এভিয়ান ফ্লু নিরাপদ পোল্ট্রি জন্যে একটি বাধা


বর্তমান সময়ে পোল্ট্রি পল্লী অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবিকা। আমিষের সরবরাহ এবং অর্থ উপার্জনের জন্য পল্লী অঞ্চলে প্রায় সকলেই কম বেশী পোল্ট্রি ফার্মের ওপর নির্ভরশীল। দেশের মাংসের চাহিদার প্রায় অর্ধেকই পোল্ট্রির মাধ্যমে পূরণ হয়। কিন্তু বার্ড ফ্লুসহ নানা ধরণের রোগ সংক্রমণের ফলে পোল্ট্রি উৎপাদন ও ব্যবসা হুমকির সম্মুখীন হয়। এদেশের ৯০% এর অধিক পোল্ট্রিই জীবন্ত বেচা কেনা হয়। জীবন্ত মুরগী বাজারজাত করার মাধ্যমে প্রধানত: এভিয়ান ফ্লুর বিস্তার ঘটে।

এভিয়ান ফ্লু বা বার্ড ফ্লু অথবা এভিয়ান ইনফুলেঞ্জা একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগ শুধু পাখির রোগ নয় বরং মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীও এ রোগে আক্রান্ত হয়। এইচ ফাইভ এন ওয়ান (H5 N1) এভিয়ান ফ্লু রোগের প্রধান ভাইরাস। এটি পাখির একটি মারাত্মক রোগ। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী দেহেও এর সংক্রমণ হয়। ১৯৯৭ সালে হংকং এ সর্ব প্রথম মানবদেহে এ রোগের সংক্রমণ সনাক্ত হয়। বাংলাদেশে ২০০৭ সালে মানব দেহে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দেয়।

Chicken

এইচ ফাইভ এন ওয়ান ভাইরাস প্রাকৃতিগত ভাবে হাঁসের দেহে বাস করে। তবে সহজেই মুরগীর দেহে সংক্রামিত হয়। মুরগীর বিষ্টা নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে নিসৃত লালার মাধ্যমে এ রোগ মানব দেহে সংক্রামিত হয়। এ রোগর উল্লেখযোগ্য লক্ষণ গুলির মধ্যে আছে: ১. সর্দি কাশি, ২. ডায়রিয়া, ৩. শ্বাসকষ্ট, ৪. জ্বর (১০০.৪ ডিগ্রী ফা: অথবা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়েস), ৫. মাথা ধরা, ৬. পেশির প্রদাহ, ৭. গলা ব্যথা, ইত্যাদি। এইচ ফাইভ এন ওয়ান আক্রান্ত মুরগি দশদিন পর্যন্ত রোগ ছড়াতে পারে। মুরগি খামারি, আক্রান্ত মুরগি, খামারে আগত যে কোন ব্যক্তি, আক্রান্ত মুরগির সংস্পর্শে আসা যেকেউ, আক্রান্ত রোগীকে সেবা দানকারি যে কোন ব্যক্তি এবং আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের যে কোন ব্যক্তির মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি নিউমোনিয়া অথবা শ্বাসকষ্ট জনিত অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। মুরগি খামার এভিয়ান ফ্লু মুক্ত রাখার জন্য যথোপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে:

১. খামারের প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।

২. বুনো পাখি থেকে পোষা মুরগি নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।

৩. মুরগি খামারে প্রবেশের সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে প্রবেশ করতে হবে। পাদুকা জীবানু মুক্ত করতে হবে। হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

৪. মুরগির ঘর ও যন্ত্রপাতি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

৫. জীবন্ত মুরগির বাজারে যথাযথ জৈব নিরাপত্তা অনুসরণ করতে হবে।

ব্যক্তি স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে এভিয়ান ফ্লু মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আক্রান্ত মুরগি থেকে দূরে থাকতে হবে। কমতাপে রান্না করা মুরগির মাংস বা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন নিশ্চিত করতে হবে।

এভিয়েন ফ্লু আতঙ্কে বিভ্রান্ত না হয়ে বরং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পোল্ট্রি লালন পালনে মনোযোগি হওয়া প্রয়োজন। রোগ বালাই প্রতিরোধ নিয়ম নীতি অনুসরণ করে পোল্ট্রি লালন পালন করা জরুরী, কারন পোল্ট্রি আমিষের সহজ লভ্য এবং উৎকৃষ্ট উৎস। পোল্ট্রি এ দেশের জন্য একটি অপার সম্ভাবনাময় সেক্টর। এ সেক্টরের যথাযথ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে পোল্ট্রি সেক্টর হতে পারে বাংলাদেশের অগ্রগতির নির্ভরযোগ্য বাহন।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter