বীজ বিনিময় জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের চাবি কাঠি


বীজ বিনিময় মানব জাতির একটি ঐতিহ্যগত শক্তি। কৃষি সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই খাদ্য শস্য, আঁশ ফসল, ওষুধি লতা গুল্ম ইত্যাদির বীজ বিনিময় চলে আসছে। দেশ বিদেশ থেকে আহরিত প্রাণ সম্পদ সন্নিবেশ করে স্থানীয় ফসলের জাত সমৃদ্ধ করে চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের চিরায়ত প্রবাহে পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকার উপযোগী সহনশীল জাত বাছাই এর ক্ষেত্রে বীজ বিনিময় একটি প্রগতিশীল ব্যবস্থা। চলমান পরিবেশে কৃষকের হাতে উপযুক্ত জাত বাছাই হয় এবং তা চাষাবাদে টিকে থাকে।

কৃষকের হাতে বীজ রাখা প্রাণ শক্তির সুরক্ষা:

মাঠ থেকে সংগ্রহ করা বীজ শুকিয়ে ঘরে রাখলে পরবর্তী মৌসুমে বপন পর্যন্ত রাখা যায়। তবে আরো ভালভাবে শুকিয়ে বাযূরোধি পাত্রে ঠান্ডা পরিবেশে রাখলে বীজের জীবন কাল বহুগুণে বেড়ে যায়। খোলা অবস্থায় বীজ বায়ুতে বিদ্যমান আর্দ্রতা, গ্যাস এবং অন্যান্য উপাদান গ্রহণ করে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে বীজের সঞ্চিত শক্তি হ্রাস পায়, পরে জীবনি শক্তি নিশেষ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সহজ কৌশল হচ্ছে এ সকল বৈরিতা যেমন তাপ, আর্দ্রতা এবং রোগ বালাই থেকে বীজ নিরাপদে রাখতে হবে। সচরাচর প্রতি ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বীজের জীবনী শক্তি অর্ধেক কমে যায়। আবার বীজের আর্দ্রতা ১% বাড়লে জীবন অর্ধেক হয়ে যায়।

উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা ছত্রাক এবং পোকার আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। তেল সমৃদ্ধ বীজ যেমন চীনাবাদাম, সয়বিন ইত্যাদি এবং পিয়াজ পরিবারের বীজের জীবন কাল খুবই স্বল্প স্থায়ী। এক বছরের কম। মিষ্টি ভুট্টা ও স্বল্প জীবন কালের বীজ। সীম ও মটর শুটির বীজ মধ্যম জীবন কাল সমৃদ্ধ বীজ। কুমড়া পরিবারের (শশা, তরমুজ, লাউ) বীজ শাক-সবজি জাতীয় ফসলের মধ্যে দীর্ঘজীবি বীজ।

গ্রীশ্ম মন্ডলীয় আবহাওয়ায় সাধারণভাবে রাখা বীজ অল্প দিনের মধ্যেই নির্জীব হয়ে যায়। মাঠ থেকে সংগ্রহ করা বীজ রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৫-৭% এর মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। বীজ প্রথমে ৩-৫ দিন হাল্কা রোদে শুকাতে হবে। শেষে মাত্র একদিন কড়া রোদে শুকাতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে বীজের ক্ষতি হবে।

শুকানো বীজ বায়ুরোধী পাত্রে রাখতে হবে। কারণ বীজ বাতাস থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে ক্রমে ক্রমে দূর্বল হয়। বীজ আর্দ্রতা মুক্ত অবস্থায় রাখা প্রয়োজন। সম্ভব হলে রবার গ্যাসকেট দ্বারা বীজ পাত্রের মুখ শক্ত করে বন্ধ করতে হবে। বীজ পাত্রের অর্ধেক শুকনো কাঠ কয়লা, কাগজ, সিলিকা জেল, ক্যালশিয়াম আকসাইড, অথবা ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড দ্বারা ভর্তি করে বাকি অর্ধেক বীজ দ্বারা সম্পূর্ণ ভর্তি করে রাখতে হবে। বীজ পাত্রে কোন রকম ফাঁকা জায়গা রাখা যাবে না। বার বার বীজ পাত্র খোলা হলে এবং দীর্ঘ সময় বীজ সংরক্ষণ করতে হলে আর্দ্রতা শুষে নেয়ার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ বদলাতে হবে।

পোকা থেকে বীজের নিরাপত্তা:

পোকার আক্রমণ থেকে বীজ রক্ষায় জন্য নানা রকম দ্রব্য ও উদ্ভিদজাত উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শুকনো গোবর, শুকনো মরিচের গুড়া, গুড়া হলুদ, সূর্যমুখীর তেল (এক কেজি বীজে এক চা চামচ তেল), শুকনো নীম পাতা (প্রতি কেজি বীজে ৩০টি পাতা) ব্যবহার। ন্যাপথালিন ব্যবহার করেও পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।

সীম জাতীয় ফসলের বীজ পাকা ফল শুকিয়ে রাখা যায়। ভুট্টার বীজ ছড়াসহ শুকিয়ে রান্না ঘরে রাখা যায়। শাক-সবজির শুকনো বীজ পাকা লাউ এর খোলের মধ্যে রেখে গোবর ও মাটির মিশ্রন দ্বারা মুখ বন্ধ করে রাখা যায়। বাঁশের কৌটার মধ্যে ও বীজ রাখা যায়।

কৃষি মানব জাতীর বেহেস্তি উপহার। বীজ তার চাবি। বিনিময় বীজের মাধুর্য। বীজ বিনিময়ের মাধ্যমেই মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। বীজ বিনিময়ের হাত ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন সহজ হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরো সমৃদ্ধ হবে।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter