্যবহার দিয়ে একর প্রতি ফলন বৃদ্ধির পদ্ধতির নাম নয়া কৃষি।  নয়াকৃষিতে ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে সেচের জন্য মাটির তলা থেকে পানি তোলা হয় না, বরং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও মাটির ওপরের পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নয়াকৃষিতে একাট্টা ফসল না করে মিশ্র ফসলের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। নয়াকৃষির কৃষকরা এই ধরণের দশটি নীতি অনুসরন ও চর্চা করেন।

সাধারণত যাকে 'অর্গানিক' বা জৈব কৃষি বলা হয় নয়াকৃষিকে সেই দিক থেকে 'অর্গানিক' বা জৈবকৃষি। কিন্তু তার বৈশিষ্ট্য আলাদা। এখানে প্রাকৃতিক উপায়ে জৈব কৃষির চর্চা ছাড়াও জীব-অণুজীব সমৃদ্ধ সুস্থ ও সবল মাটি তৈয়ারি এবং বিচিত্র ও বিভিন্ন প্রকার প্রাণ ও প্রাণের বৈচিত্র্যের ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়। একারনে বলা হয় নয়াকৃষি আরও অগ্রসর ও উন্নত কৃষির চর্চা করে।

নয়াকৃষির চাষাবাদ মা আরো পড়ুন


ভাবকথা ও ভাবচর্চার খবর

মানুষের সঙ্গে মানুষের এবং মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির আনন্দময় চাষাবাদ

জীবন ও জ্ঞান

বানভাসি বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের বন্যায় একদিকে তাঁতী আর অন্যদিকে কৃষকদের দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা চলছিল টাঙ্গাইলে উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) উদ্যোগে। সেই সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে করতে প্রাণ ও প্রকৃতির সুরক্ষা ও বিকাশের তাগিদে ১৯৯০-এর দিকে নয়াকৃষি ধারণার উদয়।

নয়াকৃষি আন্দোলনের ভাব ও প্রাথমিক চর্চা গড়ে উঠেছিল উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)-এর অনুপ্রেরণায়। কৃষকের দৈনন্দিন লড়াই সংগ্রামের ভেতর থেকেই ভাব, ভাষা ও কাজের প্রক্রিয়া গড়ে গঠে। অতএব উবিনীগ শুরু থেকেই কৃষকদের নেতৃত্বে কৃষকদের মধ্যে কাজ শুরু করে। ফলে শুরু থেকেই স্বাধীনভাবে কৃষকদের নিজেদের লড়াই-সংগ্রাম হিসাবে নয়াকৃষি আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। ক্রমে ক্রমে নিজস্ব ভাব, সংগঠন ও কাজের নতুন পদ্ধতি হিশাবে নয়াকৃষি দেশে বিদেশে পরিচিত হয়ে ওঠে।

প্রথমে কাজ শুরু হয় টাঙ্গাইল জেলায়। নয়াকৃষি আন্দোলন এখন টাঙ্ আরো পড়ুন


নয়াকৃষি আন্দোলন

নয়াকৃষি এক কথায় প্রাণের চর্চা -- অর্থাৎ প্রাণের সুরক্ষা, বিবর্তন ও বিকাশের সামগ্রিক ও সপ্রাণ ব্যবস্থাপনার চর্চা। এর লক্ষ্য আনন্দময় জীবনযাপন। জীবনকে তার সারবত্তাসহ অনুভব, উপলব্ধি ও উপভোগ। কর্মে, জ্ঞানে,  জীবনযাপনে  প্রাণের স্বাদ পুরাপুরি গ্রহণ  করতে চায় নয়াকৃষি। নিরন্তর আনন্দ তার লক্ষ্য।।  জগত কেবলি ভোগের  বস্তু নয়,  ওপর আধিপত্য, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পর্কের পরিবর্তে সকলে মিলে অন্তরঙ্গ ও আনন্দময় সম্পর্কের স্ফুর্তি ঘটানোই নয়াকৃষির কাজ।

নয়াকৃষি কৃষকদের আন্দোলন। বিষ কোম্পানির প্ররোচনায় কৃষিতে বিষ ব্যবহারের যে ভয়ংকর অভ্যাস গড়ে উঠেছে নয়াকৃষি তা অবিলম্বে বন্ধ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। পরিবেশ, প্রাণ ও প্রাণবৈচিত্রের কোন ক্ষতি না করে চাষাবাদ কিভাবে করা যায় কৃষকদের সেই চেষ্টা থেকে নয়াকৃষি আন্দোলনের জন্ম। যারা শুধু কৃষির ফলনে আগ্রহী তঁরা জেনে খুশি হবেন যে নয়াকৃষি চাষাবাদে কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও বিষ বা কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া পরিবেশ অনুযায়ী দেশীয় জাতের বীজ থেকে একর প্রতি ফলন বৃদ্ধির পদ্ধতির নাম নয়াকৃষি। নয়াকৃষিতে ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে সেচের জন্য মাটি আরো পড়ুন