গোল্ডেন রাইস - ২ প্রবর্তনের ঝুঁকি


গোল্ডেন রাইস - ১ নিয়ে ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউটে যথেষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। তবে তেমন কোন সুফল লাভের খবর জানা যায় নি। গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত এখন আবার গোল্ডেন রাইস - ২ প্রবর্তনের ব্যবস্থা হয়েছে।

গোল্ডেন রাইস প্রবর্তনের যুক্তি হিসাবে বলা হয় যে ভিটামিন এ ঘাটতির কারণে যে রাতকানা রোগ ও শিশু মৃত্যু হয় তা প্রতিরোধ করা।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্র্য ও প্রাণ প্রাচুর্যের দেশ। ঋতু ভিত্তিক ফল ফসলের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। এ দেশের বিভিন্ন ফসল যেমন- মিষ্টি আলু, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, বাঙ্গি, পালং শাক, ব্রকলি, বিট, আম, কমলালেবু ও সব রকম শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। তাছাড়া মাছ, মাংস, ডিম ও দুধে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন এ পাওয়া যায়।

জানা যায় যে ভুট্টা ও একটি অনুজীবের জিন বাংলাদেশের সব চেয়ে জনপ্রিয় ধানের জাত ব্রিধান - ২৯ এর মধ্যে সংযোজন করে গোল্ডেন রাইস - ২ উদ্ভাবন করা হয়েছে। জিন বিকৃতির মাধ্যমে ভুট্টা থেকে জিন সংযোজন করে ধানে ভিটামিন “এ” যুক্ত করা হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে জিন বিকৃতি ঘটিয়ে ভুট্টা থেকে ধানে জিন সংযোজন করার কি প্রয়োজন? সরাসরি ভুট্টার আবাদ বাড়িয়ে দিলেই তো হয়। তাছাড়া এক কেজি ধান উৎপাদনে ৪০০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। পক্ষান্তরে এক কেজি ভুট্টা উৎপাদন করতে ৮৫০ লিটার পানির প্রযোজন। সেচের মাধ্যমে ধান চাষে এত বেশী পানির প্রয়োজন যে মাটির তলার পানি তুলে সেচ দিতে হয়। সেচের মাধ্যমে ধান চাষের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬২ জেলার পানিতে আর্সেনিক দূষণ ঘটছে। আর্সেনিক দূষণ শুধু পানিতেই থেমে নেই। মাটির তলার পানি তুলে সেচের ফলে সব রকম খাদ্য শস্যের মধ্যে আর্সেনিকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনু প্রবেশের মাত্রা সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশী। তাই বির্তকিত গোল্ডেন রাইস প্রবর্তন না করে ভুট্টার আবাদ সম্প্রসারণ করাই বাংলাদেশের জন্য উত্তম। ফলে একদিকে যেমন ভিটামিন এর ঘাটতি কমবে অন্য দিকে পানি, মাটি, বায়ু, ফল ফসল ইত্যাদি আর্সেনিকের দূষণ মুক্ত থাকবে। তদুপরি মাটি কম ভেজা থাকার ফলে জিঙ্ক এর ঘাটতিও কমবে।

জিন বিকৃতির মাধ্যমে উদ্ভাবিত গোল্ডেন রাইস মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। জৈব সত্ত্বাকে ইট-পাথরের দালান কোঠা ভাবা ঠিক না। তৈরি বাড়িতে দু’একটি ইট নতুন করে বসিয়ে দিলে যেমন হয়, উদ্ভিদ বা প্রাণিকোষে অন্য প্রজাতি থেকে জিন সংযোজন করে হুবহু সেই ফল প্রত্যাশা করা যায় না।

ধানের জিনমে ৫০০০০ হাজারের অধিক জিন রয়েছে। তার মধ্যে অন্য প্রজাতি থেকে দু’একটি জিন জুড়ে দিলে বিদ্যমান জিন সমূহে অবস্থান পরিবর্তনের ফলে সার্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় অবাঞ্চিত পরিবর্তন আসতে পারে। প্রজাতি হিসেবে ধানের অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

পরপরাগায়নের মাধ্যমে গোল্ডেন রাইস স্থানীয় জাতের ধানের কৌলিক অবক্ষয় এবং পরিণামে বিলুপ্তি ঘটাতে পারে। বহিরাগত জিন সংযোজন এবং তা সম্প্রসারণের ফলে ধানের কৌলিক গঠনে অস্বাভাবিক ও অপূরণীয় ক্ষতি সাধনের আশংকা রয়েছে। সংযোজিত জিনের পরিবর্তিত অবস্থানের অস্বাভাবিকতা, বিদ্যমান অন্যান্য জিনের সাথে সংযোজিত জিনের মিথষ্ক্রিয়ায় ধানে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। ফলে ধানে এবং এ দেশের কৃষকদের জীবন জীবিকায় অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

এ অঞ্চলে ১৯৪২-৪৩ সালে যে ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ হয়েছিল তার অন্যতম কারণ ছিল একটি ছত্রাকের আক্রমণে ধানের ফসল হানি। ধানের কৌলিক বিকৃতির ফলে রোগ বালাই ও পরিবেশ প্রতিকূলতা প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ধানের মত এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল নিয়ে জিন বিকৃতির মত মারাত্মক আশংকাজনক কর্মকান্ডে যুক্ত হবার দুর্মতি এ দেশের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের থাকা উচিত নয়। তাই জনস্বার্থে এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করছি।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter