‘ভুল চিকিৎসা’ না অবহেলা


স্বাস্থ্য আন্দোলন নেটওয়ার্ক ১৩ এপ্রিল, ২০১৪ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভি আই পি লাউঞ্জে “ভুল চিকিৎসা না অবহেলা” শিরোনামে চিকিৎসক, ও রোগীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এক পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। এ সভায় অংশগ্রহণকারী সদস্য সংখ্যাছিল মোট ৯৭ জন। তারা হলেন চিকিৎসক, আইনজীবি, গবেষক, সাংবাদিকসহ স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত সংগঠনের প্রতিনিধি। সভাটি সঞ্চালনা করেন পলাশ বড়াল, পরিচালক, উবিনীগ।


 

স্বাস্থ্য আন্দোলন ১৩ এপ্রিল ২০১৪


বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা সরকারি বা বেসরকারি উভয়ই বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ রোগীর মৃত্যু অথবা বিকলঙ্গতা দৈনিক খবরের কাগজে দেশের প্রায় সব গুলো জেলা থেকেই এধরণের খবর ছাপা হয়। ড. মুনীর উদ্দীন আহমেদ এর এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়। জনস্ হপকিনস স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের অধ্যাপক বারবারা স্টারাফিল্ড ‘দ জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লিখেছেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত ভুলভান্তি যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম মৃত্যুর কারণ। রিপোর্টে আরো উল্লেখ করেন, অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের কারণে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে দুই হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করে। ওষুধের অপপ্রয়োগের কারণে মৃত্যুবরণ করে সাত হাজার রোগী। ২০ হাজার রোগী মারা যায় হাসপাতালের অন্যান্য ভুলের কারণে। হাসপাতালে উৎপন্ন সংক্রামক রোগে মারা যায় ৮০ হাজার রোগী। এক লাখ ৬ হাজার রোগী মারা যায় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়ার কারণে। এর অর্থ হচ্ছে চিকিৎসা সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তি, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও ওষুধের অপপ্রয়োগে, ভুল অস্ত্রোপচার, সংক্রামক রোগের আক্রমণ ও চিকিৎসক কর্মচারী, কর্মকর্তাদের অবজ্ঞা, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর সর্বমোট দুই লাখ ২৫ হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষকরা দেখতে পান, ১৩ শতাংশ রোগী স্বাস্থ্যসেবার কোন না কোন ভুলের কারণে পরবর্তী সময়ে মৃত্যুবরণ করে।

 

এতে মনে হয় ব্যাপারটা সর্বত্র বিস্তৃত অবশ্য এ প্রবণতা নতুন কিছু নয়। এ ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তবে এর কোন সুষ্ঠু সমাধান দেখা যাচ্ছে না। আমাদের মত অনুন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসক, নার্স হাসপাতাল কতৃপক্ষ কোন সময়ই তাদের ভুল হলে সে কথা স্বীকার করে না। গ্রাম বলি আর শহর বলি যত্রতত্র ক্লিনিক গড়ে উঠছে ঠিক কিন্তু গুনগতমানের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তারপরও দরিদ্র মানুষ সুস্থতা ও বেঁচে থাকার জন্য যায় সরকারি হাসপাতালে। বেসরকারি হাসপাতাল এবং এর খরচের কথা দরিদ্র মানুষ ভাবতেই পারে না। ডাক্তারের কাছে গেলে একটি প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেয়। বেশির ভাগ মানুষ ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খায়। অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে থাকে। ফলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। সাম্প্রতিক কালে রাজশাহীতে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসার ফলে এক রোগীর মৃত্যুর খবর আবার খবরের শিরোনাম হয়েছে। এ ঘটনায় শুধু যে রোগীর মৃত্যু হয়েছে তা নয় চিকিৎসকরা ও অনিদ্রিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট পালন করছেন। ২৮ মার্চ, ২০১৪ সকাল থেকে সরকারি বেসরকারি হাপাতাল ও ক্লিনিক সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসকদের ধর্মঘটের উদ্দেশ্য হচ্ছে আদালতের রায়ের প্রতিবাদ করা যে আদেশের ফলে শংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও ক্লিনিকের মালিকের ভুল চিকিৎসার দায়ে জেল হয়েছে। সাতটি পেশাজীবি সংগঠন যেমন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বি এম এ) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (আর এম সি এইচ); এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন এবং তাদের মূলদাবী হচ্ছে ঘটনার সাথে জড়িত ডলফিন ক্লিনিকের মালিক ডা. সামিউল হক শিমুলের মুক্তি। ইতিপূর্বে রাজশাহীর চিফ মেটোপলিটান ম্যাজিজট্রেট ২৭ মার্চ তারিখে জামিনের আবেদন খারিজ করে দিযে ডা. সামিউল হক শিমুলকে জেলে পাঠিয়েছেন। ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় একজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেয়া হয়। নিশ্চয় হঠাৎ এ ধর্মঘটের ফলে হাজার হাজার রোগী অবর্নণীয় দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, চিকিৎসক জোর করে ধরে এনে কাউকে চিকিৎসা করেন না। রোগীরা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের কাছে আসে। একজন রোগী এবং একজন ডাক্তারের মধ্যে যে সম্পর্ক তা হচ্ছে বিশ্বাসের সম্পর্ক। এ বিশ্বাসের বন্ধনেই একজন রোগী একজন ডাক্তারের কাছে যান। কিন্তু যখন কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে তখনই এ বিশ্বাসের বাঁধন ছিড়ে যায়। চিকিৎসকদের সাথে জনগণের যে ঘটনা ঘটছে তা নিরসন হওয়া দরকার। আমাদের জানা দরকার যে কেউ মেডিকেল কোর্স শেষ করেই ডাক্তার হয় না। ডাক্তার হিসেবে স্বাীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশ মেডিকেল এবং ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে রেজিট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে হয়। সনদ ছাড়া কেউ যদি তার নামের পাশে ডাক্তার লিখে তা অবৈধ। যিনি চিকিৎসা সেবা দেন তার সঠিক সনদ আছে কিনা তা দেখা দরকার।


 

স্বাস্থ্য আন্দোলন ১৩ এপ্রিল ২০১৪


তবে ভুল চিকিৎসা বলে কিছু নেই। সনদ প্রাপ্তির পরে কোন চিকিৎসকের কাজের মধ্যে ভুল হতে পারে। চিকিৎসক চিকিৎসা জানে না এটা কেউ বলতে পারবে না। চিকিৎসক যদি না বুঝে যে বুঝে তার কাছে পাঠিয়ে দেবে। অর্থাৎ রেফার করবে। চিকিৎসকদের সাথে জনগণের যে ঘটনা ঘটছে তা নিরসন হওয়া দরকার এটা হতে পারে অবহেলা জনিত আচরণ। আদালতের রায়ের প্রসঙ্গে আমরা বলিনা ভুল বিচার হয়েছে, এধরণের কথা বললে আদালত অবমাননার অপরাধ হয়। ডাক্তারের ক্ষেত্রেও এ কথা কেউ বলতে পারেন না যে “ভুল চিকিৎসা”। ডাক্তার সাহেবরাও মানুষ তারাও ভুল করতে পারেন। এমন কি অবহেলার দায়ে দায়ী হতে পারেন। কিন্তু তারা অপরাধী নন। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন একজন ডাক্তার কি দক্ষ অথবা অদক্ষ। সে যাই হোক যিনি অর্থের বিনিময়ে সেবা গ্রহণ করবেন তিনি কেন অবহেলার শিকার হবেন। তাহলে রোগী যাতে ডাক্তারের কাছ থেকে সার্বিক সেবা পান, সে নিশ্চয়তা কে দেবে? বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বি এম ডি সি) ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না। এ সংস্থাটি প্রেস কাউন্সিলের চেয়েও দুর্বল। আইন থাকা প্রয়োজন যাতে করে অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য রোগীরা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। একই ভাবে ডাক্তারদের অধিকার রক্ষার জন্য ও আইন থাকা প্রয়োজন। যাতে ডাক্তারা নিপিড়নের শিকার না হন। প্রাইভেটে চিকিৎসা খরচ বাড়বে। কারণ তখন ডাক্তার আরো বেশি বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তবে চিকিৎসা পত্র লিখবেন। আইন কমিশন এ ধরণের আইনের কথা ভাবছেন। ভারতে ডাক্তারের রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন ভুলের জন্য শাস্তি যোগ্য কোন অপরাধের বিধান নাই এবং তাদের গ্রেফতার করা যায় না। সাংবাদিকরা বলছে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেছে। তার কি রাইট আছে ভুল চিকিৎসা হয়েছে এটা বলার। সংবাদ কর্মীরা বলতে পারে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। সংবাদ কর্মীরা এটা কেন বলে মনে হয় চমক প্রদ সৃষ্টি করার জন্য। স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে যারা রিপোর্ট করেন তাদের হয়তো স্বাস্থ্যের সব বিষয় জানা নেই। ভুল চিকিৎসা রাষ্ট্র বা চিকিৎসকদের কারো লাভ হয় না। কোন চিকিৎসককে অবহেলার জন্য গ্রেফতার করা যাবে না। তার সব ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। ভুল চিকিৎসা বলা হলে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দুর্বল করা হবে। অবহেলা বলা যেতে পারে। অপচিকিৎসা হচ্ছে তারও কোন আইন কাজ করছে না। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে যে অপৃতিকর ঘটনা ঘটছে তা আইন করে সুষ্ঠু ব্যবস্থা হওয়া দরকার। ক্ষমতাবান যারা তারা এ ধরণের ঘটনা ঘটায়। আজ পর্যন্ত তার কোন বিচার হয়নি। সমঝোতা করে টাকা পয়সা দিয়ে সমাধান করতে হয়। আসলে যারা ভাংচুর করে তারা রোগীর লোক না। চাঁদাবাজরা এই কাজ করে। হয়তো চাঁদা চেয়েছিল দেয়নি। আচরণ বিধি মেনে চললে এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না। সরকার ঠিকমত মনিটরিং করলে এত ঘটনা ঘটতো না। এ্যানেসথেসিয়া করতে গিয়ে রোগী মারা গেছে। যে এ্যানেসথেসিয়া দিয়েছেন সে আসলে দক্ষ ছিল কিনা? যদি দক্ষ লোক না থাকে তা হলে অপারেশন করার প্রয়োজন নাই। কথায় কথায় ডাক্তারার চিকিৎসা বন্ধ করে দেয় এটা ঠিক নয়। চিকিৎসা ব্যবস্থার মান ভাল হওয়া দরকার। চিকিৎসকদের মধ্যে সমঝোতা করে চিকিৎসা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন করতে হবে। ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে কোন রকম সমস্যা হলে তা মীমাংসার জন্য আলাপ আলোচনা ও সমঝোতার ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। একটা আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।

 

সৈয়দ মাহবুবুল আলম, পরিচালক, ডাব্লিউ বিবি ট্রাস্ট।

আমরা শুধু খারাপ জিনিসটাই দেখি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় প্রতিবছর সরকারি হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ১৩ কোটি মানুষের সেবা নেয়। ইনডোরে ৫৪ হাজার মানুষের সেবা দেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধন্যবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০০ হাজার জনবল ১০ লক্ষ মানুষের সেবা দেয়। অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকা সত্বেও তারা ধৈর্য্য সহকারে সেবা দিচ্ছে। কিন্তু এমন কিছু রোগী আসে যেসব রোগী এখানে রেফার না করলেও চলতো। অযথা রেফারের কারণে ডাক্তারদের উপর যে অতিরিক্ত চাপ এটা কমানো যায় কিনা। চিকিৎসা নিতে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যায়। বাংলাদেশে অনেক দক্ষ ডাক্তার রয়েছেন তারা ইচ্ছা করলে সেবা দিতে পারেন। ভুল চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে আসলে ভুল না অবহেলা এটা টেকনিক্যাল বিষয়। বাংলাদেশে এমনও লোক আছে যারা চিকিৎসক না। কিন্তু তারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা রোগীকে জিম্মি করে এ ধরনের ব্যবসা করছে। এটা অনৈতিক। বি এম ডি সি কেন এর সমাধান করবে না। চিকিৎসকদের পরিচিতি বি এম ডি সি তুলে ধরতে পারে। বাংলাদেশ মেডিকেল এ- ডেন্টাল কাউন্সিল (বি এম ডি সি) অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ওয়েবসাইড ও অকার্যকর সেখানে প্রয়োজনীয় কোন তথ্য পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও কোন ভূমিকা পালন করছে না। চিকিৎসায় ভুল কোন জ্যাস্টিফাই না করে ডাক্তারদের জেল হাজতে প্রেরণ করা ঠিক নয়। কোন ঘটনা ঘটলে ডাক্তাররা যে ধর্মঘট করে এটা অনুচিত।


 

স্বাস্থ্য আন্দোলন ১৩ এপ্রিল ২০১৪


ডা. লেলিন চৌধুরী, প্রিভেন্টিব মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, হেলথ্ এন্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতাল। সারা দেশে রাজনীতির বাইরে যে বিষয় নিয়ে ক্ষত বিক্ষত সেখানে জীবন হানি বা অঙ্গ হানি হয় তা হলে কি করবো। জীবন বাঁচানোর জন্য যদি অঙ্গ হানি ঘটে তবে তা বিচারের আওতায় আসা উচিত। কোন রোগী ভুলের জন্য মারা যায় তাহলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। হৃদরোগের রোগীকে মরফিন ইনজেকশন দিতে হয়। কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল বলে রোগী মারা গেল। রোগীর লোকজন বললো ভুল ইনজেকশন দিয়ে আমার ভাইকে মেরে ফেলা হল। পুলিশ এসে ডাক্তারকে ধরে নিয়ে গেল। কি করবেন। তবে ডাক্তারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে ধর্মঘট ডাকে এটা সমর্থন যোগ্য নয়। দুই দিক থেকে সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিক দলের কোন লোক আমাদের কাছে আসলে হাসপাতালে হাট বসে যায়। ভাইরাস জ্বরের জন্য ৭ দিন হাসপাতালে থাকে। তখন ডাক্তার বসে বোর্ড বসাই আমরা বলি রোগীকে সিংগাপুর নিয়ে যান। এটা আমরা ইচ্ছা করে বলি। উন্নমানের যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে রয়েছে। কিন্তু কেন যায়। কিছু হলে ডাক্তারকে তলব করা হবে। আমরা তাদের ভয় পাই। উপজেলা হাসপাতালে কাজ করেছি সেখানে যে ওষুধ আছে এর বাইরে কোন ওষুধ লেখা যাবে না। কিন্তু রোগীরা চায় বেশি ওষুধ ৫ টা ওষুধ লিখতে হবে। তা না হলে ডাক্তার ভাল না। রোগীকে রেফার করা যাবেনা কারণ রোগীরা এ্যাম্বুলেন্স চাইবে। রোগীরা বলে সব রোগের জন্য পারাসিটামল ও এন্টাসিড দেয়। টিআইবির গবেষণা রিপোর্টে অনেকের দুনীতির কথা এসেছিল। তাদের তখন চাপ সৃষ্টি করা হয়। স্বাস্থ্য সেবার মধ্যেও দুনীতি রয়েছে। রাষ্ট্র যখন চিকিৎসাকে পণ্য হিসেবে দেখেছে এখানে দুর্নীতি থাকবেই। এখান থেকে স্বাস্থ্য সেবাকে মুক্ত করতে হবে। এখান থেকে মুক্ত হতে চাইলে একটি সংগঠন থাকতে হবে। বিশেষ ধরণের আদালত থাকতে হবে। সেখানে এমন লোক রাখতে হবে যারা বলতে পারবে রোগীর কি হয়েছিল। ডাক্তারা এখন ৫০০ শত টাকা ফি নেয়। ইন্সুরেন্স এর কথা বলা হয়েছে এটা হলে প্রিমিয়াম দিতে গিয়ে চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে। হেলথ অডিট হওয়া দরকার। হার্ট এটাকের রোগী চিকিৎসা নেয়ার পর আবার রাস্তায় গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়। বলা হয় ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেছে। টিউমার কি করে ক্যান্সার হয়। যে রোগীর কথা বলা হয়েছে টিউমার কাটার পর ক্যান্সার হয়েছে। আসলে ঐ রোগীর আগেই ক্যান্সার ছিল। চিকিৎসকদের তদন্ত হওয়ার পর গ্রেফতার করতে হবে। পত্রিকায় কোন সংবাদ বের হলে প্রত্রিকা দেখেই ভাংচুর করে এতে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এটা ক্রিমিনাল ‘ল’ যাবে না সিভিল এ্যাকটে যাবে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। যে দেশের রাষ্ট্র ঠিক করে ক্ষতা থাকলে সেবা কিনতে পারবেন। সেটা মানবিক ব্যাপার হয় কি করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে বিকেলে টাকা নিয়ে রোগী দেখা হয়। তা হলে সেবা কোন দিকে যাচ্ছে বুঝতে পারছেন। এই সব কার্যকলাপ যত বেশি বন্ধ করা যাবে তত বেশি স্বাস্থ্য সেবা উন্নত হবে।

 

ডা. আবু সাইদ, অধ্যাপক ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজ (বারডেম)

চিকিৎসা ব্যবসা হয়ে গেছে। সেবা যখন পণ্য সেটার জন্য যা প্রয়োজন হয় সেটা হল পুঁজি। সাংবাদিকরা এখন পুঁজির বিষয় হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য হচ্ছে জনগণের স্বাস্থ্য জনগণেরই হতে হবে। স্থানীয় সরকারের কাছে এটা ছেড়ে দেন। মাথাপিছু টাকা ভাগ করে দিলে জনগণ জানবে। মানুষ জানে না তার জন্য বরাদ্দ কত। প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশীপ করা হচ্ছে। গরিবের পক্ষে কোন আইন নাই।

সেবাকে প্রাইভেটাইজেশন করে ফেলা হচ্ছে। পুঁজির অনেক শক্তি। পুঁজিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রাকটিস করা অবশ্যই প্রয়োজন। সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেসরকারিতে চলে যায়। সেবার কথা ভাবে না তারা বড়লোক হতে চায়। একটি উদাহারন দিয়ে বলেন তার মাকে নিয়ে তিনি রিক্সায় উঠে ছিলেন বলে তার মা তাকে বলতো তুই ফকির ডাক্তার। স্বাস্থ্য সেবায় ইন্সুরেন্স হলে খরচ বাড়বে। মানুষের প্রতি মানুষের যে সহমর্মিতা ছিল তা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ভাল সমাজ পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

ডা. দিপল কৃষ্ণ অধিকারী, সহকারী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহীর যে ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চয় সবাই পড়েছেন। আদালতের ভূমিকা এফ আই আরে নাম ছিল না। ম্যাজিজটেড সাহেব কোন আইনের বলে তাকে গ্রেফতার করেছেন। কারো নামে কোন এফ আই আর না থাকলে গ্রেফতার করতে পারেন কিনা? এটা আমার প্রশ্ন। চিকিৎসকদের উপর আক্রমন হলে তারা কার কাছে বিচার চাইবে? মান্নার কেইসটা পুরো সাংবাদিকদের কারসাজি ছিল। তার আত্মীয় স্বজন ডাক্তাদের চিকিৎসা করতে দেয়নি। বলে ছিলেন তাকে বাইরে নিয়ে যাবেন। আগে তিনি ইন্ডিয়াতে এনজিওগ্রাম করে ছিলেন। তার তিনটি ব্লক ছিল। পরিচালক তাকে কাজ দেবেনা বলে সেটা সে গোপন করে ছিলেন। বাসা থেকে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। রাত তিনটায় প্রথমে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে ঝগড়া করে পরে এসেছেন এই হাসপাতালে। তখন তার জ্ঞান ছিল না। বুক স্পন্দন আসার পর তার ভাই বলেন এখন যা করার করেন। রোগীর লোকেরা যে অবহেলা করেন তার কি করবেন। দেশের চ্যানেল গুলিতে বিদেশের প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এটা কোন ধরনের দেশ প্রেম (চ্যানেল আই এটা করেছে) পত্রিকায় প্রতিবাদ দেই। একটি পত্রিকায়ও সেই প্রতিবাদের কথা ছাপেনি। ভুল চিকিৎসা মানে কি? ভুল চিকিৎসা হলে কত বছর জেলে দেবে আইনে তা কিছু লেখা নেই। আইন ঠিক করতে হবে। ডাক্তারী চিকিৎসা ব্যবসাটা প্রাচীন একটি পদ্ধতি। ব্যবসা করলে চিকিৎসক ভাইয়েরা কি করে আশা করেন সমাজে সম্মান পাবেন। আপনারা সেবা দেবেন এটা সঠিক। চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে সরকার ভর্তুকি দেয়। সেটা কোথায় যায় তা দেখতে হবে। অবৈধ চিকিৎসক এর মানে হচ্ছে যাদের বি এম ডি সির রেজিট্রেশন নাই। কিন্তু এই ধরণের ডাক্তারা ঢাকা শহরে দাপটে চলেন। তাদের বেলায় কি বলবেন। টর্ট আইন যদি বাংলাদেশে হয় তাহলে স্বাগত জানাবো। চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে এটা ঠিক না। রাষ্ট্র যদি দায়িত্ব নেয় তা হলে কেন চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে? এক রোগীর কার্ডিয়াক এ্যাটাক হয়েছিল বলে তাকে সিপিআর দিতে ছিলাম। পরে বলেছে রোগীকে বুক চেপে মেরে ফেলা হয়েছে। রোগীর লোকের হাতে অনেক মার খেয়েছি। আপনারা বলছেন স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে নয়। সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে চাই। রাষ্ট্র যদি কখনো মানবিক হয় তা হলে এটা সম্ভভ। চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। এটা কিভাবে ফিরিয়ে আনবেন। ডাক্তারা কখনো ভিলেন হন। কখনো ভগবান হয়ে যান। জেনে শুনে বুঝেই আমরা এই পেশায় এসেছি।

এস এম সৈকত নির্বাহী পরিচালক, সিরাক বাংলাদেশ। ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসা আইনের দিক থেকে বলছি। ১৯৩২ সালে যুক্তরাজ্যের একটি মামলার ব্যাপার নিয়ে বলছি কেইস টি ছিল বিয়ারের বোতলে পচা শামুক পাওয়া গিয়েছিল। এটা নিয়ে মামলা করেছিল বলেছিল এটা হেলথ্ রিক্স। অবহেলা কোন ক্রাইম না। অবহেলা হলো অবহেলা কেউ অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেবে। কোন ব্যবস্থায় তাকে কেইস করা হবে। প্রাণহানি হলে পুলিশ দিয়ে ধরাতে পারি না। আদালতের স্মরনাপন্ন হতে পারি। রাষ্ট্রীয় সুবিধায় সরকারি যারা আছেন। বেসরকারি হাসপাতালে তারা কারা? জেলা শহরে কারা অপারেশন করেন? ময়মনসিংহ শহরকে আগে বলা হতো স্বাস্থ্যের শহর। আমি বলবো এখন অ-স্বাস্থ্যের শহর। ঘন ঘন প্রাইভেট ক্লিনিক হয়েছে। স্বাস্থ্যটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ড. মুনির উদ্দিন আহমেদ এর একটি লেখা থেকে জানা গেছে কর্মচারী, কর্মকর্তাদের অবজ্ঞা, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর সর্বমোট দুইলাখ ২৫ হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করে। হাসপাতালে সিট বাড়ালে স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হয় কিনা। সংবিধানে আমার স্বাস্থ্যের অধিকার দেয়নি। বি এম ডি সি কাকে নিবন্ধন দিবে কাকে দেবেনা সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা তাদের কোন ভূমিকা দেখছিনা। মেডিকেল নেগলেজেন্সির বিষয়ে আইনে তেমন কিছু নাই। চিকিৎসা এমন একটি বিষয় আইন দিয়ে এটা সম্ভব না।

বিলকিস বেগম চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসুতি বিভাগ, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আমার পেশা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশা। আমি গাইনির ডাক্তার অবহেলা হতে পারে। ডাক্তারের ভুলের কারণে যদি রোগী মারা যায় তা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। রক্তক্ষরণ হচ্ছে এমন খারাপ রোগী হাসপাতালে আসলে তার রক্ত কি করে বন্ধ করা যায় তার চেষ্টা করা। একটি উদাহর দিয়ে বলেন, এক ভদ্র মহিলা বিদেশে থাকেন তিনি আমার কাছে এসেছিলেন তাকে যেন আমি একটা সাইকোলজিক্যাল সমস্যা আছে। এটা লিখে একটি সার্টিফিকেট দেই। তাহলে তিনি দেশের বাইরে গিয়ে কেইস করলে কিছু টাকা তুলতে পারবেন। এই যদি মনমানষিকতা হয়। তা হলে আমরা কি করতে পারি। আমি তাকে সার্টিফিকেট দেইনি। রোগীরা আমাদের কাছে অনেক কিছু গোপন করে। ফলে চিকিৎসা করতে গিয়ে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এক রোগী আমার কাছে এসেছিল তার রক্ত সহজে জমাট বাধেনা। কিন্তু আগে সে এই কথাটি আমাদের বলেনি। ডিএন্ডসি করতে তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ২ ব্যাগ রক্ত দিয়ে সেই রোগীকে বাঁচালাম। এই রোগী যদি মারা যেত তা হলে পত্রিকায় খবর বের হতো। ডিএন্ডসি করতে গিয়ে রোগী মারা গেছে। কুমুদিনী হাসপাতালে কাজ করি তার পাশে ৭/৮ টি ক্লিনিক। প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা করে পরে নানা সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। যত্রতত্র ওষুধের দোকান এটা বন্ধ করা উচিত। ভাইরাস জ্বরের জন্য সিপ্রোফ্লক্সিন দেয়। ডাক্তার ও রোগী সবাইকে ব্যাপারটা বুঝে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র যদি এগিয়ে না আসে তাহলে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়।

ফিরোজা বেগম, নির্বাহী পরিচালক, বাঁচতে শেখ নারী। ভুল চিকিৎসা মানতে পারি কিন্তু অবহেলা জনিত চিকিৎসা এটা মানতে পারবো না। চিকিৎসা সেবা প্রাইভেট হয়ে যাক এটা চাই না। হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার পর ১ ঘন্টা মধ্যে কোন ডাক্তার আসেনি। পরে রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। এমনও ঘটনা শুনেছি একজন নার্সের মুখে। ডাক্তার রোগীকে ইনজেকশন দিতে বলেছে নার্স ইনজেকশন দিতে ভুলে গেছে। এই বিষয়গুলি আমরা কিভাবে দেখবো। চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীর কোন ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু একটু কিছু বলা হলেই ডাক্তার কাজ বন্ধ করে দেয় এটা উচিত না। সাধারণ জনগণের সেবা নিয়ে সরকার গরিমশি করতে পারে না। স্বাস্থ্য সেবাকে আমরা সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে দেখতে চাই।

খলিলুর রহমান, পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা। আমার ধারণা চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারেন। অলিতে গলিতে ফার্মেসী গড়ে উঠেছে কতজন ওষুধ সম্পর্কে জানেন। এমন একটি ফার্মেসী থাকবে যেখানে মানসম্পন্ন ওষুধ পাওয়া যাবে। ডাক্তাররা ওষুধ কোম্পানির লোকের সাথে গল্পে ব্যস্ত থাকেন। এ জন্য রোগীর চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত ঘটে। একটি নিয়ম থাকা উচিত ওষুধ কোম্পানির লোক নির্দ্রিস্ট একটি সময়ে হাসপাতালে আসবে। স্বাস্থ্য হানির যে মামলা হয় এইগুলি ফলোয়াপ করা হয় না। কয়েক বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারাসিটামল সিরাপ খেয়ে শিশু মারা যায়। ডাক্তারের নামে কেইস হয়েছিল। পরে কি হয়েছে তা আর জানা যায়নি। কোম্পানিরা বিভিন্ন ধরণের ওষুধ তৈরি করে মানসম্মত ওষুধ তৈরি করা উচিত। এবং এর মনিটরিং হওয়া দরকার। বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের বিভিন্ন রকমের টেস্ট করা হয়। ঐ রিপোর্ট দেখে ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখেন। দুই জায়গায় পরীক্ষা করলে দুই রকম রিপোর্ট হয়। এটা নিয়ন্ত্রণ হওয়া উচিত।

ডা. সোহেল রোজা চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা।

অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কাজ করি। ভুল চিকিৎসা বা অবহেলা দুটি আলাদা জিনিস। ভুল চিকিৎসা নির্ধারণ করার জন্য কমিটি করা দরকার। সাংবাদিকরা ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু এটা লিখতে পারেন না। অবহেলা এটা ডিসিপ্লিনের ব্যাপার এটা যদি আমরা করতে পারি তা হলে এই ব্যাপারটা থেকে উত্তরণ পেতে পারি। চিকিৎসকরা ঢাকা বাইরে নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। তাদের নিরাপত্তা বিধান করা উচিত। যিনি চিকিৎসা দেন তার চিকিৎসা বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার। তা না হলে ব্যাপারটা অন্য ভাবে চলে আসে।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter