বিটিবেগুন (বিকৃত বেগুন) পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ঝুঁকি  


জেনেটিকালী মডিফাইড অর্গানিজম কি? কেন বিরোধিতা?

প্রাণের গঠন কাঠামোর গোড়ায় রয়েছে এক ধরণের গঠন-সংকেত (gene), যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘জিন’। তার ওপর কারিগরি চালিয়ে সেই গঠনে বিকৃতি ঘটানোর কারিগরি আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞানিরা। এর নাম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)। অর্থাৎ প্রাণ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারি করা। এই ইঞ্জিনিয়ারিতে প্রাণের মূল বৈশিষ্ট্যে বিকৃতি ঘটিয়ে যা তৈয়ার হয় তাকে বলা হয় জেনেটিকালি মডিফাইড অর্গানিজম বা জিএমও; প্রাণের গঠন সংকেতে কারিগরি খাটিয়ে তাকে বিকৃত এক আজব জিনিসে রূপান্তর করা। এটা প্রকৃতির স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। অস্বাভাবিক ঘটনা। এই কারিগরি যে কোন প্রাণের ওপর করা হতে পারে। যেমন কোন জীব, অণুজীব, উদ্ভিদ, এমনকি মানুষ - অর্থাৎ তাদের গঠন-সংকেতে। মূল যে-বিজ্ঞান থেকে এই কারিগরির দিকটি রপ্ত করা হয়েছে তার নাম মলিকিউলার বায়োলজি (Molecular Biology)। অর্থাৎ প্রাণের অণু নিয়ে বিজ্ঞান, বা প্রাণানুবিজ্ঞান। বস্তুপদার্থকে যেমন অণুপরমাণু দিয়ে ভাগ করে জানা ও বোঝা সম্ভব, তেমনি প্রাণকেও তার অণু পরমাণু দিয়ে জানা ও বোঝা যায়। যে বিজ্ঞান সেটা করে তার নাম প্রাণাণু বিজ্ঞান।

টমেটোর মধ্যে মাছের কোন গঠন-সংকেত নাই। যদি থাকত তাহলে টমেটো মাছ হয়ে যেতো। ঠাণ্ডা দেশের গভীর সমুদ্র থেকে মাছের গঠনসংকেতের পুরাটা না, যে-সংকেত দিয়ে মাছের চামড়া তৈয়ার হয় শুধু সেই টুকরাটা আলাদা করে নিয়ে টমেটোর গঠন-সংকেতে ঢুকিয়ে দিলেন নব্য কারিগররা। তাহলে টমেটোর চামড়াও মাছের চামড়ার মতো হোল। এতে টমেটো বহুদিন ফ্রিজে রাখা যায়। চামড়া কুঁকড়ে যায় না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠাতে বা রপ্তানি করতে সুবিধা। সুপার মার্কেটের শেলফেও বহুদিন তাজা দেখা যায়। এতে টমেটো কোম্পানির বেচাবিক্রির সুবিধা হোল। ভোক্তার নয়। এর সঙ্গে স্বাদ কিম্বা পুষ্টিগুণের কোন সম্পর্ক নাই। এই রকমই একটি টমেটো তৈরী হয়েছিল বহুদিন আগে। নাম ফ্লেভার সেভর (Flavr Savr)। 

জেনেটিকালি মডিফাইড অর্গানিজম মানে প্রকৃতির নিয়মের মধ্যে যা নাই, সেখানে খোদকারি করে তার গঠনে বিকৃতি ঘটাবার কারিগরি। গড়বড় হয়ে গেলে পুরা মনুষ্য জাতিসহ পুরা প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ধ্বংসের এই বিপদ আছে বলে বিজ্ঞানিদের অনেকে এই ধরণের ইঞ্জিনিয়ারগিরিকে পারমাণবিক বোমা বানাবার সঙ্গে তুলনা করেন। এই কারিগরি বরং আরও বিপজ্জনক।একবার যদি কোথাও গড়বড় হয় তাহলে দুনিয়ার সকল প্রাণের ধ্বংস অনিবার্য। কারণ একে থামাবার কোন কারিগরি জানা নাই। একবার বিপদ হলে বা দুর্ঘটনা হলে তার পরিণতি ঠেকাবার কোন উপায় নাই।

আলবার্ট আইনস্টাইন খুব বড় পদার্থ বিজ্ঞানী। পদার্থকে জানা এবং বোঝার বিজ্ঞান ব্যবহার করে যুদ্ধবাজ কিছু বিজ্ঞানী তাদের পারমাণবিক বোমা বানাবার কারিগরি আবিষ্কার করেছিল। এটাও বিজ্ঞান। বলা যায় সেটা নষ্ট বিজ্ঞান কিম্বা বিজ্ঞানের নষ্টামি। বিজ্ঞানীরা তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের এ ধরণের অপব্যবহারের ঘোর বিরোধী। আলবার্ট আইনস্টাইনও ব্যতিক্রম ছিলেন না। জিএমওর বিরুদ্ধে দুনিয়াব্যাপী বিরোধিতা ও প্রতিরোধের মূলে রয়েছে বিজ্ঞান সম্পর্কে এই গোড়ার ধারণা। বিজ্ঞানের পরিণতি যদি হয় নীতিনৈতিকতা বাদ দিয়ে তার যথেচ্ছা ব্যবহার তাহলে তাকে বিজ্ঞান বলা যায় না। প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রাণের ব্যবস্থাপনা ও সর্বোপরী সকল প্রাণের কল্যাণই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর সাধনা। সেই গোড়ার কথা না ভেবে জিএমও প্রবর্তন করতে হবে, না হলে সেটা হবে বিজ্ঞান বিরোধী - এই ধরণের বাজে যুক্তি আজকাল আর কেউ দেয় না। অর্থাৎ বিজ্ঞানকে অবশ্যই তার চরিত্র ও নিজের কর্মকান্ডের ফলাফল নিরন্তর পর্যালোচনা করতে হবে।

ক্ষতি ও ধ্বংস প্রতিরোধ ছাড়াও দুনিয়াব্যাপী জিএমও বিরোধিতার প্রধান বৈজ্ঞানিক কারন হচ্ছে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য ও বিজ্ঞানীর মর্যাদা রক্ষা। নষ্ট বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের নষ্টামি উভয়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। তার ওপর নির্ভর করছে সামগ্রিক ভাবে প্রকৃতি ও সকল প্রাণের সুরক্ষা ও বিকাশের নিশ্চয়তা। এই জায়গা থেকেই দীর্ঘদিন ধরে জিএমও বিরোধী আন্দোলনে নয়াকৃষি আন্দোলন, উবিনীগ ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা সারা দুনিয়ার জিএমও বিরোধী লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জিএমও বিরোধী গণমোর্চা, বাংলাদেশ। বিটিবেগুন সম্পর্কে এই ছোট বইটি এই দিক থেকে পাঠ করলে আমরা খুশি হব।

বাংলাদেশে জেনেটিকালি মডিফাইড খাদ্য

বাংলাদেশে জেনেটিকালি মডিফাইড খাদ্য আমদানী ও উৎপাদন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় নতুন ব্যাপার। ভোক্তা এবং কৃষক হিশেবে আমাদের দেশের মানুষ, ষাটের দশক থেকে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে সার, কীটনাশক ও মাটির তলা থেকে পানি তুলে পরিবেশ ও প্রাণব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষতিকর তথাকথিত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ দেখে আসছে। নব্বইয়ের দশক থেকে হাইব্রিড বীজের ফসলের সাথেও তারা পরিচিত। যদিও দাবী করা হয় যে দেশে খাদ্য উৎপাদন কয়েকগুন বেড়েছে এবং খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্ণতা এসেছে, কিন্তু আসলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধানের উৎপাদন বাড়লেও সামগ্রিক ভাবে তেল ও ডাল জাতীয় খাদ্য, পশু খাদ্য, জ্বালানি, মাছ, গবাদি পশু ইত্যাদির উৎপাদন কমেছে। প্রাণবৈচিত্র নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা চর্চার যে ক্ষয় ঘটেছে তাতে পানি, মাটি ও পরিবেশ বিষাক্ত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বিষাক্ত সার ও কীটনাশকে ভরে গেছে। এমন অবস্থায় পুরানা ভুল শুধরে দেশের কৃষিকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর পরিবর্তে কোম্পানির স্বার্থ রক্ষাকারী আরো অভিনব টেকনলজি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কৃষি ব্যবস্থা কৃষকের হাতছাড়া হয়ে চলে যাচ্ছে খাদ্য ব্যবসায়ীদের, বিশেষত বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। কোম্পানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ানোর জন্যই জেনেটিকালি মডিফাইড ফসলের গবেষণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবার জন্য নয়। টেকনলজির পেটেন্টই শুধু কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে না বরং কৃষি উপকরণ, বীজ ও খাদ্যের বাজারের ওপর অল্প কিছু কোম্পানির আধিপত্য আজ কৃষি প্রধান দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। দেশের কৃষকের জন্য এবং ভোক্তা হিশেবে মানুষের জন্য আদৌ এইসব টেকনলজি নিরাপদ কিনা তার বাছবিচার না করেই কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে মূলত বহুজাতিক বায়োটেক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থে। জিএমও ফসল ও খাদ্যের নানা ক্ষতিকর দিক ইতিমধ্যে ধনী দেশের মানুষ বুঝতে শুরু করেছে তাই ইওরোপ ও আমেরিকায় জিএম খাদ্যে লেবেল লাগিয়ে দেয়ার দাবী জানানো হচ্ছে। কয়েকটি খাদ্য যেমন ভুট্টা, আলু, সয়াবিন, কানোলা মানুষের খাদ্যের মধ্যে ব্যাপকভাবে ঢুকে পড়েছে এবং নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে আমদানি করা সয়াবিন তেল এবং প্রক্রিয়াজাত করা খাদ্যে জিএম উপাদান থাকলেও এখনো চাষের পর্যায়ে যায় নি। আমাদের দেশের কৃষি অত্যন্ত সমৃদ্ধ¡ এবং বৈচিত্রপুর্ণ। ছোট এই দেশে বিভিন্ন ভৌগলিক এলাকায় ভিন্ন ধরনের ফসল হয় এবং একই ফসলের বিভিন্ন জাত পাওয়া যায়। আধুনিক কৃষির প্রবর্তনের ফলে এ দেশের কৃষি বৈচিত্রের অনেক ক্ষতি হয়েছে, তবুও ক্ষুদ্র কৃষকরা তাদের মতো করে কৃষির বৈচিত্র ধরে রেখেছেন। হাইব্রিড বীজ বাজারে আসার পর বেসরকারী ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে কীটনাশক কম্পানী ও বিক্রেতা বীজ ব্যবসায় নিযুক্ত হয়েছেন এবং কৃষকদের তাদের প্যাকেটের বীজ ও কীটনাশকের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছেন। কৃষকরা এই বীজ ব্যবহার করে কাংখিত ফসলের উৎপাদন না পেলেও নিজেদের হাতে বীজ না থাকায় অসহায় হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে কীটনাশকের অতি ব্যবহারের ফলে ভোক্তা হিসেবে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে দেশের ১৬ কোটি মানুষ। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং কৃষি বিজ্ঞানীরাও এখন কীটনাশকের ক্ষতির দিক নিয়ে সোচ্চার কথা বলছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে কীটনাশকের ক্ষতির কথা বলে তাঁরা আরও ক্ষতিকর এবং কৃষকের জন্য সর্বনাশা প্রযুক্তি জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং করে ফসলের চরিত্র বদলের মাধ্যমে একদিকে কৃষিকে বহুজাতিক কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল করা হচ্ছে অন্যদিকে এই প্রযুক্তির নানা ধরণের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র নষ্ট হবার ঝুঁকি ভয়াবহভাবে বাড়ছে। আমাদের দেশের মানুষকে ফেলে দেয়া হচ্ছে ভয়াবহ বিপদে। আমরা জানি বিগত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশে বায়োটেক কোম্পানির সরাসরি সম্পৃক্ততায় এবং অর্থায়নে বায়োটেক গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। এদেশে কৃষি বিজ্ঞানের অগ্রগতি হোক সেটা সবারই কাম্য কিন্তু যে বিজ্ঞান কোম্পানির ব্যাবসায়িক স্বার্থে পরিচালিত সেখানে মানুষের কল্যাণ হতে পারে না। বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রয়োজনে ও স্বার্থে করতে হবে।


bt brinjal


বিটিবেগুন

বিটিবেগুন একটি জিএমও বা জেনেটিকালী মডিফাইড অর্গানিজম। অর্থাৎ প্রাণের গঠন-সংকেতে (Gene) বিকৃতি ঘটাতে সক্ষম এমন জেনেটিক ইঞ্জনিয়ারিং প্রযুক্তি (Genetic Engineering) ব্যবহার করে বেগুন গাছকে একটি বিষাক্ত উদ্ভিদে পরিণত করা হয়েছে। বেগুন আমাদের অতি পরিচিত সাধারণ মানুষের সব্জি। ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস (bacillus thuringenesis সংক্ষেপে বিটি) ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্রিসটাল জিন বেগুনে সংযোজন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হিশেবে বলা হয়েছে বেগুনের ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

এই বেগুনের গবেষণার কাজ আমাদের দেশের প্রয়োজনে শুরু হয় নি। ভারতের মহারাষ্ট্র হাইব্রিড বীজ কো¤পানি বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনসান্টোর সহায়তায় বেগুনের জিন পরিবর্তনের এ কাজটি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি-র আর্থিক সহায়তায় বহুজাতিক বীজ কো¤পানি মনসান্টো এর ভারতীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান মহারাষ্ট্র হাইব্রিড সিড কোম্পানির (মাহিকো) সহায়তায়। ২০০৫ সালে ভারত, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই দেশের প্রতিষ্ঠান। তাদের বাংলাদেশের বীজ সম্পদ রক্ষা করার কথা। মূল কাজ দেশের প্রয়োজনে গবেষণায় নিয়োজিত থাকা। বিদেশের বা বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থ দেখা নয়। বিটিবেগুনের গবেষণা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য মোটেও প্রয়োজন ছিল না।

বিটি বেগুন নিয়ে গবেষকদের লেখা থেকে জানা গেছে ইতোমধ্যে বারির কেন্দ্রীয় গবেষণা খামার গাজীপুর ছাড়াও ৬টি আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র এই বিপজ্জনক গবেষণায় জড়িত (Meherunnahar and D.N.R. Paul, 2009 Introducing Genetically Modified Brinjal (Eggplant/aubergine) in Bangladesh, Bangladesh Development Research Working Paper Series, BDRWPS, No. 9, BDRC, p.13)।

বিটিবেগুন প্রকল্পের অংশীদার বেশীর ভাগ বিদেশী সংস্থা যেমন ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস ফর দি একুইজিশান অব এগ্রবায়োটেক এপ্লিকেশান (ISAAA), ইউনিভার্সিটি অব ফিলিপাইন্স, লসবেনোস (UPLB), সাউথ ইস্ট এশিয়ান রিজিওনাল সেন্টার ফর গ্রাজুয়েট স্টাডি এন্ড রিসার্চ ইন এগ্রকালচার (SEARCA) এবং কয়েকটি বীজ কোম্পানী, যেমন ভারতের MAHYCO, যার সাথে বহুজাতিক কোম্পানী মনসান্তোর ২৭% অংশীদারিত্ব রয়েছে। কাজেই এই গবেষণা বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের, এই দাবি ঠিক নয় [ওয়েবসাইট দেখুন www.absp2.net]। বাংলাদেশে গাজীপুরে অবস্থিত কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BARI) এই গবেষণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের বিশেষ কর্মসুচী অইঝচ ওও এর অধীনে। বিটিবেগুনের বীজ বারির গবেষকরা নিজেদের গবেষণাগারে তৈরী করেন নি। ভারতের মাহিকো কোম্পানি থেকে এনেছেন। তাদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষকদের দিয়ে এর পরীক্ষা করা। অর্থাৎ বাংলাদেশের কৃষিকে ক্ষতিকর পদার্থের গবেষণার ক্ষেত্রে রূপান্তর করা এবং কৃষক ও গ্রামীণ মানুষকে গিনিপিগ হিসাবে ব্যবহার করে। এগুলো কোন বিজ্ঞানির কাজ নয়।

ভারত ও ফিলিপাইনে বিটিবেগুন অনুমোদন পায় নি

বিটি বেগুন গবেষণা একই সাথে ভারত ও ফিলিপাইনে করা হয়েছিল। কিন্তু এ দুটি দেশে এখনো কোন ছাড়পত্র পায় নি, বরং ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয় বহুজাতিক কোম্পানি মনসান্টোর স্থানীয় সহায়ক মাহিকো উদ্ভাবিত বিটি বেগুন ছাড়ের উপর নিষেধাজ্ঞা বা মরাটোরিয়াম জারি করেছে (দি হিন্দু, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১০)। এমনকি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্যানেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য জিএম ফসলের সব রকম মাঠ পরীক্ষা বন্ধের সুপারিশ করেছে। অন্যদিকে ফিলিপাইনের কোর্টে গ্রীণপিস দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ার একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিটি বেগুনের মাঠ পর্যায়ের গবেষণা বন্ধের জন্যে আদেশ দেয়া হয়েছে (Philippines Court of Appeals issues writ against trials for Bt Brinjal, May 25, 2013 FnB news.com) এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপীল করা হলে সেখানেও নিষধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়। ভারতে ছাড়পত্র পেতে ব্যর্থ হয়ে তারা ফিলিপাইনে চেষ্টা চালিয়েছিল। এখন তাদের শেষ চেষ্টা হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সম্পুর্ণ নিশ্চিত না হয়েই তারা কৃষক পর্যায়ে উন্মুক্ত চাষের অনুমতির জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিল।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে ভারতে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে চাষের ছাড় দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এই বেগুন নিয়ে প্রচুর বিরোধিতা ও হৈ চৈ হয়েছে এবং এর ফলে ৯ ফেব্র“য়ারি ২০১০ সালে ভারতের পরিবেশ মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ছাড়পত্র তুলে নেন। ভারতে বিটি বেগুন গবেষণার ওপর মোরাটরিয়াম জারি আছে। কিন্তু ভারতের উদ্যোক্তা কোম্পানি মাহিকো ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বসে থাকতে রাজী নন। তাই তাঁরা যেমন করেই হোক যে কোন একটি দেশে বাণিজ্যক চাষের অনুমোদন নিয়ে নিতে চেয়েছেন, তার মধ্যে যুক্তি থাকুক বা না থাকুক। বাংলাদেশের বিটি বেগুন চাষের অনুমোদনের মধ্যে সেটাই ফুটে উঠেছে। পরিবেশ সংগঠন, কৃষক সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিজ্ঞানীদের সকল উদ্বেগ, উৎকন্ঠার কোন রকম তোয়াক্কা না করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে শর্তযুক্ত সীমিত পর্যায়ে চাষের অনুমতি দিয়েছে।

বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন ও কিছু প্রশ্ন

বিটি বেগুনের ছাড়পত্রের জন্য ২০১৩ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে (১৪ জুলাই) কৃষক পর্যায়ে চাষ করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) আবেদন করেছিল। যে কোন জেনেটিকালী মডিফাইড ফসল ছাড় দিতে হলে National Committee on Crop Biotechnology NTCCB এর মতামত নিতে হয়, তাঁরা এই সভাটি করেছেন ৭ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে। NTCCB বিটি বেগুনের ল্যাবরেটরি টেস্ট প্রতিবেদন পরিবেশ অধিদপ্তরকে পাঠায়। তবে এ কমিটিও ছাড়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা মন্তব্য দেয়নি বলে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা গেছে।

এর প্রেক্ষিতে ২০ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত বায়োসেফটি কোর কমিটি এর কাছে compiled toxicolgical test results from the accredited laboratories on mammals, fish rabbits and result of nutritional composition analysis of Bt Brinjal প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে ২৩ অক্টোবর মতামত/প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল কমিটি অন বায়ো সেফটি (The National Committee on Biosafety, NCB) চারটি বিটি বেগুনের ছাড় দিয়েছে। এই চারটি স্থানীয় জাতের বেগুন উত্তরা, কাজলা, নয়নতারা এবং একটি ঈশ্বরদী স্থানীয় জাত কে বিটি বেগুন ১, ২, ৩ এবং ৪ নামে ছাড়া হয়েছে।

সবশেষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিশাখা-২ প্রজ্ঞাপন নং ২২.০০.০০০০.০৭৩.০৫.০০৩.২০১২-২৭১ বিটি বেগুনের “শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন” প্রদান করেছে ৩০ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে। [http://bari.gov.bd/home/latest_news]

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেয়া প্রজ্ঞাপনে দেয়া শর্তগুলো হচ্ছেঃ

১ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতাবনা এবং সুপারিশ মোতাবেক বারি বিটি বেগুন-১,২,৩ এবং ৪ জাতস মুহ একটি সুনির্দিষত কর্মপ্রিকলপনার আওতায় মাঠ পর্যায়ে সীমিত আকারে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা যাবে;

২ মাঠ পর্যায়ে অবমুক্তির পূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং প্রতিষ্ঠানকে Field production nlanning Field biosafety management planning Emergency Response Planning, Safety measures যেমন: lsolation distance management planning, border row management planning Techniques for Protection of local and indigenous variety and wild plantsপ্রণয়নপূর্বক তা এনসিবি বিসিসিকে অবহিত করতে হবে;

৩ যে সকল স্থানে সীমিত চাষাবাদ করা হবে তার বায়োসেফটি মেজার্স (biosafety measures) মণিটরিং এ সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তা, বিএআরআই গবেষণাকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা সম্বন্বয়ে ফিল্ড বায়োসেফটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা বিএআরআই কর্তৃক এনসিবি বরাবরে প্রেরণ করতে হবে;

৪ সীমিত চাষাবাদের জন্য নির্ধারিত এলাকার কৃষকগণকে বিটি বেগুনের পরিবেশসম্মত চাষাবাদ এবং বায়োসেফটি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। বায়োসেফটি এবং বিটি বেগুনের চাষাবাদ বিষয়ক নিয়মকানুন সম্বলিত একটি নির্দেশিকা সংশ্লিষ্ট কৃষকগণকে সরবরাহ করতে হবে;

৫ বিটি বেগুন চাষাবাদের কারণে পরিবেশ এবং জনস্থাস্থ্যের উপর কোন ঝুঁকি তৈরী হলে আবেনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ জরুরী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে করে এ ধরনের হুমকির বিস্তার প্রতিরোধ করাসহ এর বিরূপ প্রভাব উপশম করা যায়। মাঠ পর্যায়ে অবমুক্তির কারণে উদ্ভূত পরিবেশগত যে কোনো বিরূপ প্রভাব বা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে আবেদনকারী সংস্থা/প্রতিষ্ঠানকে বায়োসেফটি রুলস এর আওয়াতায় দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে;

৬ বায়োসেফটি রুলস এর আওতায় বিটি বেগুন যাতে লেবেলিং বজায় রেখে বাজারজাত করা হয়, সে লক্ষ্য আবেদকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;

৭ কার্টাগেনা প্রোটোকল অন বায়োসেফটি টু সিবিডি অনুযায়ী পরিবেশে অবমুক্ত করার স্থানে গৃহিত বায়োসেফটি (biosafety measures) এর বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত মাসিক প্রতিবেদন বায়োসেফটি ক্লিয়ারিং হাউজ-এ প্রদানের লক্ষ্যে এন্সিবি এবং বিসিসি বরাবরে দাখিল করতে হবে।

এই সাতটি শর্ত অত্যন্ত জটিল এবং কৃষক পর্যায়ে মেনে চলা সম্ভব নয়, এবং তা দেখার মতো কোন পদ্ধতি সরকারের আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।

গভীর উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে দেশ বিদেশ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির তথ্য এবং কৃষকের স্বার্থের ক্ষতির কথা বলা হলেও সরকার কারো সাথে কোন প্রকার মত বিনিময় ছাড়াই একপ্রকার গোপনীয়তা বজায় রেখে এতো জন-গুরুত্বপুর্ণ জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মাত্র দুই দিনে কিভাবে এই কমিটি মত দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর জন্যে নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিন সময় দেয়ার কথা, সেটা দেয়া হয় নি। পত্রিকার সুত্রে জানা গেছে বিটি বেগুন কৃষক পর্যায়ে ছাড় দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে মন্ত্রণালয়ের সভাতেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য এসেছে। কিন্তু সেসব মতামত আমলে নেয়া হয় নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যদি অনুমোদন দেওয়া হয় তাহলে অবশ্যই বায়োসেফটি ফ্রেমওয়ার্ক ও বায়োসেফটি গাইড লাইন অনুযায়ী দেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা রক্ষা করা হয়েছে কিনা তা জানা যায় নি।

বর্তমান বিশ্বব্যাপী জিএম ফসল বিশেষ করে জিএম খাদ্য ফসল প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রাণবৈচির্ত্য চুক্তি অনুযায়ী বায়োসেফটি নীতিমালা মেনে চলার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ ফসলে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং করা হলে পৃথিবীর কোন দেশেই জৈব দুষণ, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে এখনো সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায় নি। অথচ বাংলাদেশের মতো এতো প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ কৃষিতে জেনেটিক প্রযুক্তি প্রবর্তনের আগে যে ধরণের সতর্কতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার তা না করেই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বোঝাই যাচ্ছে যারা এই অনুমোদন দিয়েছেন তাঁরা নিজেরাই নিশ্চিত নন যে এই বেগুন আসলেই নিরাপদ কিনা। অথচ এই কথা পরিবেশবাদী ও কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন এমন সংগঠনগুলো এতোদিন ধরে বলে আসছেন। তাঁরা দাবী জানিয়েছিলেন মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্থানীয় জাতের বেগুনের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে কিনা নিশ্চিত না হয়ে যেন অনুমোদন না দেয়া হয়। এই একই কারণে ভারত ও ফিলিপাইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সে কথার কোন গুরুত্ব সরকার দেন নি। এমনকি বিশ্বের নামকরা বিজ্ঞানীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই সব কিছুই উপেক্ষা করে শর্ত সাপেক্ষে চাষের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জানুয়ারি মাস থেকে এই চারটি বেগুন চাষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) কৃষি মন্ত্রণালয়ের বায়োটেকনোজি সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিকাল কমিটির সকল ধাপ পার হয়ে পরিবেশ মন্ত্রণায়ের ন্যাশনাল কমিটি অন বায়োসেফটি (এনসিবি) এবং বায়োসেফটি কোর কমিটি (বিসিসি) এর কাছে উত্থাপন করার মতো কী এমন তথ্য হাজির করতে পেরেছেন, যা দিয়ে বাংলাদেশের মতো ফসলের বৈচিত্রপুর্ণ দেশে জেনেটিকালী মডিফাইড ফসল প্রবর্তনের জন্য ক্ষেত্র তৈরী হোল? পুরো ব্যাপারটির মধ্যে একটা তড়িঘড়ির ভাব লক্ষ করা গেছে। জুলাই মাসে অনুমোদনের আবেদন করার পর মামলা হয়েছে দুটি,সে মামলা খারিজ হলেও সেখানে কিছু সতর্কতার কথা ছিল। আদালত সরকারকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন, কিন্তু সেটা দেয়া হয়েছে কিনা জানা যায় নি। অন্যদিকে বায়োসেফটি কোর কমিটি (বিসিসি) কে মাত্র দুই দিনের মধ্যে তাদের মতামত/ প্রতিবেদন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার জন্যে বলা হয়। খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে এতো বড় সিদ্ধান্তের বিষয়টি এতো অল্প সময়ে কিভাবে করা হতে পারে? এর প্রেক্ষিতে দেয়া অনুমোদন কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

এসব প্রশ্নের সুরাহা না করেই সরকার ঘটা করে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকের মধ্যে চাষের জন্যে এই চারটি বিটিবেগুনের চারা বিতরণ করেছে। এইগুলো হচ্ছে-বারি বিটিবেগুন-১ (উত্তরা), বারি বিটিবেগুন-২ (কাজলা),বারি বিটিবেগুন-৩ (নয়নতারা), বারি বিটিবেগুন-৪ (ISD006)। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে চারটি জেলার (গাজীপুর জামালপুর, রংপুর ও পাবনা) মোট ২০ জন কৃষকের মাঝে ২২ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরি বিটিবেগুনের চারা বিতরণ করেছেন।

বিটিবেগুন নিয়ে নানা উৎকন্ঠা

বাংলাদেশে রবি এবং খরিফ মৌসুমে ২০০৯-১০ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিশাব অনুযায়ী মোট ১১৫৪২৪ একর জমিতে ৩৪১২৬২ মেট্রিক টন বেগুন উৎপাদন করা হয়। এই সব্জি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং দেশে এবং বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে। শুধু তাই নয় এই সব্জির মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, শর্করা, খনিজ লবণ, ভিটামিনসহ অনেক পুষ্টিগুণ। সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে এই সম্পদ রক্ষা করা। যেখানে বেগুন বারো মাস জন্মে এবং সারা দেশে নানা জাতের বেগুন পাওয়া যায় সেখানে কি এমন প্রয়োজন দেখা দিল যে আমাদের দেশের বেগুনের মধ্যে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের মতো বিতর্কিত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হোল?

যেসব দেশে জিএম ফসল চাষ হয়েছে সেখানে এর নিয়ন্ত্রণের জন্যে জিএম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সতর্কতামুলক আইন রয়েছে। কোন দেশে কোম্পানীর অধীনে গবেষণা করলেই তা অনুমোদনের জন্য যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে জিএম ফসলের ক্ষেত্রে এই সতর্কতা কঠিনভাবে মেনে চলার বিধান আছে। বাংলাদেশ সরকার জিএমও সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ Cartegena Protocol on Biosafety স্বাক্ষর করেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের বায়োসেফটি আইন প্রণীত হয় নি, যা আছে তা হচ্ছে বায়োসেফটি রুল, ২০১২। জিএম ফসল প্রবর্তনের জন্য এই রুল যথেষ্ট নয়।

আরো জানতে দেখুন: বিটিবেগুন (বিকৃত বেগুন) পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ঝুঁকি


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।