কুষ্টিয়ায় বিশ্ব হাতধোয়া দিবস উদযাপন


বিশ্ব হাতধোয়া দিবস ২০১৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে ১৫ অক্টোবর ২০১৪ নবপ্রাণ আখড়া বাড়িতে সকাল ১০:০০ টায় সমাবেশ, আলোচনা সভা, হাত ধোয়া প্রদর্শন ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নিরাপদ খাদ্য প্রকল্পের (এফএও - এফএস পি ) সহায়তায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নেটওয়ার্ক (বিএফএসএন) এর পক্ষে উবিনীগ এই অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।

সমাবেশ ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উবিনীগের গবেষনা পরামর্শক ড. এম এ সোবহান। প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র জনাব নাইমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,ডা: মোঃ সেলিম হোসেন ফরাজী, মেডিক্যাল অফিসার, সিভিল সার্জন কার্যালয়, কুষ্টিয়া, মোঃ শামসুজ্জোহা, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কুমারখালী উপজেলা, কুষ্টিয়া ও আশরাফ উদ্দিন নজু, সহ-সভাপতি, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, কুষ্টিয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, জাহাঙ্গীর আলম জনি, পরিচালক, নয়াকৃষি গবেষণা প্রকল্প, উবিনীগ

স্বাগত বক্তব্য রাখনে, সীমা দাস সীমু, পরিচালক, মা ও শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা প্রকল্প উবিনীগ। আরো বক্তব্য রাখেন, অংশগ্রহনকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুজ জামান সিয়াম, শাফিয়া বেগম, কৃষক, নয়াকৃষি আন্দোলন, মোঃ কামরুজ্জামান, সহকারী শিক্ষক, জয়নাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিনা রানী দত্ত, সহকারী শিক্ষক, লালন লোকশিক্ষা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ।

সীমা দাস সীমু বলেন, প্রতি বছর ১৫ অষ্টোবর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত হয়। হাত ধোয়া অভ্যাসের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের জন সচেতনতা সৃষ্ঠির উদ্দেশ্যে দিবসাটি পালিত হয়। বিশ্ব ব্যাপি ২০০৮ সাল থেকে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। সত্তরটি দেশে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ছেলে মেয়ে প্রতি বছর এ অনুষ্ঠানে অংশে গ্রহন করেন। এ বছর ও লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে পাঁচটি মহাদেশে এ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করছে। নবপ্রাণ আখড়া বাড়ি, কুষ্টিয়ার আমাদের এই আয়োজনে আজকে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, আয়োজকদের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগত ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

কৃষক সাফিয়া বেগম বলেন, ফসল চাষ থেকে খাবারের প্লেট পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি আমাদের চিন্তায় রাখতে হবে। সুস্থ থাকার জন্য নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ, রান্নার সময পরিষ্কারভাবে ধোয়ামুচা ও হাত পরিষ্কারভাবে ধুয়ে আমাদের খাবার গ্রহণ করতে হবে।


সুফিয়া বেগম


ডা: মোঃ সেলিম হোসেন ফরাজী বলেন, হাত ধোয়ার অভ্যাসের মধ্য দিয়ে আমরা প্রাণঘাতি রোগ যেমন- ডাইরিয়া, ইনফ্লুয়েনঞ্জা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। এ বছরের হাত ধোয় দিবসের অনুষ্ঠানে স্বতস্ফুর্তভাবে আমরা সকলে অংশগ্রহণ করছি। আজকে এই গুরত্বপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে হাত ধোয়ার পক্ষে জন সচেতনতা সৃষ্ঠি করি। নিজে হাত ধুই এবং অন্যকে হাত ধুতে উৎসাহিত করি।

কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাইমুল ইসলাম বলেন, এবছর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃ পরিস্কার হাত জীবন বাঁচায়। এ শ্লোগানের মূল নিশানা শিশুরা এবং স্কুল। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। পরিবর্তনের শক্তি। সুস্বাস্থ্যর ভাল অভ্যাস গুলি স্কুল থেকে পরিবারে এবং সমাজে পৌঁছে দেবেন শিশুরাই। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, বিশোষ করে টয়লেট ব্যবহারের পরে এবং খাদ্য দ্রব্যে হাত দেবার আগে হাত ধোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। হাত ধোয়ার অভ্যাস খুব ভাল অভ্যাস।

ড. এম. এ. সোবহান বলেন, শিশুরাই সাধারণত ডায়রিয়া রোগে বেশী আক্র্যান্ত হয়। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৩.৫ মিলিয়ন শিশু, যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম, ডাইরিয়া ও নিউমোনিয়ায় মারা যায়। শুধু মাত্র সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে ডাইরিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা ৬০% এবং শ্বাস-কষ্ঠে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ২৫% কমানো যেতে পারে।

সমাবেশ শেষে হাত ধোয়ার প্রদর্শণ অনুশীলন করা হয়। ডা: মোঃ সেলিম হোসেন ফরাজীর পরিচালনায় তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষার্থী হাত ধোয়ার প্রদর্শণ অনুশীলন অংশগ্রহণ করেণ। এই হাত ধোয়ার প্রদর্শণ অনুশীলন থেকে উপস্থিত শিক্ষার্থীসহ সকল অংশগ্রহণকারী ২০ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত হাত ধোয়ার এই নিয়ম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।


হাতধোয়া দিবসৱ


আলোচনা সভা শেষে সমাবেশে সকলের অংশগ্রহনে একটি বন্যাঢ্য র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। র্যালির শ্লেগানগুলোর মধ্যে প্রধানত ছিল, ”পরিস্কার হাত জীবন বাঁচায়”, ”সুস্থ থাকার প্রথম ধাপ, সাবান দিয়ে ধোব হাত”; ”হাত দিয়ে খাবার খেলে, ধোব হাত সকলে”, ”যতবার পায়খানায় যাই, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া চাই”। র্যালিটি লালনশাহ মাজার থেকে শুরু হয়ে - ফুলতলা মোড় -বটতলা- একাডেমি মাঠ - মেলা মাঠ হয়ে নবপ্রাণ আখড়াবাড়ীর সামনে এসে সমাপ্ত হয়।


হাতধোয়া দিবসৱ


বিশ্ব হাতধোয়া দিবস ২০১৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানমালায় সকলের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত স্বতস্ফুর্ত ও জীবন্ত। বৈচ্ত্রিময় পেশাজীবি যেমন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকারী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তর, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, কৃষক ও তাঁতীদের সমন্বিত অংশগ্রহণ, উপলব্দি ও প্রতিশ্রুতি দিবসটি উদযাপনের তাৎপর্যকে সূদুরপ্রসারী ও অর্থবহ ফলাফল বয়ে আনার ক্ষ্ত্রে সৃষ্টি হয়েছে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।