নারী ও গাছ 

নারী ও গাছ কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা, ফরিদা আখতার; প্রথম প্রকাশ ২৯ জানুয়ারি ২০০২ দ্বিতীয় প্রকাশ ২৮ জানুয়ারি, ২০০৮, ১৪ মাঘ ১৪১৪। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা প্রকাশনি ঢাকা ১২০৭। পৃষ্টা ৪২/ মূল্য: ৩৮/=

গাছকে শুধু পরিবেশের প্রয়োজনে দেখলে চলবে না গাছের সাথে রয়েছে মানুষের সামাজিক সম্পর্ক। গাছও নীরবেই পরিবারের সদস্য হয়ে যায়। এই সম্পর্ক নারীর অবস্থানের দিক থেকে বোঝা খুবই জরুরী। এই বইতে পাঠক সেইসব ইঙ্গিত পাবেন।

ভূমিকা

'নারী ও গাছ: কৈজুরি গ্রামের নারী ও গাছের কথা' অনেক দিন অপেক্ষার পর ছোট চটি গ্রন্থ আকারে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা প্রকাশ করছে। এই গ্রন্থটিতে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার একটি গ্রামের নারীদের গাছ লাগানো এবং এর সাথে তাঁদের জীবনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক তুলে ধরার জন্যে যে গবেষণা করা হয়েছিল তারই কথা সহজভাবে লেখা হয়েছে। গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। ওই বছর জুলাই মাসে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল। আমার দুজন সহকর্মী সীমা দাস সীমু এবং আশরাফ উদ্দীন তথ্য সংগ্রহের জন্যে টাঙ্গাইলে গিয়ে এই গ্রামটি বেছে নিয়েছিলেন। কারণ এই গ্রামে গাছ অনেক। প্রায় প্রতি বাড়িতেই কোন না কোন ভাবে গাছ লাগানো আছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার প্রায় ২০টি পরিবার বেছে নেয়া হয়েছিল তথ্য সংগ্রহের জন্য। কিন্তু তখন বড় ধরণের বন্যার জন্যে কাজটি কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। আবার আগষ্ট মাস থেকে কাজ ধরা হয়।

মূল গবেষণাটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯০ সালে 'Women and Trees' নামে। গবেষণাটি জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর সাথে করা হয়েছিল। যদিও এফএও শুধুমাত্র গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে নারীর অবদান বোঝার জন্যে বেশী আগ্রহী ছিলো, আমাদের গবেষণায় আমরা গাছ লাগানোর সাথে নারীর পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের দিক থেকেও দেখার চেষ্টা করেছি। সমাজে নারীর যে অবস্থান তা বোঝার জন্যে গাছের সাথে নারীর সম্পর্ক, তাঁর অধিকার এবং মালিকানার বিষয়টি দেখা অতি দরকার। আমরা নারী অধিকারের কথা বলি, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এর রূপ কেমন তা ধরার চেষ্টা করি না। তাই আমাদের কথাগুলো অনেক সময় হারিয়ে যায়, শেকড়ে গিয়ে গাঁথতে পারে না। এই গবেষণাটি ছোট হলেও এর কথাগুলো অনেক গভীরে যেতে পেরেছে। আমরা বড় গবেষণার মতো করে শুধুমাত্র প্রশ্নপত্র ধরে কথা বলি নি, বরং গ্রামের গৃহস্থবাড়ির প্রায় প্রতিটি গাছের কথা জানতে চেয়েছি। আর অবাক কাণ্ড হচ্ছে গাছের প্রতিটি কথা যেন তাদের জানা আছে। কেমন করে লাগানো হোল, কেমন করে বড় হোল, কে লাগালো পুরো বৃত্তান্তই তাঁদের জানা আছে। ফলে লিখতে খুব সুবিধা হয়েছে। বাংলায় 'কৈজুরি গ্রামের গাছের কথা' শিরোনামে মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল জুলাই ডিসেম্বর, ১৯৯১ সালে বৃক্ষ সংখ্যায়। ইংরেজিতে বইটি প্রকাশিত হবার পর দেখা গেছে এর চাহিদা অনেক বেশী। যারা পরিবেশ, বৃক্ষ এবং সবচেয়ে বড় কথা নারীর অবদান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাঁরা এই বইটি পড়তে চেয়েছেন। তখন অনেকেই বলেছেন বাংলায় কেন লেখা হোল না। এইসব কথা তো বাংলায় পড়তে বেশী ভাল লাগে। কথাটি একেবারে খাঁটি। কাজেই বাংলায় লেখাটি ছোট বই আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত আমরা নিলাম। আশা করছি পাঠকের ভাল লাগবে।

আর একটি কথা। আমরা যখন গ্রামে যাই, তখন আমাদের হাতে ক্যামেরা ছিল না। শুধু তথ্য সংগ্রহ করেই এনেছি। কিন্তু বই প্রকাশের সময় মনে হোল দু একটি ছবি না দিলে নয়। এতোদিন পর আবার সেই গ্রামে গিয়ে ছবি তুলে এনেছি। কাজেই ছবির বয়স আর এ তথ্যের বয়সের মধ্যে ব্যাপক ফারাক আছে, এই কথা মনে রাখতে হবে। ছবি তুলে দিয়েছেন শামসুদ্দিন মোঘল।

বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে রুশিয়া বেগমের অবদান অপরিসীম। লেখাগুলো টাইপ করা থেকে শুরু করে বইটিকে সাজিয়ে নেয়ার সব কাজ রুশিয়াই করেছেন। তাঁর সাথে বইটির প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদে সহায়তা করেন শাহ আমীর খসরু। সীমা দাস সীমু শুধু তথ্য সংগ্রহের কাজেই নয়, বইটির প্রকাশনার জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রুফ দেখার মতো পরিশ্রমের কাজও তিনি করেছেন। রুশিয়া, সীমু, মোঘল, খসরু সকলকে ধন্যবাদ দিলে নিশ্চয়ই তাদের অবদানকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে না। সব কাজের শেষ কাজ বাইন্ডিং তো আছেই। তাঁদের কথাও বলতেই হয়। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা এখন প্রকাশক হিশেবে গবেষণামূলক বইয়ের দিকে বেশী ঝুকেছে। সেদিক থেকে সাইদা আখতার কুমকুম সব সময়ই তাগাদা দিয়ে প্রকাশের কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এই বই ছিল অসম্ভব।

ফরিদা আখতার
২ মাঘ, ১৪০৮

 

Back to album