যদি খাও কচু থাকিবে কিছু
কথায় কথায় যে নামটি বেশী উচ্চারণ করা হয় তা হলো ‘কচু’। কারও কোন জিনিষ নিয়ে ফেরত না দিলে, সঠিক সময়ে কাজটি করতে মন না চাইলে আমরা ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বলি ‘কচু’। সেমিনার বা কর্মশালায় কারও বক্তব্য পছন্দ না হলে সহজেই উচ্চারণ করি ‘কচু’ হয়েছে। ব্যাঙ্গ করেও কথাটি বলা হয়। এমনি আরও অনেক কথা আছে যেখানে আমরা কচু শব্দটি উচ্চারণ করি। কচুর এত গুণাগুণ থাকা সত্ত্বেও কথায় কথায় কেন ‘কচু’ বলা হয়ে? জানিনা। ইংরাজিতে কচুকে বলে Colocassia. বৈজ্ঞানিক নাম Colocassia esculenta কচুর আর এক ইংরাজি নাম Arum.
কচুকে শুধু তাচ্ছিল্য করা হয় তাই নয় বাংলা একাডেমি’র প্রকাশনায় ‘বাংলাদেশের আগাছা পরিচিতি’ (লেখক: এস এম রেজাউল করিম ও মো: হাসান কবির) বই এ কচুকে আগাছা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু সকলেই জানে কচুতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ আছে। কচু খেলে শরীরে রক্ত হয়।
আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের কচু আছে। যেমন - ১. বন কচু। ২. বিষ কচু। ৩. কাঁটা কচু। ৪. মুখী কচু। ৫. শোলা কচু। ৬. ওল কচু। ৭. মান কচু। ৮. মোকাদ্দম কচু। ৯. সাল কচু। ১০. দুধ কচু। ১১. ঘেঁটু কচু। ১২. রক্ত কচু। ১৩. পঞ্চমুখী কচু ১৪. মৌলবী কচু,ও ১৫.গাঢ় কচু ।
সাধারণত কচু গাছ হয় বাড়ির আশে পাশে, রাস্তার ধারে, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায়। এই কচুর বেশীর ভাগই লাগাতে হয় না। এমনিতে হয়। আপন জালা। শাক হিসাবে এই কচুর প্রচলন বহু আগে থেকে।
আবাদী ও অনাবাদী উৎস থেকে পাওয়া শাক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে ‘ আমাদের কুড়িয়ে পাওয়া শাক’ বইটি নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা প্রকাশনা করেছে। তাতে ১০১টি কুড়িয়ে পাওয়া শাকের মধ্যে কচু শাক বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। গ্রামের মহিলারা বলেন, শাক ছাড়া ভাত খাওয়া যায় না। কাজে কাজেই শাক খাবার সাথে সখের খাবার খাওয়ার ব্যাপারও ঘটে। গরীব মানুষ ভাতের সাথে কচুর শাক খেয়ে ক্ষুধা মেটায়। গ্রামের মেয়েরা তাই বলে, ‘কচু সুসময়ের পুষ্টি আর অকালের ইষ্টি’।
কচু শাক সব মৌসুমেই পাওয়া যায়। শহরের ধনী ও মধ্যবিত্তরা পয়সা দিয়ে কচুর শাক কিনে খায়। কচুতে ওষুধী গুণাগুণও আছে। শরীরে রস বাত হলে, বাগী উঠলে, মুখে ঘা হলে কচু উপকারে আসে। একেকটা চিকিৎসার জন্য একেক ধরণের কচু ব্যবহার হয়। কচুর এত গুণাগুণ। তাই আসুন আমরা একত্রে বলি-
যদি খাও কচু থাকিবে কিছু
যদি খাও ঘি থাকিবে কি!