কুড়িয়ে পাওয়া খাবার খেয়ে জীবনের পরিবর্তন (১)
রোকেয়া বেগম || Tuesday 25 July 2017 ||রহিমা বেগম বয়স ৬৭ বছর। স্বামী মৃত কাঞ্চু মিয়া।
টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার আটিয়া ইউনিয়নের মৌসাকাঠালিয়া গ্রামে রহিমা বেগমের বাড়ি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। আগে তার কোন জমা-জমি ছিল না। শুধু বসতবাড়ি ১৪ শতাংশ তার মধ্যে দোচালা একটি ঘর ছিল। রহিমা বেগমের পরিবার আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছল হয়েছে। তার স্বাস্থ্য আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। সে এখন অনেক হাসি খুশি থাকে। নিজে অনেক কষ্ট করে বাড়ির পেছনে সামান্য জমি কিনেছেন। তাতে নানা ধরনের মৌসুমি শাক সবজি লাগিয়েছেন। তার ঘরে এখন বিদ্যুৎ আছে ফ্যান আছে, ইষ্টিলের আলমারী, সুন্দর কাঠের খাট, সুকেচ আছে। তাকে এখন আর আগের মত না খেয়ে কষ্ট করতে হয়না। তিন বেলা ভাত খেতে পারেন। তিনি কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য দিয়ে তার পরিবারকে টিকিয়ে রেখেছেন। বাজার থেকে শাক সবজি কিনতে হয় না। নিজের সবজি বাগান থেকে পরিবারের শাক সবজির যোগান দেন ।
মেয়ে তার সাথে থাকে। মেয়ের একটি ছেলে আছে। মেয়ের ঘরের নাতী কে বিয়ে করিয়েছেন। নাতীকে এস এস পর্যন্ত লেখা পড়া করিয়েছেন। নাতী ও নাতী বউ গার্মেন্টে চাকরি করে। মাসে নাতী ও নাতী বউ দুইজনে ২০,০০০ হাজার টাকা বেতন পায়। নাতী ও নাতী বউ বাড়িতে আসলে টাকা পয়সা দিয়ে যায়। মেয়ে বলে আগে অনেক কষ্ট করছ এখন এত কষ্ট করার দরকার নাই। তবু আমি অনেক কষ্ট করে বাড়ির পেছনে ছোট একটু জমিতে শাক সবজি চাষ করেছি, নল ঘাস চাষ করেছি ঘাস বিক্রি করি। এখন জৈষ্ঠ মাস এ সময় ধুমড়া (ধুন্দুল) চিন্তন, (চিচিংগা) শসা, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, পুইশাক বেগুন, পেঁপে, ফ্যান কচু, দুধ কচু, জাত কচু লাগিয়েছেন। তার এই সবজি বাগানে সাথীশাক হিসেবে রয়েছে, ক্যাথাপাটা, হেলেঞ্চা, ফুল হেঞ্চি, গিমা শাক, কলমি শাক, ঢেঁকি শাক, থানকুনি, কানাই শাক, আমরুল। বাড়িতে পেয়ারা, জাম, আম গাছ আছে।
মেয়ে মেয়াদী জমি রেখেছে ৫০,০০০ টাকায় ১২ ডিসিমল। হাল কিনে এনে নিজেরা চাষ করেন। এর পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় শাক সবজির গাছ বুনেন। হাঁস-মুরগিও পালন করে থাকে। সারা বছর কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের ওপর নির্ভর করে। বছরে ১২ মাসে তিনি কেমন করে তার সংসার চালিয়ে তার পরিবার কে উন্নতির পথে নিয়েছেন তা দেখতে পাবো প্রতি মাসে কেমন করে সংসার চালিয়েছেন তা দেখে।
বৈশাখ মাস: বাড়িতে তরিতরকারি গাছ লাগিয়েছেন। তার তরকারি শস্য, চিনতন বিক্রি করে। হাঁসের ডিম, মুরগির ডিম বিক্রি করে । বর্গা জমি থেকে যে ধান পায় তার চাল করে ঘরে রেখে দিয়েছেন সারা বছর এই চাল খাবে। গত বছরের চাল এখনো ঘরে আছে। এবারের ধান এখনো চাল করেনি।
আবার এক মুট লতি বিক্রি করে এক কেজি লবণ কিনে আনে। এ লবণ এক মাস নাগাদ খাবে। বাড়িতে চারটি ধান মরিচ আছে তার মরিচ নিজেরা খাবে আবার বিক্রি করে তেল, পিঁয়াজ কিনে আনে। আবার ১৫ দিন পর রসুন কিনে আনে। ৫ টি হাঁস পালে তার জন্য চক থেকে ছোট বড় শামুক কুড়িয়ে আনে তা হাঁসকে খাওয়াবে। তারপর হাঁসে ডিম পারে, সে ডিম বিক্রি করে থাকে। আবার বাড়িতে বেগুন গাছ আছে। তা এক বাড়িতে দিলে তারা হয়ত এক বেলার খাওয়ার চাল দেয় তা দিয়ে দিন কাটায়। হেঞ্চি শাক, ন্যাটাপেটা, কচু শাক, লতি শাক, মৌলুবী কচুর ডাইগা-পাতা এসব খেয়ে থাকে। পাট শাক, সাজনা পাতা এসব ভাজি, ভর্তা খেয়ে থাকে। অন্যের ক্ষেতের থেকে আলু তুলে দিয়েছে তারা ১ মন আলু তুলে দিলে ৫ কেজি আলু দেয়। তারপর সে ক্ষেতের মধ্য থেকে বিলাতী আলু কুড়িয়ে এনে তা খেয়ে থাকে। এখনো তার ঘরে কুড়িয়ে আনা ছোট গোল আছে। গম, পায়রাও এভাবে অন্যের ক্ষেত থেকে কুড়িয়ে আনতেন এখন পায়রা, গম, কালাই চাষ কমে গেছে। গম,পায়রা কুড়িয়ে পাননা। জঙ্গল থেকে বিভিন্ন গাছ পালার পাতা ও বাঁশ পাতা কুড়িয়ে এনে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে। আবার কলার ফ্যাতরা কুড়িয়ে আনে। জঙ্গল কাটে যেমন, বিভিন্ন ছোট ছোট গাছ, আগড়া, বিষ কাটালী, ঢোল কলমী কেটে এনে শুকিয়ে চুলায় জ্বাল দেয়।
জ্যৈষ্ঠ মাস: ধান কাটার সময়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করলে ৩ মান ধান,১ টি শাড়ি, পেটিকোট, ব্লাউজ পান।
বাড়িতে তরকারি গাছ আছে তা থেকে তরকারি বিক্রি করে টাকা জমান। কলমি শাক বিক্রি করে লবণ, তেল কিনে আনে। আবার লতি বিক্রি করে ডাল কিনে আনে, মরিচ বিক্রি করে পেঁয়াজ, রসুন কিনে আনে। কলমী শাক, হেলেঞ্চা, ন্যাটাপেটা, দন্ডকলস, তেলাকচু, খারকন, কচু শাক তুলে খায়। এখনও তার ঘরে কুড়িয়ে পাওয়া ছোট গোল আলু আছে। পাটশলা কুড়িয়ে এনে রান্না করে। বাড়িতে এখন বিদ্যুৎ আছে, টর্চ লাইট আছে কেরসিন লাগে না। ইরি ধান কুড়িয়ে আনে, ছেই খুইটা এনে নিজেদের খাবারের চাল তৈরি করে। জমি থেকে ঝাড়– দিয়ে কুড়িয়ে আনে। শাপলা তুলে বিক্রি করে চাল আনে আবার নিজেরা খেয়েও থাকে। কচুর লতি তুলে বিক্রি করে বা কাউকে দিয়ে চাল আনবে। সে চাল খাবে। হাঁসের জন্য শামুক কুড়িয়ে আনে। বি আর ডিপিতে সঞ্চয় হিসাব খুলেছেন হাঁসের ডিম বিক্রি করে মাসে ১০০ শত টাকা সঞ্চয় দেন। এ পর্যন্ত ৫০০০/৬০০০ টাকার মত সঞ্চয় হয়েছে।
এ সময় ইরি ধান কাটে তা কুড়িয়ে এনে খায় ও জমা করে। তার নিজের পড়ার কোন কাপড় কিনতে হয় না। দাই কাজ করলে মানুষ খুশী হয়ে তাকে শাড়ি, পোটিকোট, ব্লাউজ দেন। জ্বালানী হিসেবে জমি থেকে নাড়া কুড়িয়ে আনেন। ধানের হুগলা বা চিটা কুড়িয়ে এনে জ্বাল দিবে। আম, কাঁঠাল, জাম, ডইয়া, খেজুর, ড্যাফল, লেচু এসব ফলও কুড়িয়ে এনে খায়। কাঁঠালের বীচি কুড়িয়ে এনে খায়। মানুষের জমি থেকে কুড়িয়ে আনা গোল আলু এখনো তার ঘরে আছে।
আষাঢ় মাস: আমন ধানের ক্ষেতের থেকে ঝরা ধান কুড়িয়ে এনে সিদ্ধ শুকনা করে ভাত খায়। এ মাসে খেয়ে আবার অন্য মাসেও খেতে পারে। শাপলা, গাঁঙ্গ কলা, আগের চেয়ে কমে গেছে, কলমী শাক তুলে নিজেরা খাবে ও বিক্রি করে তেল, লবণ কিনবে। আবার তোলা শাক বিক্রি করে পেঁয়াজ কিনে আনবে। বাড়ির তরিতরকারি বিক্রি করে হাতে কিছু টাকাও রাখতে পারে। নিজেদের খাবারেও সমস্যা হয় না।
এ মাসে প্রচুর শাক, সবজি হতে থাকে নিজেরা খায়, ইষ্টি বা আত্মীয় বাড়ি দিবে এবং বিক্রিও করতে পারে। এ মাসে বরসি ফেলে মাছ ধরে, খায়। মরা মাছ দিয়ে পিপুল পাতা দিয়ে রান্না করে খায়। পিপুল পাতা দিয়ে মরিচ বাটা খায়। মাছ কখনও কিনে খাবে না মাছ মেরে এক ধনী বাড়ি দিয়ে চাল এনেও খায়। কাউনের ইঞ্চা, তিলের মোতা, তিলের ডাটি, কলার ফ্যাতরা জঙ্গল কেটে শুকিয়ে জ্বালানি হিশেবে ব্যবহার করে থাকে। এ মাসে ভাসা কলমি, হেলেঞ্চা, হেঞ্চি, ন্যাটাপেটা, ডুরডুইলা এনে খায়। কচু শাক ও কুড়িয়ে এনে খায়। মিঠা আলুর ক্ষেত থেকে আলু তোলার পরও ক্ষেতে আষাঢ় মাসে আমন ধানের হালি ফালানোর পর যদি ক্ষেতে আলু থাকে তখন আলু কুশি বা গাছ উঠলে ঐ কুশি দেখে আলু খুইটা আনে।
শ্রাবণ মাস: শাপলা শালুক তুলে খাবে। এখন আর আগের মত শালুক খেয়ে থাকতে হয় না। তার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। তরিতরকারি বিক্রি করেও তেল লবণ, পিঁয়াজ কিনে আনে। কচুরলতি বিক্রি করে ঢেঁকিশাক ভাসা কলমী কুড়িয়ে আনে, শাপলা শালুক মরিচ এসব বিক্রি করে। হাঁসের খাদ্যের জন্য শামুক তুলে এনে খাওয়ায় তাতে হাঁসে ডিম পাড়ে। এ ডিম ও তরকারি বিক্রি করে টাকা হাতে রাখে কখনও কোন বিপদ আসে। সে জন্য হাতে টাকা রেখে দেয়। পাট ক্ষেত থেকে বাদু পাট ছিড়ে ফেলে দেয় তা কুড়িয়ে এনে শুকিয়ে জ্বাল দেয়। ঢেঁরস গাছ বুড়া হয়ে যায় তা কেটে শুকিয়ে জ্বাল দেয়। জঙ্গল কেটে গাছের শুকনা ডাল ভেঙ্গে এনে জ্বাল দেয়। কলার ফ্যাতরা কেটে আনে বাঁশের মাথার কোটা বেঁধে গাছের ডাল ভেঙ্গে এনে জ্বাল দেয়। এ মাসে মাছ মেরে এনে নিজেরা খেয়ে বিক্রি করে। এ সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এ মাসে মাছ পরিমাণে বেশী খাবে। টাটকা মাছ মেরে খাবে। মাছ, তরকারি, শাক-পাতা ও হাঁস মুরগির ডিম বিক্রি করে হাতে কিছু টাকা পয়সা করবে পরিবারে অন্যান্য খরচ চালায়। এ মাসে আউশ ধান কাটে সে ক্ষেত থেকে ধান খুইটা আনে। এ ধান থেকে দুই মাস ভাত খাবে।
ভাদ্র মাস: এ মাসে আউশ ধান কুড়িয়ে আনে। আবার অন্যের বাড়ি কাজ করে, ধান কাটা শেষ হলে ধান তোলার কাজ করে। তখন সে বাড়ি থেকে ধান দিবে। আবার নিজ বাড়িতে রান্নার জন্য খড় কুটা আনবে। আখ কেটে এ মাসে ভাঙ্গিয়ে গুড় তৈরি করে। ধনী বাড়ির মানুষের আখ ভাঙ্গানোর কাজে সহায়তা করলে আখের ছোবা জ্বাল দেওয়ার জন্য আনে। আবার আখ ভাঙ্গানোর কাজে সহায়তা করলে টাকাও দেয়। এ মাসে তাল কুড়িয়ে এনেও নিজেরা খেয়ে থাকে। আখের মাথা বা চারা হাটে বেচে দিলেও টাকা দেয় এসব করে টাকা হাতে জমায়। এ মাসে শাপলা, শালুক, মাছ এসব ধরে বা তুলে বিক্রি করবে। বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে এখন কেরোসিনকিনতে হয় না। সরিষার তেল, লবণ, পেঁয়াজ, হলুদ, রসুন কিনে আনে।
ঢেঁকিশাক, কলমি শাক বিক্রি করে বাজার এনে খেয়ে থাকে। আবার বাড়ির তরিতরকারি বিক্রি করে নারিকেল তেল ও সাবান কিনে থাকে। বাড়িতে বেগুন গাছ আছে বেগুন বিক্রি করে মুরগির বাচ্চার খাওয়াবে। হাঁসের খাবারে জন্য শামুক কুড়িয়ে আনে।
আশ্বিন মাস: শাপলা, শালুক, ডেপ, গেচু আগের চেয়ে কমে গেছে, মাছ এসব কুড়িয়ে খাবে। ডেপ শুকিয়ে চাল করে নাড়– তৈরি করে খাবে এবং বিক্রি করবে। দু’এক বেলা শালুক সিদ্ধ করে খাবে। মাছ শুঁটকি করে রাখবে পরে কাঁচা মাছ পাওয়া যায় না তখন শুঁটকি মাছ খাবে। কলমি শাক বিক্রি করে বা ডাল কিনে খাবে। বাড়ির তরকারি গাছের তরকারি বিক্রি করে সংসারের যাবতীয় খরচ করে, মরিচ গাছ থেকে মরিচ বিক্রি করে লবণ তেল আনবে। কচুর লতি বিক্রি করে সাবান, সোডা আনবে। আবার পান, সুপারি খাদ্য তাও শাক পাতা বিক্রি করে খায়। হেলেঞ্চা, কলমি ও ঢেঁকি শাক দু’তিন দিন তুলে বিক্রি করে টাকা জমায়। ঘরে কাঁঠালের বিচি কুড়িয়ে রেখেছিল তার ভর্তা করে খায় আবার ভাজি করে খাবে। জ্বালানী হিশেবে পাটখড়ি কুড়িয়ে আনে ।
কার্তিক মাস: এ মাসে ছোট ছোট মাছ বেশী পাওয়া যায় তা ধরে খাবে ও বিক্রি করে কিনে আনে। শাপলা, শালুক, ঢেপ তুলে আনে, বিক্রি করবে ও খাবে। এ দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন তেল, লবণ, হলুদও কিনে আনবে। ইরি ধানের কুশি থেকে ধান বের হয় সেই ধান কুড়িয়ে আনে। ধান কুড়াতে গেলে মানুষ বলে ঐ খানে একটা জমিতে অনেক ধান আছে সেখানে যাও। ঝরা ধান, আমন ধান ক্ষেত থেকে তুলে আনবে। তা থেকে ভাত করে খাবে। শালুক সিদ্ধ করে খাবে। হাঁস এর জন্য শামুক খুটে আনে তা খাওয়ায়। এ সময় হাঁস বেশী ডিম দেয় তা বিক্রি করে বাজার করে খাবে। জ্বালানীর জন্য পাটখড়ি, অন্যের বাড়ির পাট বেছে দিলে তারা খড়ি দেয়। সে খড়ি দিয়ে জ্বাল দেয়।
অগ্রহায়ণ মাস: এ মাসে নতুন ধান কাটে। সে ধানের মোথা জমি থেকে কুড়িয়ে আনে। চেইটার মোথা ও গোট তুলে আনে এতে চেইটার চাল হয়। তা দিয়ে খই ভেজে খায়। মোয়া করে বিক্রি করে। ইঁদুরের গর্তে থেকেও ধান তুলে আনে, মাটির থেকেও ঝাড়– দিয়ে ধান আনে, তা সিদ্ধ করে শুকনা করে রেখে দেয়। এ ধানের চাল পরেও খায়। এ ভাবে কুড়িয়ে তিন চার মণ ধান পায়। এ চালও চার পাঁচ মাস ধরে খেতে পারে। এ মাসে নতুন নতুন শাক পাওয়া যায়। বতুয়া শাক তুলে বিক্রি করে বাজার সদায় করবে। এ মাসে শুধু ডাল, তেল, লবণ হলুদ কিনবে। সাথে সাবান সোডাও কিনে আনবে। এ মাসে নিজেরাও বিভিন্ন ধরণের শাক খাবে। ন্যাটাপেটা, বতুয়া, দন্ডকলস এরকম অনেক শাক খেয়ে থাকে। জলপাই খুটে এনে টক খাবে? কামরাঙ্গা ভাজি খাবে। এ মাসে ধানের নারা কুড়িয়ে এনে রেখে দিবে, সে নারা চার মাস নাগাদ জ্বাল দিবে। মানুষকে এক বোঝা নাড়া এনে দিলে কাছ থেকে আনলে ১৫৬ টাকা দেয়। দুর থেকে আনলে ২০ করে দেয়। এখন মানুষকে নাড়া এনে দেন না কারণ ফাল্গন মাসে কুমার হাড়ি পাতিল পোড়ানোর জন্য বাড়ি থেকে নাড়া কিনে নেয়। এক পালা নাড়া জমাতে পারলে ১০০০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারে। এ ভাবে নারা বিক্রি করে অকেন টাকা জমিয়েছেন। চৈত্র মাসে কাপড় চোপড় সস্তা থাকে তখন পরিবারের অন্য সদস্যরা সবাই পরণের কাপড়, জামা, ছায়া, বাচ্চাদের কাপড় কিনবে। দুই ঈদে কাপড় কিনবে।
পৌষ মাস: আগের শুটকি মাছ করা ছিল তা খেয়ে থাকে। মূলা, গোল আলু কুড়িয়ে এনে তা দিয়ে খাবে। বাড়িতে তরকারির গাছ, গাছের তরকারি খাবে। আবার তরকারি বিক্রি করে বাজার করে পুদিনা, মূলা শাক কুড়িয়ে এনে খাবে। ধনী কৃষকদের আলু তুলে দিলে তারা আলু দেয়, এভাবে আলু তুলে বিক্রি করে তেল, লবণ, হলুদ, পেঁয়াজ, কিনে আনে। সরিষা শাক তুলে খাবে ও বিক্রি করবে। খেসারি শাকও তুলে এনে খাবে ও বিক্রি করবে। আবার বাড়ির তরকারী বিক্রি করে কেরোসিন, নারিকেল তেল ও সোডা, সাবান কিনে আনে। এ মাসে ধানের নারা কুড়িয়ে আনে আবার ধানের মোতাও তুলে আনে এগুলো দিয়ে জ্বাল দেয়। আবার বাঁশের পাতা ও গাছের পাতা ঝাড়– দিয়ে এনে জ্বাল দেয়।
মাঘ মাস: গোল আলু কুড়িয়ে এনে বিক্রি করবে, নিজেরা খাবে। আলু বিক্রি করে বাজার করবে। এ মাসে কুড়িয়ে পাওয়া শাক ও মাস কলই ডাল দিয়ে খিচুড়ি খাবে। সরিষা কুড়িয়ে এনে রেখে দেয়, ভর্তা খাওয়ার জন্য আবার তেল ও তৈরি করে খাবে। বতুয়া, হেঞ্চি, গিমা, ন্যাটাপেটা এসব ধরণের শাক তুলে খেয়ে থাকে। খেসারী, মটর ও ছোলা শাক তুলে খাবে তারপর বিক্রি করে বাজার করবে। তেল, লবণ, পেঁয়াজ, হলুদ কিনবে। ঘরে শুটকী থাকে তা দিয়েও মূলা, আলু দিয়ে, তরকারি খায়। আবার গাছের মিষ্টি কুমড়া ও লাউও খেয়ে থাকে। বাঁশ পাতা, নারা, গাছের পাতা এসব কুড়িয়ে এনে জ্বাল দেয়। আবার গাছের ডাল পালা কুড়িয়ে বিক্রি করে থাকে। সরিষার ভুষি কুড়িয়ে আনে মানুষ গরুর জন্য কিনে নেয়।
ফাল্গুন মাস: মরা বাঁশ, সরিষা, ভুসি কুড়িয়ে রেখে দেয় তা দিয়ে জ্বাল দেয়। কচুরমুখী তুলে পাশের বাড়ি দিলে হয়তো খুদ দেয় বা চাল দেয়। খুদও ভাত রান্না করে খাবে। শাক পাতা তুলে নিজেরা খাবে। কচুরমুখী দিয়ে ডাল রান্না করে খায়। এ মাসে কিছু চাল ঘরে থাকে। ভাল খাবার দিতে পারলে হাঁস সারা বছর ডিম দেয় না। এ সময় হাঁস মুরগীর দাম খুব বেশী থাকে। তাই হাঁস, মুরগী বিক্রি করে এবং কিছু টাকা হাতে রাখে। এ মাসে খেসারি, মটর, কলই, হাল ক্ষেতে আলু খুটে আনে। বরইও খুটে এনে খেয়ে থাকে। হাল ক্ষেতে গেচু, হালুক, শামুক কুড়িয়ে আনে। শামুক এনে বিক্রি করে আবার হাস মুরগীরেও খাওয়ায়। শামুক বিক্রি করেও বাজার করতে পারে।
চৈত্র মাস: জমির ক্ষেতে আলু খুটে, ঘেচু ও শামুক খুটে আনে। বর্তমানে ঘেচু কমে গেছে। ঝিনুক ও খুটে হাঁসকে খাওয়ায়। শামুকের খোলা একসাথে করে বিক্রি করে, তা দিয়ে হয়ত পান সুপারি বা সাবান, সোডা কিনে। এখন শামুক বিক্রি করতে পারে না কারণ শামুক আগের চেয়ে কমে গেছে । শুধু নিজের হাঁসের খাবারের জন্য কুড়িয়ে আনেন। এভাবে সংসার চালায়। ধানের গোছা, সরিষায় ভুসি কুড়িয়ে এনে জ্বাল দেয়। মিষ্টি আলু কুড়িয়ে আনে তার তরকারী ও সিদ্ধ করে খায় এবং বিক্রি করে বাজার আনে।
মন্তব্য: রহিমা বেগমের পরিবার আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছল হয়েছে। তার ঘরে এখন বিদ্যুৎ আছে ফ্যান আছে, ইষ্টিলের আলমালী, ড্রেসিং টেবিল আছে। তাকে এখন আর আগের মত না খেয়ে কষ্ট করতে হয়না। তিন বেলা ভাত খেতে পারেন। তিনি কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য দিয়ে তার পরিবারকে টিকিয়ে রেখেছেন। বাজার থেকে শাক সবজি কিনতে হয় না। নিজের সবজি বাগান থেকে পরিবারের শাক সবজির যোগান দেন ।