কৃষকের গল্প (১) আধুনিক কৃষি থেকে নয়াকৃষি আন্দোলনে যোগদান
নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার চাঁন্দাই ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামে কৃষক ইকরামুল হকের জন্ম। বয়স ৪২ বছর। ছোট বেলা থেকে বাবার সাথে কৃষিতে হাতেখড়ি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা আলাদা হয়ে গেলে নেমে আসে ইকরামুলের ভাগ্যে অন্ধকার। তখন ছেলে মেয়ে সহ ৩ জন। সম্পদ হিসাবে পায় ২০ শতক জমি। অনেক দুঃখ করে বলেন, যখন আলাদা করে দেয় ঘরে বাতি (কুপি) পর্যন্ত দেয়নি বড় ভাই। সংসার শুরু করেন প্রতিবেশীর দেয়া থাল,প্লেট এবং পাতিল দিয়ে। আরেক প্রতিবেশী ১০ কেজি ধান,৫০০ গ্রাম তৈল,লবন ১৫০ গ্রাম এবং কেরোসিন ২৫০ গ্রাম দিয়ে। তখন থেকে চিন্তা করতে শুরু করেন নিজেদেরকে বাচাঁতে কিছু করতে হবে। এই শক্তি নিয়েই গ্রামের বড় একজন কৃষকের নিকট থেকে বড় একটি পতিত জমি পরিষ্কার করার কাজ নেয়। ১২ দিন খাটার পর ২৪০০ টাকা উর্পাজন করেন। তিনি খুব খুশি হন। এ টাকা থেকে ঘরের অতি প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ক্রয় করে। এরপর প্রতিবেশী এক কৃষক থেকে ১৫ শতক জমি বর্গা নিয়ে চাষ শুরু করেন এবং চাষাবাদের মাধ্যমে নিজেকে বদলাতে চেষ্টা করেন। তখনও বেশি লাভের আশায় বাহিরের বীজ এবং সার বিষ দিয়ে আবাদ করতেন। কারন তখন তার হাতে কোন স্থানীয় জাতের বীজ ছিল না এবং গোবর ব্যবহার করতে পারতো না কারন তার কোন গরু ছিল না। তখন প্রায় কৃষকই রাসায়নিক কৃষি করতেন। দেখাদেখি ইকরামুল হকও প্রলোভনে পড়ে যান। কষ্ট করতে করতে যখন জমি ২ বিঘা এরপর থেকে আর আগাতে পারেনি। কারন খরচ বেশি পড়ে যেতো বীজের দাম এবং কীটনাশকের দাম অনেক ছিল। এমতাবস্থায় নয়াকৃষি গবেষণা বিভাগের কর্মীদের সাথে যোগাযোগ হয় গ্রামকর্মী নীহার বানুর মাধ্যমে। তখন থেকেই নয়াকৃষির শিক্ষাসঙ্গ এ অংশগ্রহন ও মিশ্র আবাদে এবং সার কীটনাশকের বিপরীতে জৈব্য সার তৈরি জ্ঞান অর্জন করে। ১০ নীতি মেনে নতুন করে আবার শুরু করেন চাষাবাদ। পাশাপাশি নয়াকৃষি আন্দোলনের মাধ্যমে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি এবং বীজ উৎপাদনের জন্য স্থানীয় বীজের সহযোগিতা পায়। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি কৃষক ইকরামুল হক কে।বর্তমানে নিজেকে পরিবর্তন করে গ্রামের একজন আর্দশ কৃষক হিসেবে পরিচিত হয়েছে। ইকরামুল হক এখন নিজে বিক্রির জন্য বীজ আবাদ করেন। এবং নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন করছে। এতে করে নিজেদের খাওয়াও হচ্ছে অন্যদিকে বাজারে বিক্রয়ও করতে পারছে। বর্তমানে একটি স্থানীয় জাতের গরু ক্রয় করেছেন। গরুর গোবর দিয়ে জৈব্য সার বানিয়ে জমিতে ব্যবহার করছেন।