স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে পিছিয়ে জেলা-উপজেলাঃ ভুগছে সাধারণ মানুষ


মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য আন্দোলনের বক্তব্য, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬

দেশের জন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্যে সরকারের নির্দিষ্ট পদক্ষেপ রয়েছে। গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। এর জন্যে অবকাঠামো তৈরি, জনবল, অর্থ বরাদ্দ, যন্ত্রপাতি, ওষুধ সরবরাহ কোনটা ছাড়া স্বাস্থ্য সেবা সঠিকভাবে দেয়া যায় না। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সম্পুর্ণ ভাবে জনবল, ওষুধ, যন্ত্রপাতি, অর্থ – একটা ছাড়া অন্যটা করা যায়না। তাই আজকাল পত্র-পত্রিকায় এসব বিষয় খবর আকারে স্থান পেয়েছে। যেটা ঠিক আছে তা হচ্ছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবকাঠামো। অর্থাৎ বিল্ডিং। অবকাঠামোর কাজ হয় প্রকৌশল বিভাগ থেকে, চিকিৎসা বা চিকিৎসকের সাথে এর সম্পর্ক নেই। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান মারাত্মকভাবে এই সব ঘাটতিতে ভুগছে। এর অর্থ হচ্ছে, সেবা যাদের পাওয়ার কথা তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবং এই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতালে। তারা সেবা প্রদানে পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশ দেশ হিসেবে ছোট, কিন্তু এর মধ্যে এলাকার বৈচিত্র অনেক রয়েছে। উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতেও সেই বৈচিত্র এবং বৈষম্য দেখা যায়। যেমন বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে দারিদ্রের হার অনুযায়ি কুড়িগ্রাম জেলা সবেচেয়ে দরিদ্র এলাকা (৬৩.৭%), বরিশাল (৫৪.৮%), ময়মনসিংহ (৫০.৫%), রাজবাড়ী (৪১.৯%) ইত্যাদী। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে যে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় দারিদ্রের হার মাঝারি হলেও এখানে উন্নয়নের কাজে বৈষম্য রয়েছে মারাত্মকভাবে। এখানকার মানুষ উন্নয়ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভিন্ন পদ্ধতি্তে দারিদ্রের হার নির্ধারণ করে দেখা গেছে এখানে ৭০% এর বেশী দরিদ্র জন গোষ্টি রয়েছে। সকল বঞ্চিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা যদি সরকার নিশ্চিত করতে পারে তাহলে এই দরিদ্র মানুষগুলোর জীবন অনেক খানি সহনশীল হতে পারে।

গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ১৮ ধারায় উল্লেখ আছে যে সকল মানুষকে মৌলিক চিকিৎসা সেবা পৌঁছাবার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সেবা মূলত রোগ প্রতিকারের জন্যে, যদিও এখন রোগ প্রতিরোধের কথাও আলোচনায় আসছে। আমরা জানি জনগণ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার জন্যে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই প্রথমে ছোটে, কিন্তু সেবা না পেয়ে তাকে ফেরত আসতে হয়। বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়, বাঁচতে হলে প্রাইভেট চিকিৎসার জন্যে গাইটের টাকা খরচ করতে হয়। অথচ বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবার অবকাঠামো যথেষ্ট ভাল রয়েছে। কিন্তু বিল্ডিংয়ে পৌঁছালেই তো আর সেবা পাওয়া যাবে না, বা রোগ ভাল হয়ে যাবে না। চিকিৎসক, যন্ত্রপাতি, ওষুধ ইত্যাদি থাকতে হবে। হাসপাতালে কেউ আনন্দ করে আসে না, বা বিল্ডিং দেখার জন্যে আসে না। এখানে মানূষ রোগ নিয়ে আসে, সে সুস্থ হয়ে বাড়ী যেতে চায়।

পত্র-পত্রিকার তথ্য পর্যালোচনা

পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন একত্র করে স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষ থেকে যে তথ্য এসেছে তাতে যে বিষয়টা উদ্বেগজনক তা হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশেষ ভৌগলিক অঞ্চল বা জেলা বঞ্চিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে। যা সব এলাকার জন্যেই একই রকমভাবে দেয়া হয়। কিন্তু এলাকা ভেদে প্রয়োজনের ভিন্নতা আছে, পরিস্থিতিরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা একান্ত জরুরী। তেমনি উত্তরবঙ্গে আর্সেনিক দুষণের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জরুরি। আমাদের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় এই বিশেষ দিকগুলো লক্ষে রেখে বরাদ্দ বা জনবল ও উপকরণ সরবরাহ করা হয় না।


বাংলাদেশ ম্যাপ

পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে জনবল, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির প্রেক্ষিতে চারটি বিভাগ বেশী সংকটে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল। ম্যাপ দেখুন। তবে কম-বেশি হলেও সব বিভাগেই সমস্যা আছে।


সরকারী হাসপাতালগুলো সেবা প্রদানে কিভাবে পিছিয়ে আছে?

দেখা যাচ্ছে, বিভাগ অনুযায়ি চিকিৎসক সংকটের কথা সবখানে থাকলেও কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেয়া হোল।

বরিশাল বিভাগ: সরকারী হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক সংকট। চিকিৎসকের পদ শূন্য। অবেদনবিদ পদ শূন্য, টেকনিশিয়ান সংকট। উদাহরণ: পিরোজপুরের প্রায় ১৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় একটি হাসপাতাল। জেলার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং সদর হাসপাতাল ও ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ডাক্তারদের জন্য মোট ১৭০ টি মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে যার মধ্যে পূরণকৃত পদ ৭৮ টি,শূন্য ৯২ টি পদ খালি।

খুলনা বিভাগ: যন্ত্রপাতি অকেজো,জনবল সংকট,চিকিৎসক সংকট,ওষুধ সংকট। উদাহরণ:চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় ডাক্তার সঙ্কটের কারণে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তারদের ডেপুটেশনে এনে হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে ।

চট্টগ্রাম বিভাগ: চিকিৎসক সংকট,অবেদনবিদ পদ সংকট,পর্যাপ্ত গাইনি চিকিৎসক নেই,সিট খালি কিন্তু মেঝেতে রোগী। উদাহরণ:খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দেন মাত্র একজন।

রাজশাহী বিভাগ: চিকিৎসক সংকট,জেনারেটর বিকল,চিকিৎসকের পদ শূন্য,অস্ত্রোপচার বন্ধ। উদাহরণ:চিকিৎসকের ১১৩ ও নার্সিং কর্মকর্তার ২০১টি শূন্য পদ নিয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিভাগ: চিকিৎসক অনুপস্থিত,অক্সিজেনের অভাব,সিটিস্ক্যান ও এম.আর.আই মেশিন নষ্ট,নার্স সংকট,এ্যাম্বুলেন্স নষ্ট,ওষুধ সংকট,রোগী দেখেন ফার্মাসিষ্ট,শয্যা সংকট।

ময়মনসিংহ বিভাগ: জরুরী প্রসুতি সেবা নেই,চিকিৎসক সংকট,সিজার বন্ধ| নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও জনবলের অভাবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অস্ত্রোপচারের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

সিলেট বিভাগ: চিকিৎসক সংকট,নার্স সংকট,অবেদনবিদ নেই,গাড়ি আছে চালক নেই।

রংপুর বিভাগ: জনবল সংকট,চিকিৎসক সংকট,এ্যাম্বুলেন্স বিকল। উদাহরণ:অভিজ্ঞ ডাক্তারের অভাব ও অ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে থাকায় রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জনবলের মধ্যে শুধু চিকিৎসক সংকট নয়, নার্স, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অবেদনবিদ না থাকাও বড় সমস্যা। তাছাড়া এম্বুলেন্স পড়ে আছে, কিন্তু চালক নেই, অথবা আছে তো তা নষ্ট হয়ে আছে। সিটি স্ক্যান, এমআর আই ইত্যাদি যন্ত্রপাতিরও অভাব দেখা যায়।

হাসপাতাল থাকলে তা পরিস্কারের কাজও বড় দায়িত্ব। পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় “মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালের পরিবেশ নেই। ভেতরে-বাইরে নোংরা,আবর্জনা। যেখানে সেখানে অব্যবহৃত,নষ্ট হওয়া জিনিসপত্রের স্তূপ। কোনো কোনো জায়গা মাসের পর মাস পরিষ্কার করা হয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা বলেছেন,পরিষ্কার করার লোক নেই। একাধিক ভবন নিয়ে এই হাসপাতাল ক্যাম্পাস। পরিষ্কার করার দায়িত্ব সুইপারদের। এখানে পাঁচজন সুইপারের পদও আছে। কিন্তু কাজ করছেন দুজন। তিনটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।


স্বাস্থ্য আন্দোলনের মিটিং ২৯ অক্টোবর ২০১৬স্বাস্থ্য আন্দোলনের মিটিং ২৯ অক্টোবর ২০১৬

“স্বাস্থ্য সূচকে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল: পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণ” মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী। ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ বিকেল ৩টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভি.আই.পি লাউঞ্জে স্বাস্থ্য আন্দোলন এবং উবিনীগ আয়োজিত এই মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।


স্বাস্থ্য জনবলের মধ্যে একটি বড় সংকট হচ্ছে অবেদনবিদ বা অস্ত্রোপচারের আগে এনেসথেশিয়া দেয়ার চিকিৎসকের সংকট। সাংবাদপত্রে চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলা হাসপাতালের তথ্য দেয়া হয়েছে। অবেদনবিদ সংকটের কারণে চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ে জরুরি অস্ত্রোপচার ব্যাহত হচ্ছে। জেলার ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে মাত্র তিনটিতে তিনজন অবেদনবিদ আছেন।

ফটিকছড়ি, পটিয়া, হাটহাজারী, মিরসরাই, লোহাগাড়া ও বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি প্রসূতিসেবাভুক্ত (ইওসি)। এর মধ্যে কেবল ফটিকছড়ি, পটিয়া ও বোয়ালখালীতে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেটিস্ট) পদে তিনজন কর্মরত আছেন। এই তিন অবেদনবিদ সপ্তাহে ঘুরে ঘুরে ছয়টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করেন। জেলা সিভিল সার্জন জানিয়েছেন ‘এই তিনজন দিয়ে আমরা ছয়টি উপজেলায় পালা করে সেবা দিচ্ছি। এই ছয় উপজেলায় প্রসূতিদের জরুরি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা আছে। মিরসরাইয়ে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেডিকেল কর্মকর্তা অবেদনবিদ হিসেবে কাজ করেন।

এভাবে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ। এরা যাবে কোথায়?

মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা

সরকারি হাসপাতালে মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার বিষয়টি এমডিজি আলোকে মাতৃ মৃত্যু কমাবার লক্ষ্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এবং ঘোষনা দেয়া হয়েছে যে সকল প্রসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীদের হাতে হতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা নিতে হবে, অর্থাৎ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে। গ্রামের দাইমায়েরা এই সেবা দিতে পারবেন না। কিন্তু জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবার এই পর্যালোচনায় বেশিরভাগ দেখা গেছে উপজেলা পর্যায়ে গাইনী ডাক্তার ও অবেদনবিদের অভাব রয়েছে। হাসপাতালে প্রসবের সাধারণ অর্থ হচ্ছে প্রসূতি মায়ের কোন জটিলতা থাকলে তার জন্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেয়া। তার অর্থ এই নয় যে সকল প্রসবই সিজারিয়ান হতে হবে। তবে যখন প্রয়োজন হয় তখন অবশ্যই তা করতে হবে। নইলে মা বা শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে। বরগুনার একটি হাসপাতালের খবর জানা গেছে অবেদনবিদ ও গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় আট বছরে ধরে এখানে প্রসূতি অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় ইমার্জেন্সি অবসট্রাকটিভ কেয়ার বা জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় সমস্যার শেষ নেই। নেই পর্যাপ্ত গাইনি চিকিৎসক অবেদনবিদ ও পর্যাপ্ত নার্স। তাই প্রসবপূর্ব সেবা নিতে গর্ভবতী মায়েরা হাসপাতালে এলেও বাচ্চা জন্মদানের সময় তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। যার ফলে প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর জটিলতা বাড়ছে। একজন এনেসথেসিয়া ডাক্তারের অভাবে দেড় বছর ধরে নেত্রকোনা জেলার একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তেতুলিয়ায় হাসপাতালে অত্যাধুনিক আলট্রাসোনো গ্রাম মেশিন থাকলেও ট্রেনিং প্রাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক না থাকায় তা ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফলে অনেক অন্তঃসত্ত্বাকে চিকিৎসার জন্য ৪০ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হয়। হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি অকেজো। অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি থাকলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কটে সেটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সঙ্কটে প্রায় ছয় মাস বন্ধ হয়ে আছে গর্ভবতী মায়েদের জরুরি অস্ত্রোপচার।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি চিকিৎসক ও অবেদনবিদ (অ্যানেসথেটিস্ট) না থাকায় জটিল প্রসূতিসেবাসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও জনবলের অভাবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অস্ত্রোপচারের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রসবকালীন জটিলতার কারণে এ উপজেলার মানুষকে ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে ছুটতে হয়।

উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে যারা স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসছেন শেষ পর্যন্ত তারা বঞ্চিত হচ্ছেন ডাক্তার দের অবহেলার জন্যে নয় বরং পুরো ব্যবস্থার মধ্যেই ‘নেই নেই’ ভাব রয়ে গেছে। কাজেই শুধু চিকিৎসক থাকলেই সব সমাধান হবে এমন আশা করা যায় না। পত্রিকায় তাই হাসপাতালে প্রসুতি মা ও নবজাতক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা দেখে অবাক হবার কিছু নেই।

করণীয় কি?

কোন অবস্থাতেই স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্যমুলক ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। তাই সরকারের কাছে স্বাস্থ্য আন্দোলনের প্রস্তাব হচ্ছেঃ

১। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রয়োজনের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য জনবল, ওষুধ, যন্ত্রপাতি দেয়ার ব্যবস্থা করা।

২। চিকিৎসকদের শাস্তিমুলক পোস্টিংয়ের জ্জন্যে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নির্ধারণ করা যাবে না। তাহলে দুর্নীতিবাজ, কাজে অবহেলাকারী কিংবা স্বাস্থ্য দেয়ার ক্ষেত্রে অনুপযোগি মানুষকে এমন জায়গায় দেয়া হচ্ছে যেখানে মানুষের ভাল চিকিৎসকের প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো দুর্গম অঞ্চলে তাদের প্রয়োজন অনুসারে ভাল চিকিৎসক ওষুধ, যন্ত্রপাতি দিতে হবে।

৩। স্বাস্থ্য জনবল নির্দিষ্ট জেলায় দিতে হলে সেখানকার প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতে হবে। চিকিৎসকের সাথে সহযোগী ও সহকারি জনবল থাকার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এর জন্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৪। মাতৃ স্বাস্থ্য সেবার জন্যে সরকার নিয়ম করেছে সন্তান প্রসব হাসপাতালে হতে হবে। সেই পরিবেশের নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। মাতৃ মৃত্যু কমাতে হলে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

৫। মাতৃ স্বাস্থ্য উন্নত করতে হলে গ্রাম পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদেরকে সহযোগিতা দিতে হবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।