সুস্থ বাচ্চা ও মায়ের পুষ্টি
যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার কুমারঘাটা গ্রামে গিয়েছিলাম দাইমাদের স্মৃতি ঝালিয়ে নেবার জন্য দাই প্রশিক্ষণ দিতে। সেই প্রশিক্ষণে একজন দাইমা আমাকে প্রশ্ন করে ছিলেন: একটি সুস্থ বাচ্চা কি ভাবে পেতে পারি। দাইমার নাম রুমিছা বেগম। বয়স ৬৫ বছর। গ্রামের নাম মনোহরপুর। তার প্রশ্নের জবাবে আমি বলেছিলাম গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি যদি আপনারা ঠিক রাখতে পারেন, তা হলে অবশ্যই একটি সুস্থ বাচ্চা পেতে পারেন। কিন্তু আমি মনে কষ্ট পেলাম যখন আমি কুমারঘাটা গ্রামের দিনমজুর সালামের বাড়ি গেলাম। সালাম একজন দিনমজুর। নিজের তেমন কোন জমি নাই। সালামের স্ত্রী বিলকিস বয়স ৩০ বছর। সে একজন গৃহিনী। তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর। ছোট মেয়ের বয়স ৬ বছর। মোটামুটি স্বাস্থ্য ভাল।
বিলকিস আবার গর্ভবতী হয়েছেন। ৫ মাস। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো গতকাল (১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪) আপনার খাবার তালিকায় কি কি খাবার ছিল। উত্তর ছিল সারাদিনে তার খাবার তালিকায় ছিল সকালে টমেটো টক দিয়ে ভাত। দুপুরে তেলাপোয়া মাছ দিয়ে ফুল কপি রান্না। রাতের খাবারে ছিল আলু এবং সীম দিয়ে তরকারি।
দ্বিতীয় দিন ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকালে বিলকিস রান্নার লাকড়ী কুড়াতে গিয়ে ছিলেন বাড়ির বাইরে। খাওয়ার পর তার বেশী অস্থির লাগে বলে সকালে সে কিছুই খায়নি। দুপুরে পাতা কপি ভাজি দিয়ে ভাত খেয়েছেন। রাতে খাবেন লাউ নিরামিশ দিয়ে ভাত। এছাড়া অন্য কোন বাড়তি খাবার তার ঘরে নেই। তার পরান অস্থির লাগে বলে এক পোয়া দুধ রোজ করতে গিয়ে ছিলেন। কিন্তু যাদের গরু আছে তারা বলেছেন দুধ নিতে হলে যতটুকু দুধ হয় সব নিতে হবে। না হলে তারা একপোয়া দুধ রোজ দেবে না। তার শরীর এত দুর্বল যে তার শ্বাস নেয়ার সময় গলার রক্তানালি গুলি দ্রুত উঠানামা করছে, পরিষ্কার বোঝা যায়। তার চেহারার দিকে তাকালেই বুঝা যায় বিলকিস অস্বাভাবিক রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। কুমারঘাটা দাইঘরে দুইবার ফলো আপের জন্য গিয়েছেন বলে জানান। কুমারঘাটা দাইঘরটি হচ্ছে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার জন্য একটি পরামর্শ কেন্দ্র। উবিনীগের সহায়তা এটি পরিচালনা করছে খলনার একটি সংগঠন নাইস ফাউন্ডেশন। স্বাস্থ্য নিয়ে উবিনীগ বিভিন্ন ছোট ছোট স্থানীয় সগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়ে কাজ করে। দাইঘর থেকে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কলার মোচা, ডুমুর ভর্তা, কচুশাক ছাড়াও আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য। গর্ভবতী বিলকিসের সাথে কথা বলে আমার কষ্ট আমি বুঝতে পারছি দাইমাদের যে উত্তর আমি দিয়েছি তার সাথে আসলে দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতার বাস্তবের কোন মিল নেই।
এই অবস্থা থেকে কবে এই মায়েরা বের হয়ে আসতে পারবে এবং একটি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেবে? সেটা যতোটুকু না স্বাস্থ্যের পুষ্টির সমস্যা তার চেয়েও অনেক বেশী অর্থনৈতিক -- এই দিকটা না বুঝলে এই ক্ষেত্রে বিশেষ কোন ফল কি আমরা পাবো? উবিনীগের কাজের এখানেই গুরুত্ব যে এই দিকটাই আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণে বারবার তুলে আনি ও নীতি নির্ধারকদের বোঝাতে চেষ্টা করি।