বিটিবেগুন (বিকৃত বেগুন) পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ঝুঁকি


কৃষক আক্কাস আলীর গান

বাংলাদেশের ভাই বোনেরা শোনেন মন দিয়া
দেশী জাতের বেগুনের স্বাদ, না যাইও ভুলিয়া রে
আমার সোনার ভাই বোন রে।।

কামরাঙ্গা, ভোলানাথ, আর কাঞ্চন বারমাসে
ও ভাই বোন কাঞ্চন বারমাসে
কাটা চিকন ডিম বেগুনি তরকারী ইলিশ মাছেরে।।

শুটকী মাছে লম্বা বেগুন, শৈল বোয়াল রুপিয়াজী
ও ভাই বোন শৈল বোয়াল রুপিয়াজী
আমার দেশী জাতের বেগুনে নাই
কোন টেকনোলজি।।

দেশী বেগুন মোদের সম্পদ বাড়ায় মোদের মান
ও ভাই বোন বাড়ায় মোদের মান
কোম্পানিকে দিয়া দিলে যাবে মোদের প্রাণ রে।।

বিটি বেগুন চাই না মোরা, দেশী বেগুন চাই
দেশী বেগুন রক্ষার দাবী সরকারকে জানাই ও রে ।।

২. ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন করতে গিয়ে গাছটিকেই বিষাক্ত করে দেয়া হচ্ছে

বিটি বেগুন ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার কথা বলে প্রবর্তন করতে চাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতিতে যে অন্যান্য রোগ-বালাই রয়েছে তার থেকে রেহাই পাবার কোন উপায় এই প্রযুক্তিতে নাই। বেগুনে আরও অন্তত ৭টি পোকা ও রোগ বালাই রয়েছে। বিটি প্রযুক্তি সব ধরণের রোগ থেকে রক্ষা করবে না, বরং নানা ধরণের সংক্রমণ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি করবে।

ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য বেসিলাস থুরিনজেনিসিস নামক ব্যাক্টেরিয়ার জিন বেগুনের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়েছে, যা গাছেই বিষ উৎপাদন করে পোকা মেরে ফেলবে, কিন্তু অন্য কোন পোকার আক্রমণ রোধ করবে না। পোকা লাগে বলে ফলনের ক্ষতির যে যুক্তিতে বিটি বেগুন প্রবর্তন করা হচ্ছে, তার কোন ভিত্তি নেই। বিটি বেগুনের উদ্দেশ্য হিশেবে বলা হয়েছে বেগুনের ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। বিটি বেগুনের পক্ষে যুক্তি হিশেবে দেখানো হচ্ছে যে ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকার কারণে ৫০ থেকে ৭০% বেগুনের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে কৃষকরা এক মৌসুমে ৮০ বার কীটনাশক প্রয়োগ করে যার কারণে বেগুন বিষাক্ত হয়ে যায় (Modified Brinjal Found Okay, The Daily Star, ১৭ সেপ্টেম্বর,২০১৩) এইসব তথ্যের পক্ষে কোন প্রমান দেয়া হয় নি।

সমস্যা হচ্ছে পোকার আক্রমন সম্পর্কে বলা হচ্ছে কিন্তু কোন জাতের বেগুনে পোকার এই উপদ্রব হয় তা বলা হয় নি। স্থানীয় জাতের বেগুনে পোকার আক্রমণ তেমন তীব্র হয় না, এবং কীটনাশকও দিতে হয় না, কারণ এসব বেগুনের মনোকালচার বা একাট্টা চাষও হয় না। দেশীয় জাতের বেগুনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে। যেসব স্থানীয় জাতের বেগুন নিয়ে বিটি করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এই পোকার আক্রমণ তেমন তীব্র নয়। বারির নিজস্ব গবেষণায় দেখা গেছে স্থানীয় জাতের বেগুনে পোকার আক্রমণ খুব কম হয়। যেমন ঝুমকি বেগুনে পোকা খুবই কম লাগে, মাত্র ১ - ১০% (Highly Resistant) খটখটিয়াও মোটামুটি কম লাগে, ২০% (Fairly Resistant)। কিছু বেগুন যেমন ইসলামপুরি ২১ - ৩০% পোকার সম্ভাবনা আছে (Tolerant) এবং ইরি বেগুন একটু বেশী লাগে ৪১% এর বেশী। রোগ নিরাময় যদি উদ্দেশ্য হয় তাহলে হাইব্রিড বেগুনে কেন বিটি করা হোল না ?

বেগুনে শুধু একধরনের পোকার আক্রমণ হয় না, আরো অনেক ধরণের পোকা বা রোগ বালাই হয়। যদিও ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকার আক্রমনকেই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিটি করার কারণে শুধু ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকার আক্রমণ বন্ধ করা যাবে, অন্য রোগ বালাইয়ের আক্রমণ ঠিকই থাকবে। অথচ এই সব পোকার ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত সম্বন্বিত কীট ব্যবস্থাপনা (Integrated Pest Management) বা আইপিএম পদ্ধতিতে রোধ করা সম্ভব এবং এতে কোন প্রকার স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি নেই। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান কীটতত্ত্ববিদ যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড এন্ডো প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে জানিয়েছেন যে আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষুদ্র কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। আইপিএম ইতিমধ্যে কৃষক পর্যায়ে ব্যবহার করে ভাল ফল পাওয়া গেছে। তাহলে সরকারের কৃষকের প্রতি দরদ থাকলে উচিত সমন্বিত কীট ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া, বিকৃত বেগুন নয়। তাছাড়া বিটি প্রযুক্তি ব্যবহারের কীট প্রতিরোধক হয়ে উঠতে পারে, যা বিপজ্জনক। তাহলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তার জন্যে নিশ্চয়ই আমাদের বিজ্ঞানীরা প্রস্তুত নন। মনে রাখতে হবে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং ফসলের জীবন্ত প্রাণে (বীজ) করা হচ্ছে। এই সক্রিয় বীজ নিজের মতো করে আরো কি পরিবর্তন ঘটাবে তা বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারে নি। সে কারো চাকুরি করে না যে নির্দেশ মতো শুধু ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকা মেরেই চুপ করে বসে থাকবে।

৩. স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বিটি বেগুনের গবেষণা শুরু থেকে প্রতিবাদ করা হচ্ছে। বারির বিজ্ঞানীরা কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকির গবেষণা ছাড়াই ঘোষণা দিচ্ছেন যে মানব দেহে কোন ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না। অথচ উন্নত বিশ্বে (নিউজিল্যান্ডে) পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের যকৃতের ক্ষতি সাধন করতে পারে। বিজ্ঞানীদের স্বাধীন গবেষণায় দেখা গেছে বিটি বেগুন মানুষের খাদ্য হিশেবে মোটেও উপযুক্ত নয়। জিএম সবজিতে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধক মার্কার থাকে। ফরাসী বিজ্ঞানী Professor Gilles-Eric Seralini বিটি বেগুন নিয়ে বিভিন্ন প্রাণী গবেষণা করে দেখেছেন যে বিটি বেগুন সব্জির মধ্যে এমন প্রোটিন তৈরি করে যা এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধক, অর্থাৎ এন্টিবায়োটিকে কোন কাজ করবে না।ক্যালোরীর দিক থেকে ও বিটি বেগুনে ১৫% কম ক্যলোরী পাওয়া গেছে। তাছাড়া লিভারের সমস্যা এবং রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাও দেখা গেছে। সেরালিনি গবেষণায় দেখিয়েছেন বিটি বেগুনের উন্মুক্ত চাষের কারণে প্রজাপতি ও অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি হবে না, এমন কোন গবেষণা করা হয় নি। সাধারণ বেগুনের জাতের ওপর পরিবেশ দুষণ ঘটতে পারে। বিটি টক্সিন soil bacterium Bacillus thuringenesis থেকে নেয়া হয়েছে, কিন্তু এই বিটি টক্সিন স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্যে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রাণীদেহে অজানা অনাকাঙ্খিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এলার্জি হতে পারে।

বেগুন নারীদের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি সব্জি। বিটিবেগুনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তাই নারীদের জন্যে, বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্যে, হুমকি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

৪. জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করে গবেষণা হয়েছে কিনা নিশ্চিত নয়

বিটি বেগুন বা যেকোন জিএমও উদ্ভিদ পরীক্ষামূলক চাষ করতে হলে জৈব নিরাপত্তা এলাকা হিসেবে গ্রীণহাউজ করার কথা থাকলেও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) যে ছয়টি এলাকায় পরীক্ষা করেছে তার সবখানে গ্রীণহাউজ ব্যাবস্থা মেনে চলা হয়েছে কিনা জানা যায় নি। বারির মাঠ পর্যায়ের গবেষণা কেন্দ্রে তাদের নিজস্ব মাঠেই এই গবেষণা করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় না গবেষণার সময় গ্রীণহাউজ ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা। বিকৃত বীজের ঝুঁকি এড়াবার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে গবেষণার ক্ষেত্রে যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে তার সঙ্গে এই ধরণের গবেষণা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিটিবেগুন বারির উন্মুক্ত মাঠে পরীক্ষামূলক চাষ করার কারণে বিটিবেগুনের পরাগরেণু অন্য কোন বেগুন বা উদ্ভিদ সংক্রামিত হয়েছে হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাও গবেষণা কর্মকর্তারা বলতে পারেন নি। ফলে যে কোন জিএমও শস্যের চাষের সংক্রমণের যে আশংকা থাকে, গবেষণা পর্যায়ে বিকৃত বেগুনের ক্ষেত্রেও তা ঘটে যাবার সম্ভাবনা পুরামাত্রায় থেকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কৃষক পর্যায়ে ছাড়পত্র দেয়া ভয়ানক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৫. অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়, তবুও কৃষক পর্যায়ে চাষের জন্য চারা বিতরণ হয়েছে

বিটি বেগুন অনুমোদনের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়নি। পত্র পত্রিকায় পরিস্কারভাবে বলা হয়ছিল যে এই বেগুন ছাড় দেয়ার আগে যারা এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন এবং সংশ্লিষ্ট তাদের সাথে মতবিনিময় করা হবে। জিএমও ফসল ছাড় দিতে হলে যে ধরণের আইনী কাঠামো দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির ব্যাপারে নিরাপত্তা মুলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন সে দিকেও সরকার এগোয় নি। যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠিত কোডেক্স এলিমেন্টারিয়াস কমিশনের নির্ধারিত মানে (স্ট্যান্ডার্ডে) একটি স্বাধীন গবেষণার মাধ্যমে এই বেগুন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না তা নির্ধারণ করা বাধ্যতামুলক, কিন্তু সেটা করা হয় নি।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে বালাদেশের নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর তৃতীয় অধ্যায়ে খাদ্য দূষণ সম্পর্কিত শর্তাবলীতে ২১(৩) অনুচ্ছেদ মোতাবেক “বংশগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ ও আমদানি করিতে পারিবেন না”। এই আইন অনুযায়ী বিটিবেগুনের উৎপাদন নিরাপদ খাদ্য আইন পরিপন্থি।

৬. পরিবেশের ঝুঁকির সম্ভাবনা

বহুজাতিক কোম্পানির সাথে যুক্ত নয় এমন ১১ জন স্বাধীন বিজ্ঞানী, যাদের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্য গবেষকসহ জিএম খাদ্য নিয়ে দির্ঘদিন গবেষণা করেছেন এমন বিজ্ঞানীরা ২১ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি বেগুনের জিন পরিবর্তন করে বিটিবেগুন নামে যে সবজি কৃষক পর্যায়ে চাষের অনুমোদন সরকার দিতে যাচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগের। কেননা বিটিবেগুন বা জেনেটিকালি মোডিফাইড বেগুনের সুদুরপ্রসারী পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। আর এ কারণে ভারত ও ফিলিপাইনে এ বেগুন কৃষক পর্যায়ে চাষের অনুমোদন পায়নি। কিন্তু বাংলাদেশে এই বেগুন ছাড় দিলে এটি রফতানি হয়ে অন্য দেশে যাবে এবং ভোক্তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশের বাজারে এই জিএম সবজি ছাড়লে তার ক্ষতি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। বিশ্বের প্রখ্যাত ১১ জন বিজ্ঞানী তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি এই বেগুনের অনুমোদন না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এগারো জন বিজ্ঞানী হচ্ছেন 1. Dr. David Schubert,, Salk Institute for Biological Studies, US, 2. Dr. Michael Antoniou, Professor Gene Expression and Therapy Group, King’s College London School of Medicine Expertise in gene structure and function, and transgenic biotechnologies including human gene therapy. 3. Susan Bardoczu, DSc. Professor Human Nutrition, GMO expert of the Ministry of Rural Development of Hungary (rtd), 4. Dr. Pushpa M. Bhargava Former Vice Chairman, National Knowledge Commission; Former Member, National Security Advisory Board and Founder Director, Centre for Cellular and Molecular Biology, Hyderabad 5. Dr. Judy Carman Senior Epidemiologist and an Adjunct Associate Professor at Flinders University in South Australia, 6. Professor Jack A. Heinemann, Centre for Integrated Research in Biosafety; University of Canterbury, 7. Professor Hans R Herren World Food Prize Laureate, co Chair of the International Assessment of Agricultural Knowledge, Science and Technology for Development (IAASTD) and member of the US National Academy of Science, 8. Dr. Angelika Hilbeck Senior Scientist & Lecturer Swiss Federal Institute of Technology, Integrative Biology, Zurich, Switzerland. 9. Dr. Robert Mann Senior Lecturer in Biochemistry, University of Auckland (rtd) and Long-serving member NZ Govt. Toxic Substances Board (rtd.) 10. Professor Arpad Pusztai F.R.S.E. (Fellow of the Royal Society, Edinburgh) Protein chemist and biochemist (rtd.) and 11. Professor Gilles-Eric Seralini Head of Risk Group (MRSÓ-CNRS), Lab Biochemistry & Molecular Biology, University of Caen, France, international expert on GMOs and pesticides.

বারির উন্মুক্ত মাঠে পরীক্ষামূলক চাষ করার কারণে বিটি বেগুনের পরাগরেণু অন্য কোন বেগুন বা উদ্ভিদ সংক্রামিত হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাও গবেষণা কর্মকর্তারা বলতে পারেন নি। ফলে যে কোন জিএমও শস্যের চাষের সংক্রমণের যে আশংকা থাকে গবেষণা পর্যায়ে বিকৃত বেগুনের ক্ষেত্রেও তা ঘটে যাবার সম্ভাবনা পুরামাত্রায় থেকে যাচ্ছে। বিটিবেগুনের চাষ পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকী সৃষ্টি করতে পারে বলেই ভারত ও ফিলিপাইনে গবেষণা কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বিটিবেগুনের এককাট্টা চাষ হলে প্রাণবৈচিত্র ধ্বংস হবে। বাংলাদেশ এবং এর আশ পাশের দেশে দশটিরও অধিক আবাদী এবং বন-কুটুম বেগুন প্রজাতি রয়েছে যাদের মধ্যে মুক্ত পরিবেশে পর-পরাগায়ন ঘটে। বিকৃত বিটিবেগুনের পরাগ রেণু দ্বারা এ সকল ঘনিষ্ঠ বেগুন প্রজাতির সাথে পর-পরাগায়নের ফলে ভয়ানক আগাছার জন্ম হতে পারে। ফলে ক্ষেতে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হবে।

বিটিবেগুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরুর খবর প্রকাশিত হবার পর থেকেই নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে আরো অনেকে সমাজের নানান দিক থেকে জিএমও প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। গঠিত হয় জিএমও বিরোধী গণমোর্চা (Peoples Coaltion against GMOs in Bangladesh)। জিএমও বিরোধী গণমোর্চা বিকৃত বেগুন প্রবর্তনের প্রচেষ্টায় উদ্বেগ জানিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছে।

এক. জিএমও ফসল প্রবর্তনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিটিবেগুনের গবেষণায় এই ধরণের বিপজ্জনক টেকনলজি প্রবর্তনের ক্ষেত্রে আগাম হুঁশিয়ার থাকার নীতিমালা Pre-cautionery Principles) মেনে চলা হয়েছে কিনা প্রমাণ মেলে নি;

দুই. স্বাস্থ্য ক্ষতি সংক্রান্ত কোন গবেষণা বাংলাদেশে হয় নি। ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণের ক্ষতি হবে না এই দাবি ভিত্তিহীন।

তিন. পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্রের ক্ষতি সম্পর্কে কোন মূল্যায়ন বা হুঁশিয়ারিই নাই। অথচ প্রাণবৈচিত্র সংক্রান্ত নানান আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ যা করতে বাধ্য। কারণ বাংলাদেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এবং তা বলবৎ করবার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দাবি করা হয়েছিল এইগুলো নিশ্চিত না হয়ে যেন চাষের ছাড়পত্র দেয়া না হয়। হলে সেটা হবে দেশ ও দশের স্বার্থ বিরোধী কাজ। কোন দায়িত্বশীল সরকার এ কাজ করতে পারে না। অথচ দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরের প্রতিবাদ সত্ত্বেও কৃষক পর্যায়ে সীমিত চাষের জন্যে শর্ত দিয়ে ইতোমধ্যেও চারাও বিতরণ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই সীমিত চাষ পর্যবেক্ষণ কিভাবে হবে ? চাষের পর বাজারজাত হলে মানুষ কিভাবে জানবে? সরকার ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন তারা বিটিবেগুনে কোন লেবেল দেবেন না। তাহলে যারা বিটিবেগুন চান না তারা কিভাবে সাধারণ বেগুন আর বিটিবেগুন আলাদা করবেন?

আমাদের দাবীঃ

এক. বাংলাদেশে বৈচিত্র্যে পুষ্টিতে, স্বাদে, গন্ধে ও পরিমানে বেগুন অনেক, বিষাক্ত বেগুন গবেষণা ও চাষের কোন যৌক্তিকতা নাই। অবিলম্বে বন্ধ করুন

দুই. বিটিবেগুনের চারা বিতরণ ও চাষ প্রাণ ও পরিবেশের মারাত্মক হুমকি, অবিলম্বে বিটিবেগুনের চাষ বন্ধ করা হোক; যেসব কৃষক চারা নিয়েছেন তাদের কাছে অনুরোধ দেশের ও কৃষির সর্বনাশ করবেন না।

তিন. সরকার ও জনগণের টাকায় যেসব জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের কৃষকের স্বার্থে কাজ করতে হবে, বহুজাতিক কোম্পানির নয়।

চার. দেশীয় বেগুন রক্ষার জন্য কৃষকদের সব রকম সুবিধা দিতে হবে।

নয়াকৃষি আন্দোলন ও জিএমও বিরোধী গণমোর্চার পক্ষে প্রস্তিকাটি উবিনীগে কর্মরত কয়েকজন মিলে তৈরি করেছেন। তাঁরা হলেন: ফরহাদ মজহার, ফরিদা আখতার এবং ড. এম এ সোবহান। এছাড়া আরও অনেকে পুস্তিকা তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।