পাট কি বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য সম্পদ?


প্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশে পাটের চাষ ও ব্যবহার চলে আসছে। বিগত দুশো বছরের অধিক সময় ধরে বহু চড়াই উৎরাই এর মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পাট এ অঞ্চলের মানেুষের অতি পরিচিত অর্থকরী ফসল। পাট গাছঃ দেশী (Coschorus capsularis) ও তোষা (C. olitorius) দু’প্রজাতির পাট গাছের ছাল থেকে আহরিত আঁশ পাট নামে পরিচিত যা বাংলাদেশের সোনালী আঁশ নামে সমাধিক পরিচিত। মনে করা হয় সংস্কৃত শব্দ পট্ট থেকে পাট শব্দের উদ্ভব হয়েছে। পাটের ইংরেজি নাম জুট (Jute )। সম্ভবতঃ উড়ে (উড়িষ্যা, ভারত) ভাষা থেকে এসেছে। পাট একটি বর্ষজীবী ফসল। এর জীবনকাল ১০০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত। চৈত্র/বৈশাখ থেকে আষাঢ়/শ্রবণ। পাট বৃষ্টি নির্ভর ফসল। বায়ুর আদ্রতা ৬০% থেকে ৯০% এর পছন্দ। পাট চাষে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। গড় ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ২ টন। পাটের আঁশঃ পাটের আঁশ নরম উজ্জ্বল চক্চকে এবং ১-৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে একক আঁশ কোষ ২-৬ মিলি মিটার লম্বা এবং ১৭-২০ মাইক্রণ মোট হয়। পাটের আঁশ প্রধানত সেলুলোজ এবং লিগনিন দ্বারা গঠিত। সাধারণত: পাট গাছ জৈব প্রক্রিয়ায় পানিতে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়ানো হয়। ব্যবহারঃ পাট পরিবেশ বান্ধব, বহুমুখী ব্যবহার যোগ্য আঁশ ।শিল্প বিপ্লবের সময় ফ্লাক্স এবং হেম্প এর স্থান দখল করে পাটের যাত্রা শুরু। বস্তা তৈরির ক্ষেত্রে পাট এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে আছে। পাটের আঁশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য অনেক আঁশের সঙ্গে মিশ্রণ করে ব্যবহার করা যায়। টেক্সটাইলঃ প্রচলিত বয়ন শিল্পে পাটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে সুতা, পাকানো সুতা, বস্তা, চট, কার্পেট ব্যাকিং ইত্যাদি। পাট আঁশের রয়েছে উচ্চ মাত্রার টান শক্তি, সীমিত প্রসারতা এবং বস্ত্রের স্থায়ীত্ব। পর্দার কাপড়, কুশন কভার, কার্পেট, ইত্যাদি পাট থেকে তৈরি হয়। গরম কাপড় তৈরীর জন্য উলের সঙ্গে মিশ্রণ করা হয়। মোড়কঃ কৃষি পণ্য এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি বস্তাবন্দি ও প্যাকিং করার জন্য ব্যাপকভাবে পাট ব্যবহার করা হয়। উপজাতঃ পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে প্রসাধনী, ওষুধ, রং ইত্যাদি। পাট খড়ি জ্বালানী, ঘরের বেড়া, ঘরের চালের ছাউনীতে ব্যবহার হয়। বাঁশ এবং কাঠের বিকল্প হিসাবে পার্টিকেল বোর্ড, কাগজের মন্ড ও কাগজ তৈরিতেও পাট খড়ি ব্যবহৃত হয়। উৎপাদন কারীঃ পাট দক্ষিণ এশিয়ার একটি ফসল। বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের ফসল। উৎপাদিত আঁশের ৯৫% ভারত ও বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। নেপাল এবং মায়েনমারেও কিছু পাট উৎপাদিত হয়। উৎপাদন এবং ব্যবসাঃ আবহাওয়া এবং দামের ওপর ভিত্তি করে পাটের উৎপাদন ওঠানামা করে। পৃথিবীতে ইদানিংকালে বাৎসরিক উৎপাদন ২.৫-৩.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। বৈশ্বিক উৎপাদনের ৬০% ভারতে এবং ৩০% বাংলাদেশে হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের ৪০% কাঁচা পাট এবং ৫০% তৈরী পণ্য হিসাবে রফতানী করা হয়। দৃষ্টিভঙ্গিঃ বিশ্বব্যাপি পরিবেশ সচেতনতা ও নিরাপদ প্যাকেটে খাদ্য সরবরাহের ভিত্তিতে পাটের মতো প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বিস্তৃত হচ্ছে। বর্তমানে যদিও পাটের বহুমুখী ব্যবহারের ক্ষেত্র তেমন প্রসারিত হয়নি, তবে ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে বাৎসরিক ৫ থেকে ৫.৫ মিলিয়ন বেল পাট উৎপাদিত হচ্ছে। এরমধ্যে ২ থেকে ২.৫ মিলিয়ন বেল কাঁচা পাট হিসাবে রফতানী হয় এবং বাঁকী পাট স্থানীয় মিলে ব্যবহার করা হয়। উৎপাদিত পাট পণ্যের ৭০ থেকে ৭৫% বিদেশে রফতানী করা হয়। বিশ্ব বাজারে পাট পণ্যের ৫০ থেকে ৬০% বাংলাদেশ থেকে সরবরাহ করা হয়। কাঁচা পাটের চাহিদারও ৯০% বাংলাদেশ থেকে সরবরাহ করা হয়। শিল্পঃ বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ১৫০টিরও অধিক পাটকল আছে। এসব পাটকলে ৬.৫ লাখ মেট্রিক টনের অধিক পাট পণ্য উৎপাদিত হয়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে পাট শিল্প ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। একবার রাষ্ট্রীয় করণ, আবার বিরাষ্ট্রীয় করণ, স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট, ফেইজ আউট, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক, ইত্যাদি ঘটেছে। কৃষিঃ কৃষি ক্ষেত্রের অবস্থাও তথৈবচ। পাটের প্রাণসম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, অনেক উন্নত জাত ছাড় করা হয়েছে। এমনকি পাটের জিনোম সিকুয়েনসিংও করা হচ্ছে। তবে পাট বীজ বপন সময় হলে সিংহ ভাগ বীজের জন্য কৃষককে এখন পাশের দেশ থেকে বীজ সরবহাহের উপর নির্ভর করতে হয়। বাজারঃ পাট বিক্রির প্রাথমিক বাজারে বিরাজ করছে সীমাহীন অরাজকতা। পাটের নায্য মূল্যে না পাওয়ায় কৃষকের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। পরিবেশ: পাট ও বাংলাদেশ একে অপরের জন্য। পাট চাষের সাথে বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন আর্দ্র আবহাওয়া পাট গাছের জন্য খুবই উপযোগী। বাংলাদেশের বৃষ্টিপাত ১৪১৯ মি.মি থেকে ৪৩৩৮ মি.মি। দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে বৃষ্টিপাত বেশী হয়। পক্ষান্তরে উত্তর ও পশ্চিম অংশে বৃষ্টিপাত কম হয়। বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৭০-৯০% , চৈত্র-বৈশাখ মাসের প্রাক বর্ষায় পাট বীজ বোনা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের অপেক্ষাকৃত খড়ায় নিড়ী, গাছ বাছাই ও অন্যান্য অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা সম্পন্ন করা হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের ভরা বর্ষায় যখন, নালা ডোবা, খাল-বিল, পানিতে ভরে ওঠে তখন পাট কাটা হয়। নিকটবর্তী জলাশয়ে পাট গাছ জাক দেয়া হয়। পরিবেশের এ সব কিছুই পাট চাষের সাথে নিবীড়ভাবে সম্পর্কিত। তাছাড়া বাংলাদেশে ৩-৪ লাখ হেক্টর জমি আছে যে সব জমিতে খরিফ-১ মৌসুমে পাট ছাড়া অন্য কোন ফসল ভালো হয় না। পাট সম্পূর্ণ বৃষ্টি নির্ভর ফসল। সাময়িক খরা অথবা জলাবদ্ধতায় পাট ফসল তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। পাট ক্ষেতে কোন রকম সেচ অথবা পানি নিস্কাশন প্রয়োজন হয় না। পাট আবাদী অঞ্চলঃ পাট এক সময় দেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চল যেমন-বৃহত্তর কুমিল্লা, ঢাকা ও ময়মনসিংহ যা ‘জাত’ এলাকা হিসাবে পরিচিতি ছিল, সেখানেই বেশী পাট উৎপাদিত হতো। পাটের এলাকা আস্তে আস্তে উত্তর পশ্চিম দিকে সম্প্রসারিত হয়, যা নর্দান এলাকা হিসাবে পরিচিত। রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া তথা তিস্তা অববাহিকার অন্যান্য স্থান এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এর পরে গঙ্গা অববাহিকার ডিষ্ট্রিক্ট হিসাবে পরিচিত ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, রাজশাহী ও পাবনা এলাকায় পাট চাষ সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে দেশের পাট আবাদী ৮০% জমিতে তোষা পাটের আবাদ হয় এবং ২০% জমিতে দেশী পাট ও কেনাফের আবাদ হয়। যদিও অতীতে এমনকি ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত তোষা ও দেশী পাটের অনুপাত ছিল ঠিক বিপরীত অর্থাৎ তোষা পাট ২০% এবং দেশী পাট ৮০% । পাটের কৃষিতাত্ত্বিক উপযোগীতাঃ ধান ও গম বাংলাদেশের প্রধান দুটি খাদ্য শস্য। কিন্তু বছরের পর বছর একই জমিতে ধান এবং গমের আবাদ করা হলে পরিবেশগত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি হয়। ধান ও গমের শিকড় ৩-৪ ইঞ্চির বেশী গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। তাছাড়া শিকড়ের নীচে একটি শক্ত আস্তরণ সৃষ্টি হয়; এর নীচে গাছের খাদ্য উপাদান জমা হয়। কিন্তু ধান ও গমের শিকড় সেখানে পৌঁছাতে পারে না। তবে এর উপরের স্তরের খাদ্য উপাদান নিশেষিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় ফসল- চক্রে পাট চাষ করা হলে পাটের ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা শিকড় মাটির তলার শক্ত আস্তরণ ভেঙ্গে ফেলে এবং নীচের স্তর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। আরো জানা যায় যে, পাটগাছ যে খাবার খায় তার ৬০% মাঠে দাঁড়ানো অবস্থায় পাতা ঝড়ানোর মাধ্যমে মাটিতে ফিরিয়ে দেয়। তাই ধান, গম এবং অন্যান্য ফসলের আবাদ টিকিয়ে রাখতে হলে শস্য পর্যায়ে পাট চাষ অবশ্যই করতে হবে। তাছাড়া পাটের রয়েছে আরো অনেক কৃষিতাত্ত্বিক ও পরিবেশগত সুবিধা। পাট খড়ি পাট চাষের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। গড়ে বাংলাদেশে বাৎসরিক ৫০ লক্ষ বেল আঁশ উৎপাদিত হয় (২.৫ কোটি মণ)। পাট আঁশের দ্বিগুণ পরিমাণ খড়ি উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশে পাট খড়ির নানা রকম ব্যবহার রয়েছে। এর মধ্যে ঘরের বেড়া, ছাউনী এবং জ্বালানী হিসাবে খড়ির ব্যবহার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে গ্রাম অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি মণ খড়ির প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে পাট খড়ি থেকে ৫-৬ কোটি মণ খড়ির সরবরাহ নিশ্চিত হয়। পাট চাষ না থাকলে পাট খড়ির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এর চাপ গিয়ে পড়বে বনজ ও ফলজ গাছ-গাছালির উপর। পাট গাছ বায়ু বিশুদ্ধ করে। বড় গাছের চাইতে অধিক পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাট গাছ হজম করে। এক হেক্টর জমির পাট ১৫ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং ১১ টন অক্সিজেন ত্যাগ করে। সাধারণ ভাবে বাংলাদেশের পাট চাষীরা বালাই নাশক ব্যবহার করেন না। কেউ কেউ অবশ্য সীমিত পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। পাট অন্য ফসলের জন্য ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করে। শস্য পর্যায় ধান, গম এবং অন্যান্য ফসলের রোগ বালাই এর প্রাদূর্ভাব কমাতে সহায়তা করে। পাট উঁচ্চ জৈব ক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ভিদ। চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে ফসল কাটা যায়। এ সময় ২০-৪০ টন শুকানো কান্ড উৎপাদিত হয়। পক্ষান্তরে দ্রুততম বর্ধনশীল গাছও কাটার উপযোগী হতে ১০-১৪ বছর সময় লাগে। বড় গাছের বাৎসরিক উৎপাদন হয় ৮-১২ টন মাত্র (সেন্স ফর এনভার্মমেন্ট, ২০০৯)। পাটের আর্থ সামাজিক পরিবেশঃ পাট একটি শ্রমঘন ফসল। পাট উৎপাদনে গড়ে একর প্রতি ১০০-১১০ শ্রম দিবস প্রয়োজন হয়। বছরে ১০-১২ লক্ষ একর জমিতে পাটের আবাদ হয়। সে হিসাবে কেবল মাত্র কৃষি কাজে কম পক্ষে ১০ কোটি শ্রম দিবসের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পাট শিল্পে আরো প্রায় ৫০,০০০ শ্রমিক নিয়েজিত রয়েছেন। কৃষি ও শিল্প ছাড়াও পাটের ব্যবসা বাণিজ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আরো প্রায় ১,৫০,০০০ মানুষ কর্মরত রয়েছেন। মোটামোটিভাবে দেশের শ্রম শক্তির প্রায় ১০% পাট সেক্টরে নিয়োজিত রয়েছে। গ্রাম বাংলার আর্থ-সামাজিক পরিবেশে পাট একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। পাটের নায্য মূল্য কৃষকের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পাট উৎপাদনের অগ্রগামী এলাকায় তুলনা মূলক ভাবে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, বাড়ী-ঘর ও স্কুল-কলেজ সমৃদ্ধ রয়েছে। এখনও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ৪.৬৮% আসে পাট থেকে (www.bangladesh-economy.org )| বাংলাদেশের পাট নীতিঃ পাট সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে পাটনীতি ২০০৭ প্রণয়ন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পাট চাষ, পাট পণ্য উৎপাদন এবং বর্হিবিশ্বে পাট রফতানী নিশ্চিত করা। পাট নীতির আরো উদ্দেশ্য হচ্ছে-পাটের ফলন বৃদ্ধি করা, আঁশের মান উন্নয়ন করা এবং কৃষক পর্যায়ে পাটের নায্যমূল্য নিশ্চিত করা। গবেষণা ও উন্নয়নঃ পাটের কৃষি ও কারিগরী উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) কাজ করছে। পাট পণ্য উৎপাদনের অগ্রগতি সাধনের জন্য বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন কাজ করছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতাঃ পাট, কেনাফ এবং এ জাতীয় অন্যান্য আঁশ ফসলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ইন্টার-ন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাবেক ইন্টার ন্যাশনাল জুট অর্গানাইজেশানের স্থলাভিশিক্ত এ প্রতিষ্ঠানটি ২৭ এপ্রিল ২০০২ খৃ: ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ, ভারত, সুইজারল্যান্ড এবং ইউরোপের ২৭টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় কমিউনিটি এ প্রতিষ্ঠানের সদস্য। বাজার ব্যবস্থাপনাঃ পাট বাংলাদেশের কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল। জনসংখ্যার ৩৫% পাট উৎপাদনের সাথে যুক্ত। প্রতিবছর ৩০-৪০ লাখ কৃষক পরিবার পাট উৎপাদন করে। পাট প্রতি বছর ৫-৬ শত কোটি টাকা পল্লী অঞ্চলে যোগান দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে ২১% কৃষক পাট কাটার ১ মাসের মধ্যে, ২৮% কৃষক ২ মাসের মধ্যে, ২০% কৃষক ৩ মাসের মধ্যে, ২০% কৃষক ৪ মাসের মধ্যে এবং ১১% কৃষক ৪ মাসের পরে বিক্রী করে। বাংলাদেশে পাটের প্রাথমিক বাজারের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। পাট তিন পর্যায়ে বাজার জাত করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ছোট ছোট বাজারে, দ্বিতীয় পর্যায়ে বড় বড় বাজারে এবং তৃতীয় পর্যায়ে দেশীয় পাটকল সমূহে এবং বিদেশী বাজারে রফতানী করা হয়। কৃষকের হাত হতে একটি বিপনন ব্যবস্থার মাধ্যমে পাট রফতানী করা হয়। মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্ব ভোগীরা জড়িত রয়েছেন। এ ব্যবস্থায় ফড়িয়া, বেপারী, আড়তদার, দালাল, কাঁচা বেলার ও পাকা বেলাররা জড়িত থাকেন। পাট ব্যবসায় জড়িত মধ্যস্বত্ব ভোগীদের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। দেশের স্বার্থে পাটের অভ্যন্তরীন বাজারের উন্নয়ন সাধন করতে হবে যাতে কৃষকরা পাটের ন্যায্য মূল্য পান এবং রফতানী বাজারে গতি সঞ্চারিত হয়। উপসংহারঃ পাট কিভাবে বাংলাদেশের পরিবেশ প্রকৃতি, প্রাণবৈচিত্র্য এবং মানব জীবন-জীবিকা প্রভাবিত করছে সে হিসাব দিতে হলে আরো দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন। তবে মোটা দাগে এ কথা বলা যায় যে পাট গাছ ও পাটের আঁশের নিজস্ব শক্তি এ দেশের পরিবেশ প্রকৃতি ও আর্থ-সামাজিক পরিবেশের সাথে একাত্ম হয়ে আছে। তবে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পাট চাষ, পাট শিল্প ও বানিজ্য লাভ জনক ভাবে চালু রাখতে হলে দক্ষ ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই। পাট নিয়ে নানাবিধ হতাশার মাঝেও দুটি বিষয় আশার আলো দেখা যায়ঃ- (১) পাটের গড় ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে (২) পাট ও ধানের মূল্যের অনুপাত বাড়ছে। নানামুখী চাপের মধ্যেও পাটকে টিকিয়ে রাখতে হলে উন্নত মানের পাট উৎপাদন করতে হবে এবং পাটের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter