টাঙ্গাইল নিরাপদ খাদ্য সমাবেশ ও মেলা: এবার গড়াসিন গ্রামে


২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬, টাঙ্গাইল। নিরাপদ খাদ্য সমাবেশ ও মেলা, ২০১৬ অনুষ্ঠিত হোল আটিয়া ইউনিয়নের গড়াসিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ, বিএফএসএন, উবিনীগ ও নয়াকৃষি আন্দোলনের আয়োজনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারিতে আটিয়া ইউনিয়নেরই নান্দুরিয়া ও ২৮ ফেব্রুয়ারিতে পাথরাইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেলদুয়ার উপজেলা  ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। দেলদুয়ারকে নিরাপদ খাদ্য উপজেলা হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা দিচ্ছে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)র নিরাপদ খাদ্য প্রকল্প। নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকদের দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামের ফলে এই উপজেলায় প্রাণবৈচিত্র্যভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থার শক্ত ভিত্তি তৈরী হয়েছে। এখন তা আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠানেরও মনোযোগের বিষয়। টাঙ্গাইলবাসীদের জন্যও এটা গর্বের বিষয় যে তাদেরই একটি উপজিলা আজ নিরাপদ খাদ্য অঞ্চলের মডেল হয়ে উঠছে। এই ক্ষেত্রে সকলেরই সহযোগিতা দরকার।

উনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেণ নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষক আক্কাচ আলীর রচিত ও সুরারোপিত একটি গানের মধ্যে দিয়ে ।

গানের কথা

শোন ও ভাই আর বোন,
নিারাপদ খাদ্য খেয়ে বাঁচাও এ জীবন।


নিরাপদ খাদ্য মেলা কৃষক গান

অনুষ্ঠানে আক্কাচ আলী, আরফান ও নবকুমার সবাইকে গানে মাতিয়ে রাখেন। এরা সবাই নয়াকৃষির কৃষক।


গড়াসিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গান ও ছড়া পরিবেশন করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা একটি চমৎকার কাজ করে। তারা একটি ঘোষণা পাঠ করে। ঘোষণায় তারা বলে, আমরা আমাদের পরিবারকে বলতে চাই "আমরা নিরাপদ খাদ্য চাই, তোমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করো"।


নিরাপদ খাদ্য মেলা 2016
গড়াসিন গ্রামে ছাত্রছাত্রীরা তাদের অভিবাবকদের কাছে দাবি জানাচ্ছে "আমরা নিরাপদ খাদ্য চাই, তোমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করো"


'নিরাপদ খাদ্য সমাবেশ ও মেলা'য় নিরাপদ খাদ্যের প্রদর্শনী দেওয়া হয়। প্রদর্শনীতে দেওয়া রয়েছে ধান, সবজি, শাক, ও বীজ। ধানের ব্যবহার ছিল; বেশী পানির ধান ২০টি, ভাতের ধান ৩২টি, পিঠা ২৬টি, চিড়া ৩৪টি, সুগন্ধি ৪টি, খৈ ২৪টি, মুড়ির ধান ১৯টি। চাষপদ্ধতি ও চালের গুণ অনুযায়ী ধানের বৈচিত্র্য ব্যাখ্যা করে নয়াকৃষির কৃষকরা সবাইকে বুঝাচ্ছিলেন কিভাবে এই সকল অমূল্য ধানের জাত হারিয়ে যাচ্ছে আর বিদেশী শক্তির প্ররোচনায় কিভাবে আমরা আমাদের সোনামুক্তা হীরামানিকেরচেয়েও অমূল্য এই জাতগুলো বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের জাত বুবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।


নিরাপদ খাদ্য মেলা

মেলায় নয়াকৃষি কৃষকদের ধানের জাত দেখে অভিজ্ঞ কৃষকরা আবেগে অভিভূত হয়ে পড়েন। নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকরা প্রায় আড়াই হাজার জাতের ধান সংরক্ষণ ও উৎপাদন করেন। যাঁরা বাংলাদেশের ধানের বৈচিত্র সম্পর্কে আরও জানতে চান তাঁরা পরিবার নিয়ে যে কোন একটি নয়াকৃষি বিদ্যাঘর বেড়িয়ে আসতে পারেন। নিজের ছেলেমেয়েদের জন্য খুবই শিক্ষণীয় হবে। ঢাকার সবচেয়ে কাছে রয়েছে 'রিদয়পুর বিদ্যাঘর'। বিষ্ণুপুর গ্রাম, পাথরাইল ইউনিয়ন, দেলদুয়ার উপজেলা, টাঙ্গাইল।


প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থী ও কৃষকদের আগ্রহ ছাড়াও যাঁরা সরাসরি কৃষিতে যুক্ত নন, তাদের আগ্রহও ছিল প্রচুর। এতে বোঝা যায় এই ধরণের শিক্ষামূলক মেলার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বিপুল।

নিরাপদ খাদ্য সমাবেশ ও মেলা'য়   টাঙ্গাইল, দেলদুয়ার উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)র প্রতিনিধি ডক্টর রোকেয়া খানম,  উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ মজহার সহ আরো অনেকেই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


নিরাপদ খাদ্য মেলা 2016

সমাবেশে সবাইকে নিরাপদ খদ্যের উপজিলা হিসাবে গড়ে তোলার কাজে সকলের আগ্রহ ও আন্তরিকতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন নয়াকৃষির প্রবর্তক উবিনীগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ মজহার।


নিরাপদ খাদ্য সমাবেশ ও মেলা'য় কৃষক, শিক্ষার্থীও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশী। উল্লেখযোগ্য যে নয়াকৃষি আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা মহিলারাই রাখেন।

রাসায়নিক সার ও কীটনাশক না ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষক ও বক্তারা দাবি করেন।


নিরাপদ খাদ্য মেলা 2016

নিরাপদ খাদ্য মেলা 2016


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter