হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতে খাদ্য বাছাই


অসক্রামক ব্যাধি বিশেষ করে হৃদরোগ বাংলাদেশের মত উন্নয়শীল দেশে সব চেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ। এদেশের মানুষের মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য কারণগুলির মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম প্রধান কারণ। সব শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যেই হৃদরোগের প্রকোপ বাড়ছে। হৃদরোগের কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তামাক ও নেশা জাতীয় পানীয়, উচ্চ রক্তচাপ, কোলষ্ট্রল (রক্তে চর্বি), মেধবৃদ্ধি, শ্রমবিমুখ জীবন যাপন এবং অস্বাস্থকর খাদ্য (অধিক চর্বি, চিনি ও লবণ ) গ্রহণ। দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ, ধনী দরিদ্র, কম বয়সী থেকে বয়স্ক নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষ আজ হৃদরোগের আওতার মধ্যেই আছেন।

নিরাপদ খাদ্য, স্বাস্থ্য সম্মত জীবন আচার হৃদরোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমাতে সাহায়তা করে। নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত শরীর চর্চা, শরীরে ওজন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে হৃদরোগের আশংকা কমায়। ফল ও শাক সবজির মধ্যে এন্টিঅকসিডেন্ট আছে যা শারীরে কোলষ্ট্রল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। দুধ, মাংস এবং অন্যান্য প্যাকেটজাত খাবার ক্রয়ের সময় কম চর্বিযুক্ত আইটেম বাছাই করে নিলে হৃদরোগের বিপদ কমাতে সহায়তা করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে খাদ্য বাছাই এর সময় বিশেষ কিছু বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে:

১. শাক সবজি, ফল ও আস্ত দানাশস্য
২. কম চর্বিযুক্ত খাদ্য
ক. প্যাকেটজাত খাবার

খ. মাংস ও উদ্ভিজ উৎসের আমিষ
গ. রান্নার আগে ভালভাবে বাছাই

৩. কম চিনিযুক্ত খাদ্য ও পানীয়
৪. কম লবণ যুক্ত খাবার

১. শাক সবজি, ফল, আস্ত দানা শস্য:


সবজি


শাক সবজি ও ফলের মধ্যে স্বাবাভিক ভাবেই কম চর্বি থাকে এবং ক্ষুধা নিবারণ করে। ফল ও শাক সবজির আঁশ এবং অন্যান্য উপাদানের মধ্যে কোলষ্ট্রল কমানোর উপাদান থাকে। মূল খাবারের মধ্যবর্তী খাবারের সময় নাস্তায় চিনি ও চর্বি বর্জিত খাবার খেতে হবে। ফলমূল ও শাক সবজি থাকলে আরও ভাল হয়। ফল ও শাক সবজিতে বিদ্যমান বিটাক্যারোটিন ও ভিটামিন সি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। দ্রবণীয় আঁশ সমৃদ্ধ খাবার যেমন মটরশুটি, ছোলা, সীম, ফল, শাক- সবজি, দানা শস্য শরীর থেকে কোলষ্ট্রল নিঃসরণে সাহায্য করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সবজির মধ্যে মিষ্টিকুমড়া, টমাটো, ব্রকলি, শাতমূলী, গাজর, মিষ্ঠি আলু, পাকা মরিচ, সীম ও পালং শাক, কমলা লেবু ও স্ট্রবেরি।

২. কম চর্বিযুক্ত খাদ্য

হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী এবং স্বাস্থ্যবান মানুষ যাদের এখনও হৃদরোগের লক্ষণ দেখা যায় নাই তাদের প্রত্যেকেরই সুসিক্ত চর্বিযুক্ত খাবারের পরিমাণ সীমিত হওয়া বাঞ্চনীয়। ফল মূল ও শাক সবজি ভিত্তিক খাবার হৃদ রোগের ঝুঁকি লক্ষণীয় ভাবে কমাতে সহায়তা করে।

ক. প্যাকেট জাত খাবার

খাবার ক্রয় করার সময় লেবেল দেখে কম চর্বিযুক্ত আইটেমগুলি বাছাই করে নিতে হবে।

খ. কম চর্বিযুক্ত মাংস এবং উদ্ভিজ উৎসের আমিষ

মাছ,কম চর্বিযুক্ত মাংস এবং উদ্ভিজ উৎসের আমিষ যেমন- মুশুর ডাল, তিষির বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, তিল, মিষ্ঠিকুমড়া বীজ, মটর শুটি, সীম, পালংশাক, ব্রকলি, শতমূলী ইত্যাদি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

গ. কম চর্বিযুক্ত খাবার

মাংস রান্নার আগে দৃশ্যমান সব চর্বি কেটে বাদ দিয়ে রান্ন করতে হবে। হাঁস মুরগির মাংস চামড়া বাদ দিয়ে রান্না করে খেতে হবে। যথাসম্ভব গাঢ় লাল মাংস বাদ দিয়ে আপেক্ষাকৃত সাদা মাংস খেতে হবে। চর্বি বর্জিত দুধ পান করতে হবে। রান্নায় ঘি, মাখন ও চর্বি বাদ দিয়ে উদ্ভিজ উৎসের তেল যেমন- সরিষা, তিল, বাদাম, সূর্যমুখী, তিষি, ভুট্টাংং (কর্ন অয়েল), নারিকেল, সায়বিন, পাম অয়েল, অলিভ অয়েল, রাইসব্রান অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করা শ্রেয়।

৩. কম চিনি যুক্ত খাদ্য ও পানীয়

শরীরের ওজন কমানোর জন্য চিনি ছাড়া খাদ্য ও পানীয় সেবনের অভ্যাস করতে হবে।

৪. কম লবন যুক্ত খাবার

সাধারণ লবণের সোডিয়াম শরীরে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লবণ সেবনের মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লবণ সেবনের মাত্রা কমিয়ে হার্ট এটাকের ঝুঁকি ও কমান যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ মাথা পিছু দৈনিক প্রায় ১০ গ্রাম লবণ সেবন করেন। তবে সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক সর্বাধিক ২.৩ গ্রাম লবণ সেবন করা উচিৎ।

হৃৎপিন্ডের উপকারি খাদ্য:

সবজি: ফুলকপি, ব্রকলি, মেটে আলু।
মসলা: ধনিয়া, লাল পিয়াজ, কিসমিস।
ফল: তরমুজ, জাম্বুরা, আপেল, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, টমেটো, জলপাই, এভোক্যাডো, জাম, পেঁপে, বাঙ্গী।
মাছ : টুনা, সালমন, ম্যাকারেল, হেরিং, টাউট।

হৃৎপিন্ডের ক্ষতিকর খাদ্য:

সাদা চাল, আইস ক্রিম, পনির, রেষ্টুরেন্টে তৈরি সুপ, টমাটোসস, ডিপফ্রিজে জমানো খাদ্য, ভাজা মুরগি, ঠান্ডা পায়েস, বিস্কুট, পটেটো চিপস, ডায়েট সোডা, প্যাকেট জাত ফলের রস, ত্বরিত নুডল, পেষ্ট্রি, মার্জারিণ, পপকর্ণ, ক্যান্ডি, শূকর মাংস, কেচআপ, পিজা, আলুর ফ্রেন্স ফ্রাই, গরুর গোস্ত, ইত্যাদি।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter