নিরাপদ খাদ্য উপজেলা দেলদুয়ার; খাদ্য নিরাপদ হলে আমরা সুস্থ থাকবো


মানুষ খাবার খায় বেঁচে থাকার জন্যে, সুস্থ থাকার জন্যে। খাদ্য নিরাপদ না হলে খাদ্যবাহিত রোগ হতে পারে যেমন ডাইরিয়া, টাইফয়েড, মুটিয়ে যাওয়া বা পুষ্টিহীনতা। আবার দীর্ঘমেয়াদী রোগ হতে পারে যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনী রোগ, ক্যান্সারসহ আরও অনেক রোগ যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আমরা এমন অবস্থা চাই না। আমরা সবাই সুস্থ থাকতে চাই এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে চাই।

খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে খাদ্য বাজারে নিয়ে আসা, প্যাকেট করা, বিক্রি, ঘরে রান্না করা, খাবার বাসনে দেয়া এবং খাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কোন না কোনভাবে খাদ্য দুষিত হতে পারে, নষ্ট হতে পারে, খাবার অযোগ্য হয়ে যেতে পারে, যা খাওয়া শরীরের জন্যে ক্ষতিকর। কাজেই নিরাপদ খাদ্য বলতে এককভাবে কোন বিশেষ খাদ্য নাই। একই খাদ্য কোন একটি পর্বে এসে অ-নিরাপদ বা ক্ষতিকর হয়ে যেতে পারে। এই পুরো প্রক্রিয়াকে ‘খাদ্য সরবরাহ মালা’ বা ফুড সাপ্লাই চেইন বলা হয়। নিরাপদ খাদ্য বলতে এই চেইনের যে কোন অংশে ক্ষতির সম্ভাবনা দূর করতে হবে।

২০১৩ সালে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাশ করা হয়। এই আইনে খাদ্য বলতে বোঝানো হয়েছে ‘চর্ব্য, চুষ্য, লেহ্য (যেমন খাদ্যশস্য, ডাল, মৎস্য, মাংস, দুগ্ধ, ডিম, ভোজ্য-তৈল, ফল-মূল, শাক-সবজি, ইত্যাদি), বা পেয় (যেমন সাধারণ পানি, বায়ুবাহিত পানি, অঙ্গরায়িত পানি, এনার্জি ড্রিংক, ইত্যাদি) সহ সকল প্রকার প্রক্রিয়াজাত, আংশিক-প্রক্রিয়াজাত বা অ-প্রক্রিয়াজাত আহার্য উৎপাদন এবং খাদ্য, প্রক্রিয়াকরণ বা প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত উপকরণে বা কাঁচামাল যাহা মানবদেহের জন্যে উপকারী আহার্য হিসাবে জীবন ধারণ, পুষ্টি সাধন বা স্বাস্থ্য রক্ষা করিতে ব্যবহৃত হইয়া থাকে’। আইনে ‘নিরাপদ খাদ্য’ ও সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিরাপদ খাদ্য অর্থ প্রত্যাশিত ব্যবহার ও উপযোগিতা অনুযায়ী মানুষের জন্য বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্য সম্মত আহার্য্য। যারা খাদ্য উৎপাদন করেন তাদের আসলে নিরাপদ খাদ্যই উৎপাদন ও বাজারজাত করতে হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে তা আইনানুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। কাজেই খাদ্য উৎপাদন করাই যথেষ্ট নয়, খাদ্যকে নিরাপদ করতে হবে।


খাদ্য ফসলশিশুরা মাছ ধরছে


খাদ্যকে নিরাপদ করতে হলে প্রথমেই উৎপাদনে নিরাপদ করতে হবে। কীটনাশকের অহেতুক ব্যবহার, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য এবং নানা ধরণের ‘ওষুধ’ যেমন এন্টিবায়োটিক, হরমোন, কৃত্রিম রং ইত্যাদি ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি খাদ্যের জিনগত পরিবর্তনও নিরাপদ না হতে পারে, তাই জিএমও খাদ্যের ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। বাজারে খোলাভাবে রান্না করা খাবার পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করলে মানুষের উপকার হবে। বাইরে থেকে আসা খাবার যেমন নানা ধরণের জুস, চিপস, বিস্কুট কোথা থেকে কেমনভাবে আসছে এবং তা দোকানে কিভাবে রাখা হচ্ছে তাও দেখার বিষয়।

আসুন, আমরা নিজেরা সচেতন হয়ে খাদ্যকে নিরাপদভাবে উৎপাদন করি, বাজারে বিক্রির সময় নিরাপদ রাখি, খাদ্য পরিবেশনের সময় নিরাপদ রাখি এবং সব শেষে খাওয়ার সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করি। খাওয়ার আগে ও পরে ভাল করে হাত ধোয়ার কথা যেন ভুলে না যাই।

আমাদের সম্মিলিত চেষ্টা দেলদুয়ার উপজেলাকে সারা বাংলাদেশের জন্যে উদাহরণ হয়ে যেতে পারে।


আরও জানতে হলে যোগাযোগ করুন: উবিনীগ রিদয়পুর বিদ্যাঘর, বিষ্ণুপুর গ্রাম, পাথরাইল ইউনিয়ন, দেলদুয়ার।

ফোন: ০১৭৩০০৫৭৭১৭, ০১৭৩০০৫৭৭০৮।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।