জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবী মেনে নিয়ে সংশোধনী আনুন


জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর থাকার বিধান রেখে গত ৮ জুলাই, ২০১৮ জাতীয় সংসদে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮’ বিভক্তি ভোটে পাস হয়েছে। এই সংশোধনীতে ৫০ টি নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি, এবং নির্বাচন পদ্ধতিতে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। শুধু মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২৫ বছরের জন্যে। সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা হয়েছে।

৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকা সত্ত্বেও সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বছরখানেক হাতে থাকতেই সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ ২৫ বছর বাড়ানো হয়েছে, যার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। এতো বড় সময় ধরে মেয়াদ বৃদ্ধি এর আগে আর কখনো হয়নি।

তারই প্রতিবাদে গত ২৫ জুলাই, ২০১৮, বিকেল ৩টায় নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার আয়োজনে বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে “জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবী মেনে নিয়ে সংশোধনী আনুন” দাবীতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বহ্নিশিখা জামালী, সভাপতি, শ্রমজীবি মৈত্রী। তাসকিন ফাহমিনা, প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। ড. ফিরোজা বেগম, ওমেন ফর ওমেন। সাবিনা ইয়াসমিন, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ। মাকসুদা খাতুন, নারীপক্ষ। প্রফেসর তাসনিম ফেরদৌস। সাইদা আখতার কুমকুম, কো-অডিনেটর, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা সহ আরও অনেকে। সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী আন্দোলনের নেত্রী ফরিদা আখতার। সভা পরিচালনা করেন সীমা দাস সীমু।

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে ১৯৮৭ সাল থেকে নারী নেত্রীবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে দাবী জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, নারীদের জন্যে এই আসন বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে করা হয়েছিল। শুরুতে এই আসন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বারা মনোনীত হলেও ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৪৬ বছরের অভিজ্ঞতায় বর্তমানে নারীদের অবস্থা সে পর্যায়ে নেই। নারীরা নিজেরাই নির্বাচন করে জনগণের ভোট নিয়ে এই আসনে বসতে পারেন। আসন সংরক্ষণের অর্থ হচ্ছে, এই আসনে প্রতিদ্বন্দিতা কেবল নারীদের মধ্যে হবে।

জাতীয় সংসদে ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১৯৭৩ সালে ১৫টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিধান রাখা হয় সংবিধানে ৬৫(৩) ধারায়। এই আসনে কোন পরিবর্তন আনতে হলে তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক. আসন সংখ্যা, ২. মেয়াদ ও ৩. নির্বাচনী পদ্ধতি। এই পর্যন্ত যা পরিবর্তন আনা হয়েছে তা আসন সংখ্যা এবং মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে হয়েছে, কিন্তু নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে হয় নি, যা নারী আন্দোলনের প্রধান দাবী ছিল।

reserve seats

বক্তারা বলেন, আমরা বিশেষভাবে দুঃখিত যে এই সংসদে নারী স্পীকার, এড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে নারীর জন্যে এতো পশ্চাদপদ একটি বিল পাশ হোল। এই সংসদে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, সকলেই নারী। আমাদের দেশের প্রধান মন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নের জন্যে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। সেই প্রধানমন্ত্রীর আমলে নারীর জন্যে এমন একটি পশ্চাদপদ বিল পাস হওয়া লজ্জাজনক। মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয় অবিলম্বে এই বিলটির সংশোধনী আনার জন্য উপস্থিত নারী সংগঠন একত্রে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করবেন।

মতবিনিময় সভায় নারীদের দাবী:

১. অবিলম্বে এই বিলটির সংশোধনী এনে আসনের মেয়াদ ১০ বছর করা হোক।

২. সরাসরি নির্বাচনের বিধান রাখতে হবে।

৩. সাধারণ আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে ২০% নারীদের দিতে হবে।

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।