খনার বচন নয়াকৃষি কৃষকের চর্চা
খনার বচন নয়াকৃষি কৃষকের চর্চা; নয়াকৃষি আন্দোলন; প্রকাশক নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ৬/৮ স্যার সৈয়দ রোড মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭। ফোন: ৮৮-০২৫৮১৫৫০১৫। প্রকাশকাল ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ / ২ বৈশাখ, ১৪৩১। পৃষ্ঠা: ৩৯। মূল্য: ১০০ টাকা
খনার বচন ‘খনা’ (বা ক্ষণা) নামের বিদুষি নারীর ছোট ছোট সহজে মুখস্থ রাখবার কৃষি সংক্রান্ত ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। খনা জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী বাঙালি নারী। অজস্র খনার বচন যুগ-যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন-জীবনে মুখস্থ, কৃষকের জীবনযাপনের সঙ্গে মিশে আছে।
নয়াকৃষিতে খনার বচনের গুরুত্ব অপরিসীম। খনার বচনে কিভাবে জগতের সঙ্গে প্রাণোৎপাদনের সম্বন্ধ গভীর ও দৃঢ় করা যায় সহজে তার হদিস পাওয়া যায়। কৃষকদের হাজার বছরের অভিজ্ঞতা, লালিত ঐতিহ্য এবং লোকায়ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার চর্চার জন্য খনার বচন সে কারণে নয়াকৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভূমিকা
খনার বচন ‘খনা’ (বা ক্ষণা) নামের বিদুষি নারীর ছোট ছোট সহজে মুখস্থ রাখবার কৃষি সংক্রান্ত ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। অনেকের মতে, খনা জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী বাঙালি নারী। অজস্র খনার বচন যুগ-যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন-জীবনে মুখস্থ, কৃষকের জীবনযাপনের সঙ্গে মিশে আছে। খনা নারী, তাই ইতিহাসের চরিত্র কিম্বা কিংব্দন্তি হোক, বাংলার নারীদের খুবই আপন জন। খনার ছড়ার মধ্যে যে প্রজ্ঞা ও লোকায়ত জ্ঞান নিহিত বাংলার মেয়েরা তার মধ্যে নিত্যদিন নিজেদেরই নতুন করে আবিষ্কার করেন। কথিত আছে বিদুষি খনা রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার নবরত্নের দশম সদস্য ছিলেন।
খনা বাংলাদেশের কৃষি ও গ্রামীণ সাংস্কৃতিক পরিসরে অতি পরিচিত একটি নাম। পুরা দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই খনার খ্যাতি, তবে বাংলাদেশের বাইরে বিশেষ ভাবে দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলংকায় খনা বিখ্যাত। গ্রহনক্ষত্রের সম্পর্ক, মৌসুম, বায়ু, আলো, বৃষ্টি, ছায়া, বাড়ির অবস্থান সব কিছুকে আমলে নিয়ে কৃষি চর্চার যে বিদ্যা ও কৌশল খনার বচনে কৃষকের মুখে মুখে ছড়িয়ে রয়েছে তা লোকায়ত প্রজ্ঞার এক অমূল্য সম্পদ বলা যায়।
খনা মৌখিক, তাঁর বচন মুখস্থ রাখাই রেওয়াজ। ফলে নিরক্ষর সংস্কৃতির বিজ্ঞান চর্চার বিশেষ ধরণ খনার বচনে, ছড়ায় এবং কাব্যে রচিত রয়েছে। এই মুখস্থ সংস্কৃতি অসামান্যই বলতে হবে। খনার বচন কৃষক পরিবারের মুখস্থ। প্রজ্ঞা, বিশেষ করে জোতির্বিদ্যা, কৃষি, মৌসুম, আবহাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে নির্ভুল ভবিষ্যৎ গণনা করতে পারার জন্য হাজার বছর পরেও কৃষকের দৈনন্দিন কাজে খনার বচন ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের মুখের বুলিতে খনার বচন ঢুকে গেছে।
খনা মূলত ছিলেন কবি। কিন্তু তিনি কাব্যরচনা করেন নি। তাঁর বচন আসলে ছোট ছোট ছড়া, যা সাধারণ নিরক্ষর কৃষকের মনে রাখার জন্য খুব সুবিধা। যেহেতু তিনি নারী তাই এই মুখস্থ ছড়া চর্চা নারীর জ্ঞানচর্চার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বা ধরণ হিশাবেও স্বীকৃত। এর মধ্যে নারীর জ্ঞান চর্চার এক অতি উচ্চ মাত্রার রূপ হাজির। যেখানে পর্যবেক্ষণ আছে, বিজ্ঞান আছে, বাস্তব পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ, প্রকৃতিকে বোঝা ইত্যাদি নানান কিছু আছে। জোতির্শাস্ত্রের পাশাপাশি গণিত শাস্ত্র অতি সহজ ভাবে সাধারণ কৃষকের আয়ত্বে আনার ক্ষেত্রে খনার বচন গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পূর্ব আকাশের দিকে কিম্বা ঈশান কোণে তাকিয়ে, কিংবা অমাবস্যা পূর্ণিমায় কৃষক কি করবে তা বোঝার জন্যে বড় বড় বই ঘাঁটতে হচ্ছে না। খনার বচন জানা থাকলে গ্রহনক্ষত্র বিদ্যা তার মুখস্থ। কৃষক সব বলে দিতে পারছে।
খনার বচন সব সময়ই নারীর প্রজ্ঞার নজির হিশাবে স্বীকৃত হয়ে আসছে। গ্রামীণ কৃষক নারী খনার বচনকে তাই “নানী-দাদী কইতো” বলে উপস্থাপন করে। এই নানী-দাদীরাও খনার বচন শুনে শুনে তাঁদের জ্ঞানের চর্চার মধ্যে নিয়েছেন এবং যুগের পর যুগ গ্রামীণ কৃষিচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে্ন। সে কারনে ঐতিহাসিকদের মধ্যে ‘খনা’ নামে আসলেই ঐতিহাসিক ভাবে কেউ ছিলেন কিনা সেই তর্ক এখনও রয়েছে। ইতিহাস ও পুরাণ সমভাবে ধারণ করে খনা বাংলা ও উপমহাদেশে যেভাবে হাজির রয়েছেন তাকে অতুলনীয়ই বলা যায়।
সূচি
- ভূমিকা ৫
- খনা সম্পর্কে গল্প ৯
- নয়াকৃষিতে খনার বচন ১৩
- খনা ও নারীর জ্ঞানচর্চা ১৫
- খনার বচন কি? ১৭
- কৃষকের জীবনে খনার বচন ২২
- আক্কাস ভাইয়ের খনার বচনের গান: ৩৮
Back to album