বিলুপ্ত আজ খড়ের পালা দেয়ার প্রথা


এইতো সেদিনের কথা গ্রাম-গঞ্জে বৈশাখের শুরুতেই যেমন মাঠ জুড়ে শুধু কৃষান-কৃষানীদের মাঝে ধান বোনার প্রতিযোগিতা শুরু হতো। কয়দিন পরই মাঠ জুড়ে শুধু সবুজ সবুজ আর সবুজের সমারোহ। দেশীয় জাতের আউশ ও আমন  ধান বোনার উৎসব শুরু হত। মাঠের ধান নিড়ানো,আগাছা পরিষ্কার,মই দেয়া,গোবর দেয়া,ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সব কিছুতেই ছিল বৈচিত্রতা। ছিল প্রাণের আবেশ এবং প্রকৃতিগত।

এখন যা কিছু করা হয় সব কিছুতেই আধুনিকের ছোয়া। কলের লাঙ্গল জোয়াল কৃষককে করেছে কর্মহীন। বিলুপ্ত করেছে কৃষকের প্রাণের অনুভূতি ও স্পন্দন। কৃষকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতের নামে বামন ধান। এরফলে আগের আমাদের স্থানীয় যে ধানের জাতগুলো ছিল তা আজ  বিলপ্তির পথে। অথচ সেই স্থানীয় জাতগুলো মানুষের জন্য খাদ্যের জোগান যেমন দিতো, তেমনি গবাদি পশুর জন্য পুষ্টিকর খড়ও সরবরাহ করতো। এবং খাদ্যর ঘাটতি কখনো দেখা যেতো। স্থানীয় জাতের ধানের খড় বছরের পর বছর খোলা স্থানে থাকলেও নষ্ট হতো না আর উচ্চ ফলনশীল ধানের খড় খোলা আকাশের নীচে বেশী দিন রাখলে গরুর খাবার উপযোগী থাকে না।

 আগে ধান রোপনের পর সবুজ কেটে গেলে সারা মাঠ জুড়ে যখন সোনালী ধানের আর্ভিভাব তখন থেকেই কৃষকের বুক জুড়ে আনন্দ আয়োজনের প্রস্তুতি চলত। নতুন ধান ঘরে আসবে এই আনন্দ গ্রাম জুড়ে অন্য রকম অনুভূতির সৃষ্টি হত। নতুন ধান ঘরে ওঠার সাথে সাথে চলত পিঠা পুলির উৎসব। মেয়ে জামাই ও আত্নিয়-স্বজন নিয়ে চলত পালাক্রমে এবাড়ি ও বাড়ি আনন্দ আয়োজন। ধান তুলতে না তুলতেই চলত আরো একটি উৎসব সেটি হলো ধানের খড় শুকিয়ে পালা দেয়ার পর্ব। সে সময় সকল ধান কাটা শ্রমিক পাড়া প্রতিবেশী ও আত্নিয়-স্বজন নিয়ে ধানের খড়ের পালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে হতো বড় ধরনের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। প্রচলিত ছিল যে ধানের খড়ের পালার মাথা মারবে তাকে মাছের বা খাসির মাথা খাওয়াতে হবে।

সেসব গ্রামীন ঐতিহ্য আজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোয়াই। ফলে মানুষের মাঝে কোন আনন্দ উল্লাস করার সুযোগ নেই। সকলেই কর্মব্যস্ত । এমন আন্ত-আন্তরিক আয়োজন করার পরিবেশ যেন ফুরিয়ে গেছে। এই রকম মূহুর্তে মনে পড়ে যায় আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম....।

যদি এমন দিন আবার ফিরে পাওয়া যেত তবে কতই না মজা হত।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter