নয়নতারা
![](https://ubinig.org/plants/14797013412166.jpeg)
অন্যান্য স্থানীয় নাম: নয়নতারা
বৈজ্ঞানিক নাম : Vinca rosea পরিবার : Apocynaceaeপ্রধান ব্যবহার :ওষুধি
অন্যান্য ব্যবহার :ওষুধি এবং ফুল
আরো পড়ুন
নয়নতারা সোজা কান্ড যুক্ত একটি বর্ষজীবী ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। কিছুক্ষেত্রে এটি অনেক বছর ধরে নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বেঁচে থাকে। সাধারণতঃ দেড় থেকে দু-ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে। তবে যেসব বহু বর্ষজীবী তারা চার থেকে সাড়ে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। নয়নতার ফুলে পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। রং ফিকে গোলাপী। এ জাতের নয়নতারা গাছ বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা যায়। নয়নতার আরও দুটি জাত রয়েছে। তার মধ্যে একটির সাদা ফুল অপরটি ফুল লাল অথবা গোলাপী। নয়নতারা গাছে বারো মাস ফূল ফোঁটে নয়নতার পাতার স্বাদ তেতো।
বিস্তার:বাংলাদেশের সর্বত্র এটি জন্মে।
বংশবিস্তার: বীজ থেকে চারা গজায়, কাটিং থেকেও গাছ হয়। নয়নতারা গাছের নীচে পাকা বীজ পড়ে এমনিতেও নতুন চারা গজায়। এগুলো তুলে অন্যত্র রোপন করা হয়ল নতুন গাছ জন্মায়।
ওষুধি গুণাগুন: ভেষজ হিশেবে নয়নতারা পাতা ও মূল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমগ্র গাছের রসে প্রায় ৭০টি উপক্ষার পাওয়া যায়। তার মধ্যে ভিনক্রিস্টিন এবং ভিন ব্লাস্টিন নমক উপক্ষার দুটি লিউকেমিয়া রোগের ওষুধ হিশেবে বিশেষভাবে গণ্য।এটির ওপরে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখনো ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নয়নতার মধ্যে ডেল্টা-ইহোডিম্বন যে রাসায়নিক পদার্থটি পাওয়া যায় সেটির চাহিদা বিশ্ব বাজারে খবই বেশী।
রাসায়নিক উপাদান:
১। Leaf contains: a) Glycoside, b) Ursolic acid, c) Alkaloids, d) Alcohols, e) Tannin, f) Carotenoids, g) Sterols, h) Oleoresin etc
২। Root contains: a) 24 Alkaloids-Vinosidine, Lochnerrivine, Leuosivine, Cavincine etc,
৩। Whole Plant contains: a) 44 Alkaloiids, b) Ursolic acid etc.
নয়নতারার ওষুধি ব্যবহার:
১। বিষাক্ত ক্ষত ও ঘা: শরীরে কোনো অঙ্গ কেটে গেলে কিংবা ঘা যদি বিষাক্ত হয়ে যায়, তবে দুটো নয়নতারা গাছের রস প্রয়োগ করলে খুবই সুফল পাওয়া যায়। রোজ একবার করে কচি ডাল ও পাতা বেটে, তার রস দিয়ে ঘা ধুয়ে রাখতে হবে। সাত দিন ব্যবহার করলে বিষদোষ নষ্ট হবে এবং ঘা শুকিয়ে যাবে। অস্ত্রের আঘাতে কেটে গেলে, একইভাবে কাটা জায়গায় রস প্রয়োগ করে বেধে রাখতে হবে। তিন-চার- দিনের কাটা জায়গা জুড়ে যাবে।
২। রক্তের চাপ বাড়লে: রক্তচাপ বাড়লে পাঁচ মিলি-লিটার নয়নতারা গাছের মূলের টাটকা রস সকালে খালি পেটে একবার খেতে হবে। তিন-চার দিন খেলেই কিছুটা উপকার পাওয়া যাবে।তবে চার-পাঁচ দিন পরে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকটে রক্তের চাপ পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
৩। বহুমূত্র রোগে: প্রতিদিন সকালে সাদা নয়নতারা ফল গাছের দুটি পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খেলে এ রোগ মোটেই বাড়তে পারে না। যাদের দাঁত নেই তারা পাতাকে সামান্য পানি দিয়ে বেটে এক চামচ পরিমাণ রস খাবেন। নয়নতারা পাতা নিয়মিত খেলে বহুমূত্র রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪। লিউকেমিয়া: একটি অসাধ্যের পর্যায়ভূক্ত রোগ। আয়ূর্বেদীয় শাস্ত্রমতে এটি রক্তবহ স্রোতের ব্যাধি। এক্ষেত্রে নয়নতারা ভেষজটির ব্যবহার রোগটিকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
৫। কৃমি থেকে কুষ্ঠ, হৃদরোগ, অরুচি, মুর্ছা, অর্জীর্ণ, বারে বারে হাঁচি, সর্দি, পেট ফাঁপা, দাঁতের রোগ এমনকি মাথার রোগও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বেশীরভাগ চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন রোগের কারণ ভিন্ন ভিন্ন মনে করেন। এ অবস্থায় উপর্যক্ত নয়নতারা ক্বাথ ৫/৬ দিন সেবন করলে কৃমির উপদ্রব কমে গিয়ে অন্যান্য উপসর্গগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। আরপর আরও ৮/৯ দিন ঐভাবে খেলে সম্পূর্ণ রেহাই পাওয়া যাবে।
৬। মেধার গ্রহণ ও সঞ্চালন শক্তি ঠিক থাকলেও ধারণ শক্তি ক্রমশঃ কমে গেলে মেধার হ্রাস হয়েছে বলা হয়। এক্ষেত্রে নয়নতারা ক্বাথ নিয়মিত মাসখানেক সেবন করলে খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
৭। কীট দংশনে বা বোলতা, ভিমরুল, মৌমাছি বা ভোমরার হুলের জ্বালা ও যন্ত্রণার হাত থেকে আশু উপকার পেতে হলে নয়নতারার পাতা থেতো করে সে রসটা লাগাতে হবে।
সূত্র: https://caloriebee.com/nutrition/Sadabahar-Periwinkle-Plant-Or-Vinca-Rosea