তামাকে আর্সেনিক


তামাক একটি পত্র বহুল সবুজ এক বর্ষজীবী উদ্ভিদ। শুকানো তামাক পাতা ধোঁয়াযুক্ত বা ধোঁয়া বিহীন নেশার দ্রব্য হিসাবে ব্যবহার হয়। তামাক পাতার মূল উপাদান নিকোটিন। নিকোটিন নেশা বা আশক্তি সৃষ্টিকারি উপাদান। তাছাড়া তামাকে আছে চার হাজারের অধিক রাসায়নিক দ্রব্য। নিকোটিন একটি নেশা জাতীয় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী রাসায়নিক। তামাক সেবনের সাথে সাথে নিকোটিন রক্তের সাথে মিশে যায়। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত হয় ফলে রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃদ-স্পন্দন বেড়ে যায়। অন্যান্য জীবন ঘাতি নেশা দ্রব্য যেমন কোকেইন ও হিরোইন এর মত নিকোটিন ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর এক ধরণের স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে। নিকোটিনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ক্যান্সার, ব্রংঙ্কাইটিস, স্ট্রোক, হৃদরোগ, লিউকোমিয়া, চোখে ছানি, নিউমোনিয়া, এজমা ইত্যাদি রোগ হয়। 

    তামাকে আর্সেনিক! তামাক একটি বিষাক্ত দ্রব্য।  তামাকের সাথে যখন আর্সেনিকের মত আর একটি     মারাত্বক বিষ যুক্ত হয় তখন ভয়াবহতা বহুগুণ বেড়ে যায়।  বহুকাল থেকে বিষের রাজা হিসাবে আর্সেনিকের পরিচিতি। স্বাদহীন, বর্ণহীন এবং গন্ধহীন আর্সেনিক বহুকাল থেকে বিষ হিসাবে নানা ভাবে অশুভ কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। আর্সেনিক বিষের ভয়াবহতা সহজে আলাদা করে বুঝা যায় না। কারণ এর লক্ষণ অন্য সাধারণ প্রতিক্রিয়া যেমন ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, বমি বা অন্য কোন সাধারণ অসুস্থতার লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। কাজেই, অসুস্থতার আসল কারণ নির্ণয়ের আগেই আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যেতে পারেন। আবার কখনও স্বল্প মাত্রায় দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে আস্তে আস্তে আক্রান্ত ব্যক্তি দূর্বল হয়ে পড়েন, বোধ শক্তি কমে যায়। পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।  মৃত্যুর পূর্ব লক্ষণ হিসাবে হৃদ স্পন্দন অনিয়মিত হয়। লিভার ও কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমে যায়। রক্তে লোহিত কনিকা ও শ্বেত কনিকার ঘাটতি হয়।  ফলে শরীর দূর্বল হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত মানুষের শ্বাস প্রশ্বাস ও মুখ থেকে রসুনের গন্ধের মত গন্ধ বেড় হয়। জ্বর হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, জন্ডিস, হৃদরোগ, স্নায়ু রোগ, পেটের পীড়া, চামড়ায় ঘা, ডায়রিয়া, বমি, বমি বমি ভাব, রক্ত বমির মত জটিল শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

বাংলাদেশের মাটিতে এবং মাটির তলার পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। এদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১ জেলায় মাটি ও মাটির তলার পানি আর্সেনিকে দূষিত। বিশেষ করে তামাক উৎপাদন জেলা যেমন কুষ্টিয়া, রংপুর, ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, ও ফরিদপুরের মাটি ও মাটির তলার পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। তদুপরি তামাক উৎপাদনে কীটনাশক হিসাবে প্রচুর পরিমানে লেড আর্সেনেন্ট ব্যবহার হয়। ফলে ধোঁয়াযুক্ত এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের মধ্যে গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত আর্সেনিক বিষের অনুপ্রবেশ ঘটছে। ফলে তামাক সেবন- জেনে শুনে বিষের সাথে বিষ পান।

সুস্থ সবল সুন্দর জীবনের জন্য তামাক মুক্ত জীবন ও পরিবেশ বাঞ্ছনীয়।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter