বাংলাদেশে হৃদ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে !


বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বাংলাদেশে হৃদ রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে (২০১৪) স্ট্রোক ৬.৭২ এবং ক্রোনারি হার্ট ডিজিজে ৯.৪৩% মানুষ মৃত্যু বরন করছে। হৃদ রোগের অনেক ঝুঁকি আছে। কিছু ঝুঁকি আছে যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না আবার কিছু আছে যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

১. নিয়ন্ত্রণহীন ঝুঁকি

ক. লিঙ্গ, পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় বেশী ঝুঁকিতে রয়েছেন।
খ. বংশগত হৃদরোগ প্রবনতা।
গ. বয়স (বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হৃদরোগের প্রবণনতা বাড়ে)।
ঘ. ঋতুস্রাব অতিক্রান্ত মহিলারা।

২. নিয়ন্ত্রণ যোগ্য ঝুঁকি

ক. তামাক সেবনের অভ্যাস।
খ. উচ্চ রক্তচাপ।
গ. ডায়াবেটিস।
ঘ. মানসিক চাপ।
ঙ. শ্রম বিমুখ জীবন যাপন।
চ. প্রাণীজ উৎসের অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ।

গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা বেশী পরিমাণ ভাত এবং চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন তারা বেশী হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাছাড়া হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৮০% মানুষই তামাক সেবনে অভ্যস্ত (http://www.phpc.com.uk/ceu)।

স্বাস্থ্য সম্মত জীবন আচার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে মহায়তা করে। তাছাড়া আরো কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায়।

ক. খাদ্যাভাস পরিবর্তন

১. কম চর্বিযুক্ত খাবার, শাক-সবজি, ফলমূল, স্থানীয় জাতের সেদ্ধ ঢেকি ছাঁটা চালের বসা ভাত, সীম, মটর, ডাল এবং আঁশ সমৃদ্ধ খাবার বেশী খাওয়া। সালাদ খাওয়া। মাছ খাওয়া। কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার ও চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস। অধিক চিনিযুক্ত কোমল পানীয় বর্জন করা। অধিক চর্বি, চিনি ও লবনযুক্ত খাবার বর্জন করা। নূডল, বার্গার, হটডগ, চিপস, বিস্কিট, কেক ইত্যাদি না খাওয়া।

২. প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ তামাক সেবনের প্রভাব বলয় থেকে দূরে থাকা।

৩. লবন কম খাওয়া। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ২-৩ গ্রাম লবনই যথেষ্ঠ। অথচ বাংলাদেশের মানুষ গড়ে ১০ গ্রাম লবন গ্রহণ করেন। লবন খাওয়ার পরিমাণ কমালে ভালো হয়।

খ. শারিরীক শ্রম

১. শারিরীক ভাবে সক্ষম থাকার জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে ২.৫ ঘন্টা নিবীড় শারিরীক পরিশ্রম করা অথবা দৈনিক ১.২৫ ঘন্টা হাটার অভ্যাস করা। শিশুদেরও কমপক্ষে এক ঘন্টা খোলামেলা পরিবেশে খেলাধুলার সুযোগ থাকা প্রয়োজন।

গ. হঠাৎ করে হার্ট এ্যাটাক (হৃদ স্পন্দন বন্ধ হওয়ার লক্ষণ) সম্পর্কে সকলেরই সচেতন হওয়া দরকার।

১. মুখমন্ডল ও হাত পা অবশ হওয়া।
২. দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া।
৩. কথা জড়িয়ে যাওয়া।
৪. হাটতে বা বসতে না পারা এবং শরীরের ভারসাম্য না থাকা।
৫. প্রচন্ড মাথা ধরা।
৬. কোন কিছু গিলে খেতে না পারা।
৭. শরীরের একপাশ অবশ হওয়া।
৮. বুকে ব্যথা এবং ঘাম হওয়া।
৯. শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া, বুক ভারি হওয়া এবং দম আটকে আসা।

এরূপ অবস্থা হলে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রামে যাওয়া এবং চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া। চীনা ব্যবস্থায় সূচের অগ্রভাগ আগুনে ঝলশিয়ে হাতের দশ আঙ্গুলের মাথায় ফুটিয়ে রক্ত বের করা হয়। মুখোমন্ডল বাঁকা হয়ে গেলে, দুই কানে দুইটি ছিদ্র করে রক্ত বের করা হয়।

হার্ট এ্যাটাক (হৃদ স্পন্দন বন্ধ হওয়া) হৃদরোগের মারাত্মক ধাপ। হৃদরোগ একটি জটিল সমস্যা। তবে পরিবেশ দূষণ (মাটি, পানি, ও খাদ্যে আর্সেনিক) এবং বিশেষ পুষ্টি অণু খাদ্য ঘাটতি (খাদ্যে জিঙ্কের অভাব) হৃদরোগের বড় দুটি কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে (www.huffington post.co.uk/gates-cambrige-scholars/uncovering-bangladeshs-hi-b-1636864.html )।

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে মাটির তলার পানি ব্যবহার করে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে মাটিতে জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এবং আর্সেনিক দূষণ বাড়ছে। এরই সাথে বাড়ছে হৃদরোগ ও হার্ট এ্যাটাকের প্রাদূর্ভাব। এ অবস্থা থেকে অব্যাহতি পেতে হলে শস্য পর্যায়ে পরিবর্তন করে বোরো ধানের আবাদ কমিয়ে বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধানের আবাদ বাড়াতে হবে। রবি মৌসুমে গোলআলু, গম, মিষ্টিআলু, ভুট্টা, সরিষা, মুগ, মসুর, ছোলা, খেসারী, পিয়াজ, রসুন, শাক-সবজি ফল-মূল, মসলা ইত্যাদি আবাদ বাড়াতে হবে। আগাছা নাশক, বালাইনাশক, রাসায়নিক সার ও মাটির তলার আর্সেনিকযুক্ত পানি দ্বারা সেচ বাদ দিয়ে ফসল উৎপাদন করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা হলে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসক্রামক রোগের প্রাদূর্ভাব কমবে বলে আশা করা যায়।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter