মানকচু
Saturday 19 November 2016অন্যান্য স্থানীয় নাম: মান, মানক, মহাপত্র ও ছত্রপত্র
বৈজ্ঞানিক নাম : Alocasia macrorrhiza/ Alocasia indica পরিবার : Araceaeপ্রধান ব্যবহার :খাদ্য এবং ওষুধি
অন্যান্য ব্যবহার :সাধারণ ব্যবহার: কন্দ তরকারী, পাতার ডাঁটা শাক হিশেবে ব্যবহৃত হয়। পাতা বর্ষাকালে গ্রামে ছাতার মতো ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুন
মানকচু বর্ষজীবী গুল্ম। কন্দ থেকে নতুন গাছ জন্মে। বায়ব কান্ড দৃঢ়, ১-৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কন্দ থেকে পাতা বের হয়। পাতা ত্রিভুজাকৃতি। ফুল গন্ধযুক্ত। ফল বেরী।
বিস্তার: মানকচুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর আদি নিবাস। এখান থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে রান্নার সবজি হিশেবে খাওয়া হয়ে থাকে। চীন এবং গ্রীস্মমন্ডলীয় এশিয়া থেকে ভারত, বার্মা, ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে জাপান, হাওয়াই মালেশিয়া, ফিলিপাইন, পর্যন্ত বিস্তার ঘটে। ঐতিহাসিক কালে মিশরে এবং ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা তারপর আফ্রিকা, গিণি উপকূল এবং ক্যারাবিয়ান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে মানকচু পাপুয়া নিউগিনিসহ প্যাসিফিক অনেক দ্বীপপুঞ্জে একটি প্রধানতম খাদ্য। সমগ্র বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পুকুর পাড়ে, বাড়ির আনাচে কানাচে এবং প্রাচীরের পাশে লাগানো হয়। তবে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় না।
ফুল ও ফল: শীতের শুরুতে ফুল ও ফল ধরে।
ব্যবহায্য অংশ: কন্দ, ডাঁটা এবং পাতা।
রাসায়নিক উপাদান: গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, কামপেস্টেরল, কোলেস্টেরল, সিটোস্টেরল, ট্রাইগ্লেোকাইটিন এলকালয়েড বিদ্যমান।
মান কচুতে রাসায়নিক উপাদান: ব্যবহার উপযোগী ১০০ গ্রাম মানকচুতে রয়েছে:
◙ শক্তি : ১১৬ কিলোক্যালো
◙ কাবোহাইড্রেট : ২৭.৫২ গ্রাম
◙ ভিটামিন বি৬ :২২.৬২%
◙ ভিটামিন বি১ : ০.০৯৯ মিলিগ্রাম
◙ কপার : ০.১৭৯ মিলিগ্রাম
◙ ম্যাঙ্গানিজ : ০.৩৯৮ মিলিগ্রাম
◙ ভিটামিন-ই : ২.৪৮ মিলিগ্রাম
◙ পটাশিয়াম : ৬১৫ মিলিগ্রাম
◙ ট্রিপটোফেন :০.০২৪ মিলিগ্রাম
◙ Threonine : 0.072 মিলিগ্রাম
◙ Isoleucine : 0.056 মিলিগ্রাম
◙ Leucine : 0.115 মিলিগ্রাম
◙ লাইসিন : ০.০৭ মিলিগ্রাম
মানকচু এমন একটি উদ্ভিদ যাতে প্রচুর খনিজ পদার্থ রয়েছে। মানকচুতে-ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনিসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, দস্তা, কপার, প্রোটিন, বিটা-ক্যারোটিন, থায়ামিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-বি২, ভিটামিন-বি৬সহ প্রভুত খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ হবার কারণে এর পুস্টিমান যথেষ্ঠ উন্নত।
মানকচুর ওষুধি ব্যবহার:
◙ ফুলা এবং ব্যথা স্থানে পাতা গরম করে সেঁক দিলে ব্যথা সারে।
◙ মানকচুর ক্ষার সৈন্ধব লবন ও সরিষা তেলের সাথে জিহ্বায় ঘষলে ঘা নিরাময় হয়।
◙ মানকচুর শাকে প্রচুর লৌহজ উপাদান এবং ভিটামিন রয়েছে বিধায় শরীরে রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়ক।
◙ প্লীহা উদর জনিত শোথে ৬ গ্রাম পাতা, ১২০ মি.লি. গরুর দুধসহ সেবনে নিরাময় করে।
◙ ১০ গ্রাম মানকচু চূর্ণ ১ কাপ গরম দুধের সাথে সেবন করলে জন্ডিস ভালো হয়।
মান কচুর আরও ওষধি ব্যবহার রয়েছে সেগুলো হচ্ছে:
মানকচুতে প্রচুর পরিমানে পচাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ভিচামিন-এ, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, ছাড়াও রয়েছে প্রোটিন এবং ফাইবার রয়েছে যা মানব শরীরে প্রভূত উপকার সাধন করে থাকে। মানকচুর ওষুধি ব্যবহার নিম্নে তালিকা বদ্ধ করা হলো:
◙ ক্যান্সার প্রতিরোধে: মানকচুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেমন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, অন্যান্য ফেনোলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমে ফুসফুসে, মুখে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার শক্তি যোগাতে যথেষ্ঠ অবদান রাখে।
◙ বাত বা রিউম্যাটিয়েড নিয়ন্ত্রণ: মানকচুর ভিটামিন বি৬, বাত, বাতের তিব্র ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া পেশী ও জয়েন্টের ব্যথা নিবারণে উপকারী।
◙ হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: মানকচুতে যথেষ্ঠ পরিমানে পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ থাকায় শিরা, ধমনী ও রক্তনালী সমুহে প্রবাহিত রক্ত চাপের চাপকে প্রশমিত করে। আর রক্তনালীর রক্তপ্রবাহের চাপ নিয়ন্ত্রণ থাকলে হার্টের উপরে চাপ কম পড়ে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
◙ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মানকচুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ও ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
◙ পেশীর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে: বিভিন্ন কারণে শরীরের পেশী সংকোচন হয়ে থাকে ফলে শরীরের বিভিন্ন ধররণর ব্যথা যন্ত্রণা হতে পারেঅ সেক্ষেত্রে মানকচুর পটাশিয়াম পশী সংকোচনে বাধা সৃষ্টি করে সুস্থতা প্রদান করে।
◙ খাদ্য হজমশক্তি বৃদ্ধিতে: খাদ্য হজম ঠিক না হলে, পেটে গ্যাস হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, ডায়রিয়া হয়। এছাড়া খাদ্য ঠিকমতো হজম না হবার কারনে নানা রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মানকচুতে উচ্চমানের ফাইবার রয়েছে যা খাদ্য হজমক্রিয়া যথেষ্ঠ সহায়তা করে।
◙ স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: গবেষণায় দেখা গেছে থায়ামিন যাকে ভিটামিন বি১ বলা হয়ে থাকে সেটা কমে গেলে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। মানকচুতে উৎকৃষ্ট মানের থায়ামিন তথা ভিটামি বি১ রয়েছে যা স্মৃতিশক্তিকে দীর্ঘস্থায় হতে সাহায্য করে।
◙ মানকচুতে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমূহের মধ্যে বিটা-ক্যারোটিন এবং স্রাইপটোজ্যানথিন (cryptoxanthin) রয়েছে চোখের একদিকে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে অন্যদিকে চোখে ছানি পড়তে বাঁধা সৃষ্টি করে।
◙ দাতেঁর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে: ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি দাঁত, দাঁতের মাড়ি, এনামেল এবং চোয়ালের হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। উল্লিখিত উপাদান সমূহ মানকচুতে যথেষ্ঠ পরিমাণে থাকার দাঁতের ক্ষয় রোগ এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
◙ ডায়াবেটিস রোগের প্রধান শত্রু হচ্ছে glycemicমাত্র। মানকচু রক্ত শর্করা তথা গ্লাইসেমিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ঠ সহায়তা করে। এ জন্য নিয়মিতভাবে খাদ্যের মধ্যে মানকচু রাখতে হবে।
◙ চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে: মানকচুতে ভিটামিন-ই রয়েছে। এটি একটি শক্তিশালী আন্টিঅক্সিডেন্ট। চুল শুস্ক ও নিস্তেজ হয়ে যাওয়াসহ পরিবেশগত বিভিন্ন ক্ষতি থেকে মাথার চুলকে রক্ষা করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
◙ রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধে: মানকচুতে বিভিন্ন খনিজ উপাদান রয়েছে। তার মধ্যে লৌহ এবং তামার উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। লৌহ এবং তামা উভয় আমাদের শরীরের সিস্টেমে এবং কোষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন বহন এবং উৎপাদনে গুরুত্ব পূর্ণ অবদান রাখে। যার রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত তার নিয়িমিত কিছুদিন মানকচু খেলে সে সমস্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
◙ হাড়ের ক্ষয় রোধে: মানকচুতে রয়েছে দস্তা, কপার, ক্যালসিয়াম, এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো গুরুত্ব উপাদান রয়েছে। মানকচুর উল্লেখিত উপাদান সমূহ হাড়ের ক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
◙ ত্বকের সমস্যায়: মানকচুতে ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই রয়েছে যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
সূত্র:
১। https://www.healthbenefitstimes.com/taro
২। ইউজফুল প্ল্যান্টস অব বাংলাদেশ, প্রকাশনা: আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম