নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে শিক্ষকদের ভূমিকা


টাঙ্গাইল জেলার রিদয়পুর বিদ্যাঘরে উবিনীগ ও দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ আয়োজিত নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে শিক্ষকদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় উবিনীগ রিদয়পুর বিদ্যাঘর, বিষ্ণুপুর, টাংগাইলে, তারিখ: ১৮ মে, ২০১৬। আয়োজনে: উবিনীগ- উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ। সহযোগিতায়: জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এর নিরাপদ খাদ্য প্রকল্প ।

সভায় দেলদুয়ার উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৫০টি মাধ্যমিকও কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা,সহকারী শিক্ষক, নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষক অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও উবিনীগের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জনি, ড. এম এ সোবহান, সভাপতি, বীজবিস্তার ফাউনডেশান । এছাড়াও উবিনীগ টাঙ্গাইল কেন্দ্রের সমন্বক রবিউল ইসলাম চুন্নু, উবিনীগের কর্মী রোকেয়া খানম টুলু, যোয়াকিম মাংসাং, ফাহিমা খাতুন লিজা, মোঃ রজব আলীসহ মোট ৬৫ জন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে নারী ২৪জন এবং পুরুষ ৪১জন।

আলোচনা সভা পরিচালনা করেন জাহাঙ্গীর আলম জনি। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব এস এম ফেরদৌস আহমেদের ঘোষনার মধ্য দিয়ে দেলদুয়ার উপজেলায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগ কাজ শুরু করেছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিক সভা করা হয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নেটওয়ার্কের পক্ষে সদস্য সংগঠন উবিনীগ, নয়াকৃষি আন্দোলন ও দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ সমন্বিতভাবে দেলদুয়ার নিরাপদ খাদ্য উপজেলা নিয়ে কাজ করছে। দেলদুয়ার নিরাপদ খাদ্য উপজেলা ঘোষনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারী-বেসরকারী স্কুল মিলে দেলদুয়ার উপজেলার সকল বিদ্যালয়ের প্রতিদিধিদের অংশগ্রহনে ৩টি সভা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত ১১ই মে ২০১৬ ইং তারিখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৮জন প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা করা হয়েছে। বিশেষ করে স্কুলের পক্ষ থেকে প্রত্যেক প্রধান শিক্ষক বা প্রতিনিধি কি কি ভূমিকা রাখতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেলদুয়ার নিরাপদ খাদ্য উপজেলা ঘোষনার বিষয়টি এখন জাতীয় ও আন্তজাতিক একটি পরিচিত উপজেলা। এখন সারা বিশ্ব দেলদুয়ারকে নিরাপদ খাদ্য জোন হিসেবে চেনে। তাই আপনাদের সহযোগিতা চাই। তাহলে আমরা দেলদুয়ার নিরাপদ খাদ্য উপজেলা হিসের সারা বিশ্বে সম্মানের জায়গায় পৌছে যাব।

স্বাগত বক্তব্যে রবিউল ইসলাম চুন্নু বলেন, আজকে আমরা যে কাজ হাতে নিয়েছি তার সাথে আপনাদের ভ’মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের শিক্ষকমন্ডলী আপনাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তারাই পরবর্তীতে সমাজে, রাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেয়। কাজেই আজকের আলোচনা সভায় আপনারা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে দেলদুয়ারকে নিরাপদ খাদ্য উপজেলা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

নয়াকৃষির কৃষকরা তাদের গান পরিবেশন করেন। গানের কথা-

‌‌''শোন ওরে ভাই আর বোন
তোমরা হও সচেতন

নিরাপদ খাদ্য খাইয়া বাঁচাও এ জীবন''

ড. এম এ সোবহান বলেন, আজকে দেলদুয়ার আর্ন্তজাতিকভাবে একটি মডেল নাম। এটা প্রথম প্রস্তাব করেন এস এম ফেরদৌস আহমেদ। এফএও এই প্রস্তাব গ্রহণ করে। এফএও সহযোগিতায় তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। আপনাদের মত গণীজনের সগযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য ৩ প্রকারে দূষিত হয়। ১. ভৌত দূষণ-চুল, ধুলাবালি ২. রাসায়নিক দূষণ-মাছি, দুধে মেলামাইন ৩.বায়োলজিক্যাল দূষণ বা জৈব দূষণ। এই ৩টি এডজাষ্ট করতে হবে। টেলিভিশনে দেখি একজন শেফ মাথায় কাপড় বেঁধে কুকিঙের কাজ করছেন। কারন খাবারে যাতে মাথার চুল এসে না পড়ে। সর্বক্ষেত্রে মাঠ থেকে অর্থ্যাৎ উৎপাদন থেরেক শুরু করে টেবিল পর্যন্ত খাবার নিরাপদ হতে হবে। আমরা ভাগ্যবান যে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এখন খাদ্য উৎপাদনের সাথে সাথে খাদ্য রপ্তদানী করছি। আগে খাদ্য নিরাপত্তা বলা হলেও এখন খাদ্য নিরাপদের কথা বলা হচ্ছে। ফসল ফলাতে কি করা যাবে কি করা যাবে না তা কৃষককে জানতে হবে। তবেই খাদ্য নিরাপদ হতে পারে।

এরপর উন্মুক্ত আলোচনায় শিক্ষকরা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এলাশীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ১০-৪টা পর্যন্ত থাকে। তাদের বিদ্যালয়ে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতন করলে তারা পরিবারে গিয়ে চর্চা করতে পারে। শিক্ষক পরিবার ও সমাজের কর্ণধার। গ্রামে গিয়ে আমি ফল কিনি। আমার হতে আপনারাও সচেতন হবেন। গ্রামের শিক্ষকদের কাছে সবাই নানা বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসে। তখান মানুষকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। ধর্মীয় উপসনালয়ে আলোচনা করলে মাসনুষ অনেক সচেতন হবে।

 


শিক্ষকশিক্ষক


আটিয়া ইউনিয়ন আদর্শ গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, খাদ্য দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। দেহের ক্ষয়পূরণ করে। দেহের গঠন বৃদ্ধি করে। আমি মনে করি আগে নিজে সচেতন হতে হবে। বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশে বিষয়টি তুলে ধরা। কিভাবে খাদ্য দূষণ হচ্ছে তা ভিডিওর মাধ্যমে দেখালে মানুষ অনেক সচেতন হবে।

 

আবু মোঃ ইউসুফ এস এ জে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রত্যেক বিদ্যালয়, মাদ্রাসায় স্কুল স্কাউটে ১দিনের কর্মশালার আয়োজন করে এই বিষয়ে সচেতন করা যেতে পারে।

ইয়ালী ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক আবির আহমেদ বলেন, যাত্রা, নাটকে অনেক লোকের ভিড় হয়। এই ধরনের আলোচনা করার আয়োজক কম। মাসুষকে সচেতন করতে বেশি বেশি আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবায় বেশি খরচ হচ্ছে। প্রতিহত করতে ব্যবস্থা করতে হবে। আইনকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। উপজেলায় সম্মিলিতভাবে সভা হতে পারে।

এরপর দলীয় আলোচনায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষকরা নিচের বিষয়গুলি তুলে ধরেন। যেমন-

১.বিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করা এবং শ্রেণীকক্ষে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কিত ফেষ্টুন ব্যবহার করা

২.ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচারের ব্যবস্থা করা

৩.নিজ পরিবারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা

৪.নিজ নিজ সমাজে নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব তুলে ধরা

৫.আলোর ফাঁদ ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করা

৬.পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়ক অধ্যায় রাখার সুপারিশ করা

৭.নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা

৮.জাঙ্কফুড গ্রহণে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করা

৯.অনিরাপদ খাদ্য তালিকা তৈরী করে শ্রেণীকক্ষে টানিয়ে রাখা

১০.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের সচেতন করা

১১.ইউনিয়ন পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করা

১২.নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তার লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে গণসচেতনতা গড়ে তোলা।

১৩.রাসায়নিক দ্রব্য খাদ্য-শস্যে ব্যবহার না করে জৈব সার ব্যবহার করা।

১৪.সবজীতে পোকা ব্যবস্থাপনার জন্য সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বিষমুক্ত সবজী উৎপাদন করা।

১৫.শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সমন্বয়ে মাঝে মধ্যে আলোচনা করা।

১৬.নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের জন্য পঁচা ও বাসি খাবার পরিহার করা

১৭.ভেজাল খাদ্য গ্রহণে ও উৎপাদনে সরকারী আইন ২০১৩ ও শাস্তির ধরন সম্পর্কে অবহিতকরণ

১৮.প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের সচেতন করা

দলীয় আলোচনা শেষে সভাপ্রধান মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, এফএও এর উদ্যোগে আজকের এই আলোচনা সভা হচ্ছে। আজকে অনেক গবেষণা এবং জ্ঞানমুলক আলোচনা হয়েছে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি। বাইরের খোলা খাবার খাওয়া থেকে আমাদের সকলকে বিরত থাকতে হবে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সচেতন করতে ছাত্র-শিক্ষকসহ কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।