শিশু বাদল চিকিৎসার অব্যবস্থাপনার শিকার


গত ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ২০১৪, এই দিন দুপুর থেকে বৃষ্টি বেগমের প্রসব ব্যথা শুরু হয়, স্বাভাবিক ভাবে দাইমায়ের হাতে প্রসব হবে বলে রোগীর বাড়িতে প্রত্তুতি নেওয়া হয়। বৃষ্টি বেগমের প্রসব ব্যথা ক্রমে বাড়তে থাকে। পার্শ্ববর্তী এক বড় বোন হেলেনা চিলমারী সদর স্বাস্থ্য হাসপাতালে নার্সের কাজে কর্মরত আছে। হাসপাতালের কর্মী হেলেনা বাড়িতে পরামর্শ দেন রোগীর অবস্থা খারাপ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রোগীকে সন্ধ্যায় চিলমারী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। রাত ৯:৩০ মিনিটে চিলমারী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৃষ্টি বেগমের প্রসব কাজ সম্পূর্ণ হয় স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চার প্রসব হয়। পরদিন ৯ এপ্রিল সকাল ১১ টার পর মা ও শিশুকে সুস্থ্য বলে রিলিজ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এইদিন নবজাতক শিশুটি ভাল ছিল। বাচ্চার নাম বাদল ইসলাম বাবু। পরদিন ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাচ্চা মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। বাচ্চার অসুস্থ্যতার লক্ষণগুলো ক. কাঁন্না করলে কালো হয়, খ. শ্বাস কষ্ট ও ঘনঘন নিশ্বাস নেয়, গ. হাত পা নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়।


বৃদল ইসলাম বাবু

বাদল ইসলাম বাবু, এখন সে সুস্থ্য


অসুস্থ্য হবার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে চিলমারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার তাকে কুড়িগ্রাম জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ডাক্তার বলেন, আমাদের কাছে এই চিকিৎসা নাই। আপনারা কুড়িগ্রামে নিয়ে যান। ঠিক তখনই অটরিক্সাতে করে শিশু বাদল ইসলামকে কুড়িগ্রামে সদর হাসপাতাল রাত ৮টায় নেওয়া হয়। বাঁচ্চাকে ভর্তি করা হলে তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা পত্র দেন। এক থেকে দের ঘন্টার মধ্যে খবর পাই বাচ্চা টিকবে না আপনারা বাচ্চাকে রংপুরে চিকিৎসার জন্য নিতেও পারেন বা নাও নিতে পারেন।অর্থাৎ ডাক্তাররা মনে করছেন এই শিশু বাঁচবে না, আমি আবুল কালাম শিশু বাদল ইসলাম বাবুর চাচা পরে ডাক্তারের কাছে জানতে চাই বাচ্চা কেন টিকবে না। আর আপনারা বাচ্চাকে কি চিকিৎসা দিলেন, বাচ্চা কেন এতো অসুস্থ হলো? কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের ডাক্তার বললন বাচ্চার সারা শরীরের ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে এই কারনে বচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না । বাচ্চা এখন আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাচ্চার মা-বাবা জিজ্ঞাসা করেন ডাক্তারের কাছে আপনারা কি ওষুধ দিলেন? আর কেন বাচ্চা বেশী অসুস্থ হলো। উত্তরে ডাক্তার বিরক্ত হয়ে বলেন আপনাকে ডাক্তারি পড়াতে হবে তাহলে বুঝতে পারবেন।শিশুর এই অবস্থা দেখে কুড়িগ্রাম থেকে ডাক্তারদের সাথে মা-বাবা রাগারাগি করে বাচ্চাকে নিয়ে রাত ১১:৪৫ মিনিটে রংপুর সদর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তাররা বাচ্চার চিকিৎসা প্রদান করে পরে বাচ্চা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়।অর্থাৎ কুড়িগ্রামের ডাক্তারের কথা শুনে চিকিৎসা না করলে এই বাচ্চা বাঁচানো যেতো না।

তবে দু:খজন হচ্ছে নামে রংপুর সরকারী মেডিকেল হাসপাতাল কাজে নয়। এখানে প্রতিটি ধাপে ধাপে ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয়। উপর থেকে শুরু করে ঝাড়ুদারকে পর্যন্ত টাকা দিতে হয়। এখানে চালাক চতুর মানুষ না থাকলে রোগী কোনদিনও সুস্থ হবে না। আমার নিজ চোখে যা দেখেছি তাই এখানে তুলে ধরছি।রংপুর হাসপাতালে ডাক্তার সবসময় খুঁজে পাওয়া যায় না। ডাক্তার আসার সময় সকাল ৯টায় ডাক্তার ঠিক ঐ সময় আসেন। এসেই তাঁরা তাঁদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সেমিনারে বসেন। তারপরে তারা ১১টায় রোগী দেখেন। দুপুরের পর থেকে নার্স এবং ছাত্রছাত্রীরা ও ঝাড়ুদার থেকে গেটের দারোয়ান পর্যন্ত এই চিকিৎসার কাজে জড়িত থাকে।দুপুরের পর ডাক্তারদের খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। আমার ভাইয়ের ছেলের সেলাইনের লাইন দিয়ে রক্ত উঠেছে । আমি দৌড়ে গিয়ে নার্সের কাছে বলি তখন তিনি ঝাড়ুদারকে দেখিয়ে দেয়। এতে তাদের সাথে আমার ঝগড়া বেঁধে যায়। আমি বলি কেন ঝাড়ুদার রোগীর চিকিৎসার কাজ করবে? কিভাবে ঝাড়ুদার এ কাজ করতে পারে? নার্স তখন বলে হ্যাঁ ঝাড়ুদাড় হইছে কি হয়েছে উনি পাড়বে। এরকম দায়িত্ব অবহেলার কারণে অঘটন ঘটতে পারে। অনেক খবর নিয়ে জেনেছি এখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭টি করে নবজাতক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে।এটা শুধু মাত্র রংপুর মেডিকেল শিশু ওয়ার্ডে ।

বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল এমনিতে অতি সাধারণ মানুষের বিশেষ করে গরিব মানুষের বসবাস ও খাদ্য দূর্ভিক্ষ এলাকা হিসেবে পরিচিতি। এরই মধ্যে মানুষ অসুস্থ হলে তারা সরকারী সেবা নিতে এসে যদি এই ধরণের বিপদে পড়ে তাদের পাশে দাড়াবে কে? অভিযোগ আছে প্রতিটি কর্মচারী রংপুর মেডিকেলে ঘুষ নেন। রংপুরের মানুষরা এমনিতে না খেয়ে মরে তারপরে আবার হাসপাতালে এসে যদি প্রতিটি জায়গায় ঘুষ দিতে হয় তাহলে সে হাসপাতাল থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। এটা রংপুরের যারা রোগী নিয়ে গিয়েছেন তারা অনেকে বলেছেন।

অনেক দৌড়াদৌড়ি করে ডাঃ জাহিদুর রহমান ও ডাক্তার আশিকুর রহমান রংপুর মেডিকেলের প্রধান শিশু বিভাগ,এই দুই ডাক্তারের সাথে পরিচয় হবার পর আমার ভাইয়ের ছেলের চিকিৎসা তারা দুজন সম্পূর্ণ করেন। রংপুর মেডিকেল হাসপাতাল থেকে বাচ্চা সুস্থ হবার পরে ছাড়পত্র দেন ১৬ এপ্রিল বুধবার। আল্লাহর রহম্মতে এখন বাচ্চা মোটামুটি ভাল আছে।সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু চিকিৎসার পরিবেশ সরকারী হাসপাতালে অবশ্যই করা সম্ভব বলে আমার মনে হয়েছে।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter