গার্মেন্ট শ্রমিকেরা সরকারী স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারে না
দেশের রপ্তানী আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্প। এই সেক্টরে ৪০ লাখেরও বেশী শ্রমিক কাজ করে যাদের মধ্যে ৮০ ভাগই নারী শ্রমিক। এই নারী শ্রমিকেরা দেশের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা। গার্মেন্ট সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকেরা দিন আনে দিন খায় অবস্থায় জীবন যাপন করে। গার্মেন্টে কাজ করে তারা যে টাকা উপার্জন করে তা দিয়ে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা পূরণ হয় না। স্বাস্থ্য সম্মত আবাসস্থল এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তাদের কাছে শুধুই স্বপ্ন। ফলে নানা রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতায় তাদের দিন কাটে। গামের্ন্ট কারখানায় শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ এখনও স্বাস্থ্য সম্মত নয়। সামান্যতম চিকিৎসা খরচ ও স্বাস্থ্য সেবার ব্যায়ভার বহন করার মতো ক্ষমতা তাদের নাই। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করতে হয় বলে সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেয়ে তারা সেবা নিতে পারে না।
গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সামাজিত ও মানসিক অস্থিরতা বেশী কাজ করে। সব সময় তাদের মধ্যে চিন্তা কাজ করে মাস শেষে বেতন পাওয়া যাবে কি না। ওভার টাইমের (দুই-তিন মাসের বকেয়া টাকা) টাকা পাবে কি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (১৯৪৮) মতে “স্বাস্থ্য একটি পরিপূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক মঙ্গলময় অবস্থা যা শুধুমাত্র রোগমুক্ত বা দূর্বলতা মুক্ত অবস্থাই বুঝায় না”। কিন্তু গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য যেন এটা প্রযোজ্য নয়।
গার্মেন্ট শিল্পে যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে তাদের যে অসুখগুলো দেখা দেয়:
১. হাড়ের সমস্যা, ২. ব্যাক পেইন, ৩. চোখে চাপ(Eye Stain), ৪. অপুষ্টি জনিত রোগ, ৫. শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা, ৬. জন্ডিস, ৭. গ্যাস্ট্রিক পেইন, ৮. ফাংগাল সমস্যা, ৯. জ্বর, ১০. পেটে ব্যথা, ১১. ক্রিমি সমস্যা ১২. হাঁপনি এবং ১৩. যক্ষা।
গার্মেন্টে সাধারণত সেলাই এর কাজ করে নারী শ্রমিকেরা। এরা অপারেটর। নানা ধরনের কাপড় তাদের সেলাই করতে হয়। কাপড়ে ডাষ্ট থাকে বলে তারা হাঁপানি, শ্বাস কষ্টে ভোগে। কাপড়ের ডাষ্ট থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়ার জন্য হলেও তাদের দেওয়া হয় না কোন মাস্ক। আর দীর্ঘ সময় ধরে এক স্থানে বসে মেশিনে সেলাই এর কাজ করে বলে তাদের ব্যাক পেইন, হাঁচু ব্যথা নিত্য দিনের সঙ্গি।
গার্মেন্ট সেক্টরে এই শ্রমিকদের জন্য ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে কোন চিকিৎসা সেবা দেবার ব্যবস্থা নাই। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানী কারক সমিতি (বিজিএমইএ) গার্মেন্ট কমপ্লায়েন্সের কারনে ঢাকা এবং নারায়নগঞ্জে অঞ্চলভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবার কিছু ব্যবস্থা করেছিল। ঢাকাতে যেমন- ১. মালিবাগ, ২. মিরপুর, ৩. আশুলিয়া, ৪. গাজীপুর ও ৫. নারায়নগঞ্জ। এই চিকিৎসা কেন্দ্রেগুলিতে একজন চিকিৎসক ও একজন সেবিকা থাকার কথা।বর্তমানে এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলি একটিও চালু নাই।
গার্মেন্ট শ্রমিকেরা অসুস্থতার জন্য সরকারী হাসপাতালের সেবা গ্রহণ করতে পারে না। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তাদের কাজের সময়।তারপর আছে ওভার টাইমের কাজ। ওভারটাইমের কাজ বাধ্যতামূলক। পরপর তিন দিন পাঁচ মিনিট দেরী করে ফ্যাক্টরীতে হাজিরা দিলে এক দিনের বেতন কাটা য়ায়।তাই অসুস্থ শ্রমিকেরা সরকারী হাসপাতালের সেবা গ্রহণ করার সুযোগ পায় না।মহল্লার ওষুধের ফার্মেসি থেকে নিজের অসুস্থতার কথা বলে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল কিনে খায়।আর টাকা পয়সার অসুবিধা থাকলে তারা কবিরাজী, পানি পোড়া খায়।