সুবা আর কোন দিন তার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে না


সব সময় সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা শোনা যায়। এই বিষয়টি সরেজমিনে জানার জন্য উবিনীগের ২ জন কর্মী সামিউল ইসলাম ও রোকেয়া বেগম। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শের-ই-বাংলানগর, ঢাকা যাই।

হাসপাতালের পরিচালকের অনুমতিক্রমে তথ্য প্রদানে সহায়তা করেন হাসপাতালের ডা. হাসান ইমাম চৌধুরী উপ পরিচালক, অধ্যাপক এনায়েত হোসেন, শিশু বিভাগের প্রধান, ডা. খালিদ রেজা, প্রশাসন কর্মকর্তা, ডা. দীপক কুমার নাগ, রেটিনা বিশেষজ্ঞ।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮৯ সালে। আগে এই হাসপাতালটি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মধ্যে ছিল। এটা ভাগ হয়ে শের-ই-বাংলানগর চলে এসেছে ২০০৭ সালে। বাংলাদেশের মধ্যে সব চেয়ে উন্নতমানের চক্ষু হাসপাতাল এটি। সকাল ৮:৩০ থেকে ২:৩০ মিনিট পর্যন্ত এখানে বর্হির বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টার রয়েছে। টিকিট নেয়ার পর রোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাথমিক পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করে। এখানেও মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা রুম রয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে যার যেখানে প্রয়োজন ডাক্তার তাকে সেই রুমে পাঠিয়ে দেন। শিশুদের দেখা হয় পঞ্চম তলায়। শিশুদের রেজিট্রেশনের রুমের পাশে রয়েছে শিশুদের খেলার জন্য কিছু খেলনা। রোগী বেশি বলে অপেক্ষা করতে হয় এ সময় শিশুরা খুশী মনে সময় কাটায়। সরেজমিনে সকাল ৯ টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি রুমে ডাক্তার ও নার্স কর্মরত রয়েছে।

বর্হি বিভাগ ছাড়াও এ হাসপাতালে আন্তঃবিভাগও রয়েছে। আন্তঃবিভাগে ২৫০ টি বেড হয়েছে। ভর্তি রোগীদের অপারেশনের সময় কিছু ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়।

ভর্তি রোগীদের খাবার হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়। বর্হি বিভাগে প্রতিদিন ৫০০ মত রোগী আসে। বর্হি বিভাগের টিকিটের দাম মাত্র ১০ টাকা। বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে যেমন বর্হি বিভাগ, টিকেট কাউন্টার, কর্ণিয়া ক্লিনিক, গ্লোকোমা ক্লিনিক, ভিট্রিও রেটিনা ক্লিনিক, অকুপ্লাষ্টিক ক্লিনিক, কার্ডিওলজি বিভাগ, ই-এনটি, ওয়েট ল্যাব, প্যাথলজি বিভাগ, লো-ভিশন ক্লিনিক, ইমেজিং বিভাগ, এক্সরে, লিলেন স্টোর, রেডিও লজি, ইসিজি বিভাগ, দন্ত বিভাগ, শিশুদের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে শিশু ও চক্ষু রোগ ইউনিট। ডাক্তার রয়েছে ১৫০ জন এর মধ্যে ১০ টি পদ খালি আছে। এর মধ্যে দুইটি অধ্যাপকের পদ খালি রয়েছে। সেবিকা রয়েছে ২০৫ জন। কোন পদ খালি নেই। চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য এই হাসপাতালে রয়েছে উন্নমানের সব যন্ত্রপাতি। সরকারি যে সব ওষুধ সরবরাহ করা হয় তা ঠিকমত পাওয়া যায় বলে জানান উপ পরিচালক ডা. হাসান ইমাম চৌধুরী।

ডা. দীপক কুমার নাগ চোখের যাবতীয় পরীক্ষার বিষয়টি দেখান। যেমন চোখের এনজিও গ্রাম, চোখের আলট্রাসনোগ্রাম, রেটিনাল লেজার পরীক্ষা চোখের স্কানিং। এসব পরীক্ষা ছাড়াও শিশু ও চক্ষু ইউনিটে বাচ্চাদের সিল্ট ল্যাম্প পরীক্ষা করা হয়। রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা খুব ভাল। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে আমাদের চোখে একটি ঘটনা পড়েছে তা হলো কার্ডিও লজি বিভাগে হৈচৈ শোনে এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে অপৃতিকর ঘটনা ঘটছে তা হলো ডাক্তার রোগীদের বলছেন বেড়িয়ে যান। যতটুকু বুঝা গেল তা হলো দিনটি ছিল শনিবার রোগীর ভিড় ছিল খুব বেশি। রোগীরাও তারাতারি ডাক্তারের দেখা পাওয়ার চেষ্টা করছিল। ডাক্তার রোগীর ভিড় সামাল দিতে না পেরে এমন আচরণ করছিলেন। ফলে এধরণের ঘটনার অবতারণা হয়।

একটি কেসষ্টাডি তুলে ধরেন অধ্যাপক এনায়েত হোসেন, শিশু বিভাগের প্রধান।

সোবহা ইসলাম বয়স ২ বছর, দেশের বাড়ি নোয়াখালী। সুবা জন্মজনিত অন্ধত্ব রোগে ভুগছিল। চক্ষু বিজ্ঞানে শিশুদের চিকিৎসা ভিন্নতর। তাদের কে নিদ্রিষ্ট সময়ে অপারেশন করতে হয়। ছোট বেলায় তার খিচুনি হতো। অন্যান্য সমস্যা থাকায় তার অভিভাবক তাকে এখানে আনেননি। বাংলাদেশ মেডিকেলে ভর্তি করেন তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। বাংলাদেশ মেডিকেলের চিকিৎসকরা বলেছেন এই চিকিৎসা খুব ব্যয় সাপেক্ষ। তাই ডাক্তারা সেখান থেকে চক্ষু বিজ্ঞান ইস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। প্রথম অপারেশন হয়েছে ১২ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১৪ দ্বিতীয় চোখ অপারেশন হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪।

চক্ষু বিজ্ঞান ইস্টিটিউটে খুব স্বল্প মূলে শিশুদের চিকিৎসা করে থাকে। সরকারি অনুদান ছাড়াও কিছু আন্তর্জাতিক এনজিও প্রতিষ্ঠান এখানে অর্থ সহায়তা দেন। সময় মত যদি তাকে আনা হতো তাহলে হয়তো তার চোখ ২টি রক্ষা করা সম্ভব হতো। দুঃখের সাথে বলতে হয় সুবা হয়তো আর কোন দিন তার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে না। সবার কাছে অনুরোধ জানাবো রোগীরা যেন সঠিক সময়ে আমাদের কাছে আসেন।

কেসষ্টাডি- ২

আহসান উল্লাহ এই হাসপাতালের একজন ভর্তি রোগী কথা হয় তার সাথে। আহসান উল্লাহর বয়স ১৯ বছর। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা নুরপুর দক্ষিণ পাড়া। ৫ জানুয়ারি আমাদের এলাকায় জাতীয় নির্বাচন হয়। ভোটের সময় সতন্ত্রপার্টি ও আওয়ামীলীগ মারামারি করে। ৮ জানুয়ারি দুই গ্রুপের মধ্যে আবার মারামারি শুরু হয়। আওয়ামীলীগের লোকেরা পুলিশকে ফোন দেয়। পুলিশ ঝগড়া থামাতে না পেরে গুলি ছুড়ে। ঐগুলির দুইটি স্পিলন্ট আমার ডান চোখে পড়ে। প্রথমে আমাকে কুমিল্লা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিটিউটে ভর্তি করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি আমার চোখ অপারেশন করে স্পিলন্ট বের করা হয়। আমাকে ২৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়ার কথা। তবে পুরো টাকা দিয়ে এখান থেকে বের হতে হবে। প্রতিদিন ছিট ভাড়া ২৭৫ টাকা। অপারেশন চার্জ ১০০০ টাকা ওষুধ পত্র সব বাহির থেকে কিনতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ২ ফোটা চোখের ড্রপ ও ব্যথার জন্য পারাসিটামল ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে খাবার দেয়া হয়। পেঁপে সিদ্ধ, ডাল, মাছ, সকালে ২ পিছ রুটি ১টি কলা ১টি ডিম দেয়া হয়। বিকেলে ২ পিছ বিস্কিট ১ টি কলা রাতে ভাত তরকারি। তরকারি সব মসলা ছাড়া দেয় বলে খেতে পারি না। ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহার ভাল। এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভাল।

কেসষ্টাডি-৩

মরিয়ম বয়স ৪৬ বছর। গ্রামের বাড়ি ঘোড়াশাল থানেপুর সরকারখানা,পলাশ। আমার চোখে ম্যাজের মত হয়েছিল। বাম চোখে কম দেখি। মাঝে মাঝে চোখে লাল রক্ত জমে যায়। কালীগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালে ২ বার দেখিয়েছি। সেখান থেকে ১ টি চোখের ড্রপ দিয়েছে। একটি কালো চশমা দিয়েছে। নরসিংদী চোখের হাসপাতালে ২ বার গেছি তারা দেখে ওষুধ লিখে দিয়েছে। তাতে চোখ ভাল হয়নি। আমার পরিচিত একজন তার বাচ্চাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিটিউটে এনে অপারেশন করেছে তার চোখ ভাল হয়েছে। সে আমাকে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। এক মাস পর পর আসি প্রথমে একটি ড্রপ দেয়। ড্রপ দেয়া পর চোখে রক্ত জমে যায়। আবার এসে দেখিয়েছি তার পর ঐ ড্রপ পাল্টিয়ে অন্য ড্রপ দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে একটি ড্রপ দিয়েছে। ২টি বাহির থেকে কিনে নিয়েছি। এখন চোখ আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা অপারেশনে কথা কিছু বলেনি। চোখের ভিতর কালো হয়ে আছে। মাত্র ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটি। গত শনিবার এসে ছিলাম তখন টিকিট কেটেছি আজ আর টিকিট লাগবে না। আমি মনে করি এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক ভাল।

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter