বিটি বেগুন, জিএম আলু, গোল্ডেন রাইসের ছোবল থেকে দেশ বাঁচাও


জিএম মুক্ত বাংলাদেশ চাই

জিএমও বিরোধী গণমোর্চা ও বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার যৌথ উদ্যোগে, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১টায়, বিটিবেগুন জিএম আলু ও গোল্ডেন রাইসের মতো জিএম খাদ্য ফসল প্রবর্তনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। এই সমাবেশে একের পর এক জিএম ফসলের প্রবর্তন করে এদেশের কৃষি ও ভোক্তা হিশেবে জনগণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে প্রকাশ করা হয়। বহুজাতিক কোম্পানির সহযোগিতায় জেনেটিক কারিগরির মাধ্যমে ফসলের প্রাণ গঠনের পরিবর্তন করে বিটিবেগুন ও জিএম আলু, এবং একই সাথে গোল্ডেন রাইস নামক ধানের গবেষণা পর্যায় শেষ করে মাঠে চাষের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিটি বেগুনের চারা কৃষকদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. এম এ সোবহান। বক্তব্য রাখেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ফরিদা আখতার, মহিদুল হক খান, জাহাঙ্গীর আলম জনি, এস. এম সৈকত, আমিনুর রসুল, ইবনুল সাঈদ রানা, সীমা দাস সীমু, ফিরোজা বেগম ও নুপুর। প্রতিবাদ সমাবেশে বিটিবেগুনের ভয়াবহতা প্রতীকী মুখোশের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এছাড়া, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ফেস্টুনে বিটিবেগুন ও জিএম ফসলের ক্ষতির দিক তুলে ধরা হয়।


bt


লিখিত বক্তব্যে বলা হয় জিএম খাদ্যের উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি আছে বলে বিটি বেগুনের চাষের অনুমোদনের আগে ও পরে ব্যাপকভাবে প্রতিবাদ হয়েছে; পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। কোর্টে মামলা হয়েছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে বিটি বেগুন মানুষের জন্যে এবং পরিবেশের জন্যে নিরাপদ কিনা না জেনেই কৃষক পর্যায়ে চাষের জন্যে দেয়া হয়েছে। এই ধরণের ফসলের চাষের জন্যে যে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয় কৃষকের তা জানা নেই। তাদের পক্ষে সব সতর্কতা মেনে চলা সম্ভব নয়। আশে পাশের কৃষকদের সাধারণ ফসলও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিটি বেগুনের বিষয়ে সম্পুর্ণ নিশ্চিত না হতেই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) ঘোষণা দিয়েছে দুটি আলুর জাতের মধ্যে লেট ব্লাইট প্রতিরোধক জিন ঢুকিয়ে late blight resistance gene (জন) potato বানানো হচ্ছে। বারি ঘোষণা দিয়েছে যে এর কনফাইন্ড ট্রায়ালের অনুমোদন পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের আলু চাষীরা লেট ব্লাইটের আক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আলু বাজারজাতকরণের সমস্যা। যেমন এ বছর (২০১৩-১৪) ৮৫ লাখ টন উৎপাদন লক্ষমাত্রার বিপরীতে আলু উৎপাদন হয়েছে ৮৬ লাখ টনেরও বেশি। অনেক স্থানে এখনো আলু তোলাই হয়নি। এই খবর প্রতিদিন পত্রিকায় আসছে, কৃষকেরা বেশী ফলনের আনন্দ করছেন না, বরং মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন কারণ তাঁদের আলু বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি প্রতি দেড়-দুই টাকায়। আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফলনের কোন সমস্যা নেই। তাহলে লেট ব্লাইট প্রতিরোধের নামে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং করার প্রয়োজন হোল কার স্বার্থে? কৃষকের স্বার্থে নিশ্চয় নয়। কৃষকের স্বার্থে হলে বাজারজাতের সমস্যা আগে সমাধান করা উচিত ছিল। তা না করে নতুন প্রযুক্তি আনার দরকার কি? এটা পরিস্কার কৃষকের নয়, কিংবা ভোক্তার চাহিদার কারণে নয়, কো¤পানির স্বার্থেই আলু ও বেগুনে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং করা হচ্ছে।

মোর্চার পক্ষ থেকে বলা হয়:

১. স্বাস্থ্য ক্ষতি সংক্রান্ত কোন গবেষণা বাংলাদেশে হয় নি। ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণের ক্ষতি হবে না এই দাবি ভিত্তিহীন।

২. পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্যের ক্ষতি সম্পর্কে কোন মূল্যায়ন বা হুঁশিয়ারিই নাই। অথচ প্রাণবৈচিত্র্য সংক্রান্ত নানান আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ যা করতে বাধ্য। কারণ বাংলাদেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এবং তা বলবত করবার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।


relly 11 feb 14


৩. বাংলাদেশে বিটিবেগুন চাষের কোন যৌক্তিকতা নাই। বিটিবেগুনের চারা বিতরণ ও চাষ প্রাণ ও পরিবেশের মারাত্মক হুমকি, অবিলম্বে বিটিবেগুনের চাষ বন্ধ করা হোক; যেসব কৃষক চারা নিয়েছেন তাদের কাছে অনুরোধ দেশের ও কৃষির সর্বনাশ করবেন না।

৪. জিএম আলু,গোল্ডেন রাইসসহ অন্যান্য জিএম ফসলের প্রবর্তন প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে আগে এই ফসল আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা এবং মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য নিরাপদ কিনা নিশ্চিত করতে হবে। এবং

৫. বাংলাদেশ ফসলের দিক থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ। এইদেশকে জিএমমুক্ত রাখতে হবে, নইলে এ দেশ বহুজাতিক কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এটা হতে দেয়া যাবে না।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, স্থানীয় জাতের বেগুনকে জিন বিকৃতি ঘটিয়ে বিষাক্ত করা হয়েছে। অযুক্তিকভাবে বিটি বেগুনের বীজ কৃযক পর্যাযে বিতরণ করা হযেছে। অতি সত্তর এই বেগুনের অনুমোদন প্রত্যাহার করতে হবে। ইতোমধ্যে কৃষকের কাছে প্রদান করা চারা প্রত্যাহার করতে হবে। নিরপেক্ষ গবেষণার মাধ্যমে ঝুকিমুক্ত প্রমান না হওয়া পর্যন্ত বিটি বেগুন ছাড় দেওয়া যাবে না।

ফরিদা আখতার বলেন, বিটি বেগুন পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি। বিটি বেগুনের সাথে সাথে জিএম আলু ও ধান প্রবর্তনের পায়তারা চলছে। কোম্পানী বলে যে বিটি বেগুন চাষ করলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে না আসলে তা সত্য নয়। বেগুনের আরও অনেক রোগবালাই আছে। বিটি বেগুন প্রযুক্তি নির্ভর ফসল। কোম্পানীর লাভের জন্য এটা ছাড় দেওয়া হয়েছে।

ড. এম, এ, সোবহান বলেন, বেগুনে ব্যাকট্রেরিয়ার জিন সংযোজন করে বেগুনকে বিষাক্ত করা হয়েছে। জন স্বাস্থ্য ও পরিবেশেষের জন্য বিটি বেগুন মারাত্মক হুমকি। অবিলম্বে বিটি বেগুনের অনুমোদন প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলাদেশকে জিএম মুক্ত দেশ হিসাবে ঘোষণা করতে হবে।


bt


মহিদুল হক খান বলেন, বিটিবেগুন প্রবর্তনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং পরিবেশ ধ্বংস হবে।

ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, বহুজাতিক কোম্পানী আমাদের দেশীয় বেগুনের জাত ধ্বংস করে ব্যবসা করতে চায়।

আমিনুর রসুল বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় বিটি বেগুনের শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে। তবে এ বেগুন চাষের ফলে কোন ক্ষতি হলে তার দায়-দাযিত্ব পরিবেশ মন্ত্রণালয় নিতে চায় না। এটা কোন ধরণের ছারপত্র? আমরা মনে করি মন্ত্রণালয়ের উপর চাপ প্রয়োগ করে এটা করান হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

এসএম সৈকত বলেন, বহুজাতিক বীজ কোম্পানী আমাদের বীজের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে ব্যবসা করতে

জাহাঙ্গীর আলম জনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষিজাত উৎপাদিত পণ্য ইউরোপসহ আর্ন্তজাতিক বাজারে রপ্তানীর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। কিন্তু জিএম কোন ফসল ইউরোপীয় ইউনিয়নআমদানী করবে না। ফলে বিটি বেগুনের অনুমোদন বন্ধ করতে হবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।