বিটি-বেগুন লেবেল ছাড়া বিক্রি করা অনুমোদনের শর্ত লংঘন


বিটি-বেগুন লেবেল ছাড়া বিক্রি করা অনুমোদনের শর্ত লংঘন, জনগণকে না জানিয়ে জিএম ফসল বিক্রির পাঁয়তারা বন্ধ কর, অবিলম্বে বিটি বেগুনের চাষ ও বিক্রি বন্ধ কর

জি এম ফসল বিটি বেগুন লেবেল ছাড়া বিক্রি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা না জেনেই মানুষ তা কিনছে। অবিলম্বে বিটি বেগুনের চাষ ও বিক্রি বন্ধ করার দাবীতে বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার পক্ষ থেকে ১৭ জুলাই, ২০১৪ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১:০০ টায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার পক্ষ থেকে ফরিদা আখতার, মহিদুল হক খান, ড. এম. এ. সোবহান, জাহাঙ্গীর আলম জনি, পলাশ বড়াল, রেহ্মুনা নুরাইন, ফিরোজা বেগম, রোকেয়া বেগম, সঞ্জয় বড়াল, রুশিয়া বেগম, আব্দুল জব্বার, মুন্নী খানম, আমির হোসেন, সীমা দাস সীমু, মো: বাহারানে সুলতান বাহার ও অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ। বিভিন্ন ফেষ্টুন ও ব্যানার ব্যবহার করা হলেও মানববন্ধনে প্রশাসন মাইক ব্যবহার করতে দেয় নাই। তাই লিখিত বক্তব্য থেকে তুলে ধরা হলো:-

বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার পক্ষ থেকে গত বছর (২০১৩) থেকে বহুবার জিএম খাদ্য ফসলের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির প্রশ্নে উৎকন্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদশে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BARI) যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের বিশেষ কর্মসুচী ABSP II এর অধীনে বহুজাতিক কো¤পানি মনসান্তো ও ভারতের মাহিকোর সহায়তায় (ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্রিসটাল জিন বেগুনে সংযোজন করা) বিটি-বেগুনের এই গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন এবং এর ফলাফল গোপন রেখে অনুমোদনের শর্ত লংঘন করে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কৃষক পর্যায়ে এর চাষ শুরু করেছেন। উদ্দেশ্য হিশেবে বলা হয়েছে এটি বেগুনের ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কীটনাশকের ব্যবহার কমাবে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাশনাল কমিটি অন বায়ো সেফটি (National Committee on Biosafety, NCB) চারটি বিটি বেগুন জাতের ছাড় দিয়েছে। এই চারটি জাত বিটি-বেগুন ১ (উত্তরা), বিটি-বেগুন ২ (কাজলা), বিটি-বেগুন ৩ (নয়নতারা) এবং বিটি-বেগুন ৪ (ঈশ্বরদী-০০৬) নামে ছাড়া হয়েছে। এবং বাংলাদশে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BARI) এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে গাজীপুর, জামালপুর, পাবনা ও রংপুর এলাকার ২০ জন বাছাই করা কৃষকের মাঝে চারা বিতরণ করে এবং সাথে কৃষক প্রতি ৮০০০ টাকা দিয়ে চাষ করানো হয়েছে। কিন্তু চারটি এলাকায় পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে মাঠ পর্যায়ের চাষের ফলাফল ব্যর্থ হয়েছে এবং দু’একজন কৃষক ছাড়া বাকীরা বেগুন গাছে, পাতায় ও বেগুনে পোকা ধরা এবং বেগুনের ফলন না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। যেখানে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধকারী (FSB) বিটি বেগুনে শতভাগ পোকা মুক্ত থাকার কথা সেখানে পাতায় শুধু নয়, ফলেও পোকা দেখা গেছে। বেশ কিছু গাছে ফুল পচে গেছে, ফলে পোকা লেগে বি™ঘুটে লাগছে। বিটি বেগুন বিষমুক্ত হবে বলে যে যুক্তি দেয়া হয়েছিল তাও প্রমাণিত হয়নি। পাতায় লাগা পোকার জন্যে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এবং কৃষক নিজের উদ্যোগে ম্যালথিয়ন, ছত্রাকনাশক কুমপ্লেক্স, মাকড়নাশক ওমাইট ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে যে রংপুরের বাজারে বিটি বেগুন বিক্রি করতে দেখা গেছে এবং তাতে কোন প্রকার লেবেল দিয়ে ক্রেতাকে জানানো হয়নি যে এইগুলো সাধারণ দেশী বেগুন নয়, এটা জিএম বেগুন যার সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকতে পারে। যারা কিনছে তাদের কোন পরিচয় লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে না যে পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হবে তাদের কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা।


বিটিবেগুন বানববন্ধন ১৭ জুলাই প্রেস ক্লাব ঢাকা


আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী জিএম ফসল বাজারজাত করতে হলে লেবেল দিয়ে ক্রেতাদের জানাতে হয় যে এটা জেনেটিকালী মডিফাইড। বাজারে বিটি বেগুন বিক্রির অভিজ্ঞতাও ভাল নয়। রংপুরের একজন কৃষক পাঁচ বস্তা (প্রতিটিতে ৪৫ কেজি) বাজারে নিয়ে যান। প্রথম বস্তা খোলার পর বেগুন চকচকে দেখা যাচ্ছিল, সে সময় বস্তা বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। কিন্তু দুই ঘন্টার মধ্যেই বাকী বস্তার বেগুন ‘চিমাইয়া’ (চুপসে) যায়। তখন ক্রেতা আর কিনতে চান না। তাই তিনি বাধ্য হয়ে একজনের কাছে ৩০০ টাকা বস্তা বিক্রি করে দেন। অন্য একজন কৃষক বিটি বেগুন উত্তরা ৪৮০ টাকা মণ বিক্রি করেছেন। অথচ পাশেই স্থানীয় জাতের খটখটিয়া বিক্রি হয় ৬০০ টাকায় মণ। তাদের মন্তব্য - বিটি বেগুন হাতে নিলেই কেমন চুপসে যায়, তাই ক্রেতা পছন্দ করেন না।

লেবেল না দিয়ে বিক্রি করা বিটি বেগুনের অনুমোদনের শর্ত নম্বর ৬-এর সরাসরি লংঘন। এই শর্ত অনুযায়ী বায়োসেফটি রুলস -এর আওতায় বিটি বেগুন যাতে লেবেলিং বজায় রেখে বাজারজাত করা হয়, সে লক্ষ্যে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;

সর্বশেষ (জুলাই মাসে) তথ্য নিয়ে দেখা গেছে রংপুরের খালাশপীর হাটে রোজার মাসে একজন কৃষক একবার ৮৫ কেজি, এবং আরেকবার ৮০ কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মন দরে বিক্রি করেছেন। অন্যজন কৃষক ২০০ কেজি বিটি বেগুন ৮০০ টাক মন দরে বিক্রি করেছেন। রোজার মাসে ইফতারীতে বেগুনী খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়োছে। যেখানে বিটি বেগুন বাজারে বিনা লেবেল বিক্রি হয়েছে সেখানে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়েছে কিনা তাঁর খোঁজ কিভাবে নেয়া হচ্ছে? যদি কোন ক্ষতি হয়ে থাকে তার দায়-দায়িত্ব সরকার কি নেবে?

আমরা দেখছি কৃষক বিটি বেগুন চাষ করতে গিয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। একদিকে গাছে-পাতায় এমনকি ফলে অন্যান্য পোকার আক্রমনে বিষ ব্যবহার করতে হচ্ছে অথচ ফলন ঠিক মতো হচ্ছে না, আবার অন্যদিকে দেশে সব্জি ফসলে লেবেলিং বিষয়ক কোন আইন বা ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় লেবেল লাগানো সাপেক্ষে বিটি বেগুন অনুমোদনের শর্ত পুরোপুরি লংঘিত হচ্ছে। আজ পর্যন্ত বারির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা বিটি বেগুন খেয়েছেন কিনা জানা যায়নি। কৃষকরা পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছেন তাঁরা নিজেরা খাবার জন্যে এই বেগুন ঘরে রাখেন নাই।

কাজেই জনগণের পক্ষ থেকে মোর্চা আবারও সরকারের কাছে অবিলম্বে বিটি-বেগুনের চাষ ও বিক্রি বন্ধের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।