কুমারঘাটা গ্রামে দাইমায়েরা গর্ভবতী নারী ও প্রসুতিমায়ের যত্ন সব সময় করে থাকে


বাংলাদেশে মাতৃ স্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে দাইদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামে গরীব, অসহায় গর্ভবতী মায়ের পাশে দাঁড়ায় এই দাইমারা। কোন কিছুর বিনিময়ে তারা এই কাজ করেন না। গর্ভবতী মায়ের সেবা করা মানে সোয়াব বা পুণ্যের কাজ বলেই জানেন দাইমারা। সন্তান প্রসবের পরে খুশি মনে যে যা দেয় তাই তারা হাসি মুখে নেন। অনেক গরীব পরিবারে সেটুকু দেবারও সামর্থ নাই। এ বিষয়ে দাইমাদের কোন দাবি নাই।

আমাদের দেশে গ্রামের প্রায় বেশীরভাগ মহিলা সন্তান জন্মদানে দাইমাদের উপর নির্ভরশীল। তাই দাইমাদের সংগঠিত করা, ঝঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়েরা যাতে দাইমার সাথে সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেয়ে সেবা নিতে পারে এবং সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় করতে পারে তার জন্যে পাঁচটি (পাশাপাশি বা কাছাকাছি গ্রাম) গ্রামের দাইদের নিয়ে উবিনীগ ‘দাই ঘর’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই কাজ ভালভাবে করার চেষ্টা চলছে। যাতে মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।

এ বিষয়ে আমি বিভিন্ন জেলাতে কাজে যাই। দাই ঘরের দাইদের সাথে কথা বলি। আজ আপনাদের কাছে কুমারঘাটা দাইঘরের পরিচিতি দিচ্ছি।

কুমারঘাটা গ্রামের বর্ণনা

যশোর জেলার, মনিরামপুর উপজেলার, মনোহরপুর ইউনিয়নের, কুমারঘাটা গ্রাম। চারটি গ্রামের মাঝের গ্রাম কুমারঘাটা। বাকি তিনটি গ্রাম হলো-১. ভবানীপুর, ২. মনোহরপুর, ও ৩. কাপালিয়া। কুমারঘাটা গ্রামের দক্ষিণে ভবদহ এলাকা (সাতক্ষিরার কাছাকাছি)। তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী সুতেশ্বরী। ভবদহ এলাকার চিংড়ি ঘেড়ের মালিকেরা চিংড়ি চাষের জন্য নদী থেকে নোনা পানি গ্রামে ঢোকানোর ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতা থাকে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর। বর্তমানে পানি নিঃষ্কাশনের ব্যবস্থা হওয়াতে জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে।

কুমারঘাটা অনেক বড় গ্রাম। হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস এই গ্রামে বেশী। মুসলমান পরিবার আছে, তবে কম। কুমারঘাটা গ্রামটি গাছ-পালা, গরু-ছাগল সমৃদ্ধ একটি গ্রাম। প্রতিটি হিন্দু বাড়িতেই দেখা যায় জ্বালানী হিসাবে গোবরের ব্যবহার।

কুমারঘাটা গ্রামে হিন্দু দাইমা আছে অন্যান্য গ্রামের থেকে বেশী। দাইঘর করার জন্য প্রথমে চার গ্রামের দাইদের জরিপ করা হয়েছে। এখানে দাইদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। হিন্দু দাইমা ও মুসলমান দাইমাদের মধ্যে কাজের দিক থেকে কোন ভেদাভেদ নাই। কাজের জন্য প্রয়োজনে হিন্দু পরিবারে মুসলমান দাই যায় আবার মুসলমান পরিবারে হিন্দু দাই যায়। দাইদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই এবং এলাকার মানুষও এটাকে স্বভাবিক ভাবেই দেখে। দাইকাজের দক্ষতার দিক থেকে দুই সম্প্রদায়ই সমান। মাঝে মাঝে দাইমায়েরা একত্রে বসে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। প্রয়োজনে একজন দাইমা অপর দাইমাকে ডেকে নেয় তার কাজে সহায়তা করার জন্য। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে দেখা গেছে গ্রামে দাইদের পাশের হার শতকরা ৬০ ভাগ। এদের মধ্যে সর্বনিম্ন পঞ্চম শ্রেণী পাশ এবং সর্বচ্চো এইচ এস সি পাশ।

কুমারঘাটা দাই ঘর

দাই ঘর পরিচালনা করে দাইমায়েরা। নিয়মিত দাইঘরে আসছে গর্ভবতী মায়েরা। দাইমায়েরা তাদের পরামর্শ দেন। গর্ভবতী মায়েদের কম করে চার বার চেক-আপ এর জন্য সরকারী হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন তার পরামর্শ দেয়। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সুবিধা অসুবিধাও দেখেন।

আজ এ পর্যন্তই।

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter