বৃষ্টির দেখা নেই পুড়ছে ফসল, ঝরছে আম।


বৃষ্টির দেখা নেই পুড়ছে ফসল, ঝরছে আম

কৃষি ও কৃষক এদেশের অর্থনীতির মূল স্পন্দন। বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় কৃষি প্রধান এলাকার মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, এবং নাটোরের বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর এলাকার উচু জমিতে বিভিন্ন সবজীর চাষাবাদ হয়ে আসছে। ঈশ্বরদীর পদ্মাবিধৌত জমিতে মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, করলা, শসা,কচু, ঝিঙ্গা , লাল শাক, ডাটা শাক সহ মাঠের নিচু জমিতে কৃষকের ছিটিয়ে বোনা আউশ ধান পানির অভাবে লাল হয়ে পুড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য জমিতে আউশ ধান ছিটিয়ে বোনার সময় এখন, কিন্তু বৃষ্টির অভাবে বপন করা যাচ্ছেনা। যারা আউশ বপন করেছে বৃষ্টি না হলে তাও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কার কথা জানান কৃষক কুরবান আলী।


 

খরা


এখন বৈশাখ মাস, প্রথম ১০ দিন চলে গেছে। এখনো পর্যন্ত বৃষ্টির কোন দেখা নাই। চলছে আম, কাঠাল, লিচুর মৌসুম। তীব্র গরমে পাবনা নাটোর অঞ্চলে আম এবং লিচুর ফলন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কৃষকরা জানান, খরার কারনে আম ও লিচুর বোটা শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে আম লিচুর গুটি।

 

 


 

আম


পাবনা এবং নাটোর খরা প্রবন এলাকা। এখানে চৈত্র বৈশাখ মাসে বেশি গরম পড়ে, যার মাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে। শীতের সময় শীত ও বেশি থাকে অন্য যেকোন এলাকার চেয়ে। গত ৩ দিনের আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ঈশ্বরদীতে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

 

 


 

খঢ়া


খরায় শুকিয়ে যাচ্ছে পুকুর ও খালের পানি।মাঠে কর্মরত কৃষকদের শরীর ঘামছে সব সময়, কাজ করতে গেলে শরীর দূর্বল লাগে। কৃষকরা বলেন, চৈত্র মাসে ২ বার শিলা বৃষ্টি হয়েছে। সেই সময়ে আম ও লিচুর মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি না হলে খরা আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে।

 

পানির জন্য কৃষকের হাহাকার। শুধুমাত্র পাবনা জেলা ২০ টি নদী শুকিয়ে গেছে। পানি শূন্য নদী গুলো পদ্মা,যমুনা,কাগেশ্বরী, সুতিয়ালী,বান্নাই, চন্দ্রবতী, বড়াল,হুরা সাগর, রত্না, ইছামতি,আত্রাই, গুমানী সহ আরো অনেক নদী। এর মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে ৬ টি নদী। নদী গুলো কমলা, শানসাডাঙ্গী,ভাঙ্গুড়া ইছামতি,করতোয়া, রত্নবাড়ী, টেপাবাড়ী। ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে পদ্মা নদীর পানি শূন্যতার কারনে এই বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। শুধু নদী নয় শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়। তীব্র খরায় চরাঞ্চলের চিনা বাদাম, তিল , আম লিচু সহ বিভিন্ন গাছের ফল শুকিয়ে অসমেয় ঝরে যাচ্ছে। পানির স্তর অস্বাভাবিক ভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারি ভাবে ১৭ হাজার ও বেসরকারি পর্যায়ে ১ লাখ ২৫ হাজার নলকূপ থেকে পানি উঠছেনা বলে জানা গেছে। জেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে সাধারনত হস্ত চালিত নলকূপ দিয়ে ২৬ ফুট নিচের পানির উত্তোলন করা সম্ভব হয়। কিন্তু বর্তমানে পানির স্তর ৩৫ ফুটের নিচে চলে গেছে। এই জন্য কৃষক এবং ভূক্তভোগীরা ডিবটিউবওয়েলের পানি উত্তোলনকে দায়ী করেন। ২০১৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল জেলার উপজেলায় পাম ভেজ ভিত্তিক সর্ব নিম্ন পানির স্তিতি প্রতিবেদনে জানা যায় পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে ৩৮ ফুট নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। সদর উপজেলার মালিগাছায় ৩৫ ফুট ,বেড়া উপজেলায় ২৭ ফুট, ভাঙগুড়ায় ৩২ ফুট, সুজানগরে ৩২ ফুট,চাটমহরে ২৪ ফুট এবং সাথীয়ায় ৩৬ ফুট পানির সর্ব নিম্ন স্তর পাওয়া যায়। চলতি বছর এমাসের মধ্যে পানির স্তর পরিমাপ করা হবে। এবার পরিমাপ করলে এর চেয়ে বেশি নিচে পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


 

lichu


কৃষকদের ধারনা খরা দীর্ঘস্থায়ী হলে এভাবে পাবনা নাটোর সহ পুরো উত্তরাঞ্চল ধীরে ধীরে মরু করনের দিকে যাবে।অব্যাহত অনাবৃষ্টি ও গরমে ক্ষেতের ফসল রক্ষায় এবং খরা থেকে পরিত্রান পেতে প্রকৃতির কাছে বৃষ্টি কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে গ্রামবাসীর মাঝে খিচুরী বিতরন করেছ ইশ্বরদীর কৃষকরা। তাছাড়াও বৃষ্টি কামনায় কৃষকরা ‍আল্লা মেঘ দে, পানি দে ইত্যাদি কোরাস গেয়ে প্রকৃতির নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করছে।

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter