বিটি বেগুনের উন্মুক্ত চাষ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি
আজ (৬ মার্চ, ২০১৪) বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার পক্ষ হতে ‘বিটি বেগুনের উন্মুক্ত চাষ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক, বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র; বিটি বেগুন চাষের বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়সমূহ আলোচনা করেন গবেষক জনাব ডঃ এ.এন রেজাউল করিম, ভাইস চেয়ারম্যান, বি-সেইফ; ড. এম. এ. সোবহান, কৃষিবিজ্ঞানী; ফরিদা আখতার, নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ; জনাব যুবায়ের আল মাহমুদ, প্রভাষক, ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা। অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. জেড. এন তাহমিদা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য ট্রাষ্টি বোর্ড, শামসুজ্জামান দুুদু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিটি বেগুন চাষের জন্য নির্ধারিত ৩টি জেলা-জামালপুর, ঈশ্বরদী এবং রংপুর থেকে আগত কৃষক আবদুল জলিল, ইসহাক আলী ও মোহাম্মদ রাসেল ।
বক্তব্য রাখছেন প্রধান অতিথি অধ্যাপক আব্দুলাহ আবু সাঈদ
মতবিনিময় এ সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিটি বেগুন কি এবং এটি উদ্ভাবনের পদ্ধতি বিশদ পরিসরে আলোচনা করেন জনাব ডঃ এ.এন রেজাউল করিম। তাঁর মতে, বাংলাদেশের স্থানীয় নয়টি স্থানীয় বেগুনের জাতের জিন সিকোয়েন্স পরিবর্তন করে মনসান্তোর ব্যাসিলাস থোরিনজিয়োন্সস (ইঃ) নামক একটি ব্যাকটিরিয়ার জিন প্রতিস্থাপন করে উদ্ভাবিত বেগুনই বিটি বেগুন। বিটি বেগুনের সাথে কীটনাশকের কি সম্পর্ক এ বিষয়ে আলোচনা করেন ড. এম. এ. সোবহান, কৃষিবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, বিটি বেগুনের জিন বিকৃতির ফলে কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা এ বেগুন গাছের যে কোন অঙ্গের রস খেলে সাথে সাথে মারা যাবে। তার মতে এ বেগুনে যে বিষ তৈরি হবে তার ক্ষতি মানবদেহে সূদুরপ্রসারী হবে। বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেন উবিনিগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, বিটি বেগুন বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের মারাত্বক ক্ষতি করবে। কেননা প্রতিবেশি ভারতে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং বাংলাদেশে বিটি বেগুন চাষ হলে সকল সব্জি রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যা দেশের জন্য আত্বঘাতি হবে। মার্কিন কোম্পানী মনসান্তোর বিটি জিন যোগ করে উদ্ভাবিত এ বেগুনের মেধাসত্ত্ব কার অনুকূলে যাবে তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন জনাব যুবায়ের আল মাহমুদ, প্রভাষক, ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন, নয়টি বেগুনের স্থানীয় জাতের মালিকানা বহুজাতিক কোম্পানী মনোসান্তো ও ভারতীয় কোম্পানী মাহিকোর হাতে চলে যাওয়া দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিদেশি কোম্পানীর কাছে স্থানীয় জাতের বেগুন হস্তান্তরের আইনী ভিত্তি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বিশ্বে সম্পূর্ণ অপরীক্ষিত এবং জেনেটিক দূষণের জন্ম দিতে পারে এমন বেগুন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার আগে এর ব্যর্থ ফলন এবং সম্ভাব্য দূষণের বিপরীতে সিবিডি এবং কার্টাহেনা প্রটোকল অনুযায়ী ক্রেতাস্বার্থ, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব যা করা ব্যতিতই বিটি বেগুনের উন্মুক্ত চাষ অনুমোদন করা হয়েছে। তিনি আরোও বলেন, বিটি বেগুনের উন্মুক্ত চাষ অনুমোদন-এর ক্ষেত্রে দেশে প্রচলিত জীবনিরাপত্তা বিধিমালা, ২০১২ এবং জীবনিরাপত্তা গাইড লাইন-এর শর্ত পালন করা হয়নি।
বক্তব্য রাখছেন জামাপুরের কৃষক আব্দুল জলিল
প্রধান অতিথি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, বিটি বেগুনের ক্ষতির বিষয়ে ব্যাপকভাবে গনসচেতনতা তৈরী করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে কৃষিমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিটি বেগুনের ক্ষতির বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য যে, প্রতিবেশি ভারতের জাতীয় জীববৈচিত্র্য কমিটি সে দেশের জীববৈচিত্র্য আইন, ২০০২ ভঙ্গ করে ১৬টি দেশীয় প্রজাতির বেগুনে জিএম জিন সংযোজন করায় মাহিকোসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরূদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং ভারত ও ফিলিপাইন বিটি বেগুন বাজারজাতকরণের উপর সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশ এ বেগুন বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত জনস্বার্থ বিরোধী। বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার এ পর্যায়ের দাবি ২০০৫ সালের দ্বিপাক্ষীয় চুক্তি বাতিল করে বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।
মতবিনিময় সভার অংশগ্রহণ কারীদের একাংশ
মতবিনিময় সভায় বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন অবিলম্বে প্রত্যাহার করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত সুপারিশমালা প্রস্তাব করা হয়
১) বিটি বেগুন চাষের জন্য নির্ধারিত জেলায় মতবিনিময সভার আয়োজনের মাধ্যমে বিটি বেগুনের ক্ষতির বিষয়ে গনসচেতনতা তৈরী
২) বিটি বেগুনের ক্ষতির বিষয়ে পোষ্টার ও লিফলেটের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরী করা
৩) শিক্ষা প্রতিষ্টানের মাধ্যমে বিটি বেগুনের ক্ষতির বিষয়ে মত বিনিময় সভার আযোজন করা
৪) বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন প্রত্যাহার করার লক্ষ্যে গনস্বাক্ষরতা সংগ্রহ করা
৫) বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন প্রত্যাহার করার লক্ষ্যে আন্দোলনকে বেগবান করা
৬) বিটি বেগুন চাষের বিরুদ্বে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে টক শোর আয়োজন করা
৭) বেগুনের কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ করার জন্য সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার গবেষনা ও সম্প্রসারন বাস্তবায়ন করা
৮) স্থানীয জাতের বেগুনের জাত সংরক্ষনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা
৯) বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন অবিলম্বে প্রত্যাহার করা