দাই ঘরের জায়গার অংক মেলানো কঠিন কাজ


১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে গিয়েছিলাম সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে দুটো দাই ঘর নির্মানের জায়গা নির্ধারণের জন্য। দাই ঘর যেখানে দাই মায়েরা এসে পার্শ্ববর্তী পাঁচটি গ্রামের নারীদের প্রজনন ও সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা দেবেন, বিশেষ করে যারা গর্ভবতী তাঁদের জন্যে প্রয়োজনীয় উপদেশ দেবেন। শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়াও এই দাই ঘরের অন্যতম কাজ। দেশের পনেরটি জেলায় দাই ঘর হবে ৩৫টি। বিশটি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, বাকী আছে ১৫টি।

তাই সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে যাওয়া। আমরা চারজন একটি মাইক্রোবাসে, সীমা দাস সীমু, সাইদা আখতার কুমকুম ও মাহমুদা বেগম নার্গিস। এই ধরণের সফরের সুবিধা হচ্ছে গাড়ীতে বসেই কাজের কথা সেরে ফেলা যায়। আমরাও তাই করলাম। ভোরবেলা (৬টায়) রওয়ানা দিয়ে যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার হয়ে হাইওয়ে ইন-এ নাস্তা করলাম। ততক্ষণে আমাদের অনেক কাজ হয়ে গেছে। এই অনুভুতি খুব মজার।

যাই হোক। সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শ্রীরাম ইউনিয়নে পাঁচটি গ্রাম নিয়ে একটি দাই ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে সাধারণভাবে দেখতে গেলে মনে হবে না যে গরিব মানুষ আছে। বাড়ীঘরগুলো পাকা, কাঁচা ঘর আছে তবে কম। আসলে বাড়ীর আসল মালিক থাকেন লন্ডন কিংবা আমেরিকায়। 


daighor

গ্রামের মধ্যে দাইঘরের জন্য একটি স্থান নির্বাচন বেশ জটিল কাজ। যাঁরা এলাকায় কাজ করছেন তাঁদের বহু কিছু বিবেচনায় রাখতে হয়


এখানে গরিব মানুষরা অন্যের ঘর পাহারা দেন। তাই ভুল বোঝার সম্ভাবনা থাকে। গ্রামের ভেতরের রাস্তাঘাটও খুব সুন্দর। কিন্তু স্বাস্থ্য সেবা বলতে কিছু নেই। হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিশেবে কাজ করে একপর্যায়ে ডাক্তার হিশেবে পরিচিতি লাভ এমন বিখ্যাত ‘ডাক্তার-চাচা’ও আছেন। এমন চাচারাই ওষুধ দেবার একমাত্র ভরসা। যখন তখন ওষুধ দিয়ে দেন। গ্রামে ঢোকার পথে বড় সড়কের কাছে একটী বড় প্রাইভেট ক্লিনিকও দেখলাম। সরকারি হাস্পাতাল প্রায় ১০ কিমি দূরে। আর যারা নারীদের জন্যে আছেন, তাঁরা হলেন দাই মায়েরা। এদের ছাড়া এই গ্রামের মহিলাদের যাবার কোন জায়গা ছিল না। গ্রামের দাই মায়েরা খুব দক্ষ এবং আন্তরিক। তাদের জন্যে একটি দাই ঘর অবশ্যই হওয়া প্রয়োজন।কিন্তু দাই ঘরের জন্য জায়গা নির্ধারণও বড় কাজ। দাই ঘর এমন জায়গায় হতে হবে যেন পাঁচ গ্রামের মহিলা এবং শিশুরা সহজে আসতে পারেন। তাহলে দাইঘরের গ্রাম হতে হবে মাঝামাঝি। খোয়ারিয়া গ্রাম তেমনই একটি গ্রাম। অন্যান্য গ্রামগুলো একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দাই ঘরের সেবা যারা নেবেন, তাঁরা গরিব জনগোষ্টি। আবার যে দাই মায়েরা সেবা দেবেন তাঁরা কাছাকাছি থাকা চাই। সব মিলিয়ে দাই ঘরের জায়গার অংক মেলানো কঠিন কাজ। সবচেয়ে বড় কথা সব কিছু মিললেই হচ্ছে না, দাই ঘরের জন্য জায়গা দেবেন এমন জমির মালিকও লাগবে, যার কোন বাণিজ্যক স্বার্থ থাকবে না, শুধু মানবিক কারণে, প্রসুতি মায়েদের ও শিশুদের সেবার জন্য তাঁর অবদানের কথা ভেবে দেবেন।

জায়গা পাওয়ার ব্যাপার সম্পুর্ণ শেষ না করেই চলে যেতে হোল, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। সেকথা হবে পরের কোন কিস্তিতে।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter