বিহারী ক্যাম্পে সন্ত্রাসী আগুনঃ এক শিশু মায়ের দুধ খাওয়া অবস্থায় পুড়ে ছাই হয়েছে
শিশুটি মায়ের দুধ খাচ্ছিল, সেই সময় আগুন লাগানো হয়। সারারাত মা নামাজ পড়ে ঘুমাতে গেছে শিশুটিকে বুকে নিয়ে। মায়ের সাথেই সেপ্টে গিয়ে পুড়ে ছাই হয়েছে এই শিশু ও তার মা। একই বাড়ীতে নয় জন পুড়ে মারা গেছে। দুই বোন, গর্ভবতী - এসেছিল বাবা-মায়ের সাথে শবে-বরাতের নামাজ পড়ে সকালে চলে যাবে নিজ নিজ সংসারে। কিন্তু ভোর না হতেই ঘরে তালা লাগিয়ে আগুন দেয়া হোল। এমনই বর্ণনা দিচ্ছিলেন এলাকার মহিলারা। তারা ক্ষুব্ধ, তাদের চোখে-মুখে শোকের ছায়া, আতংক। এই বাড়িতে যারা মরেছে, তারা তাদেরই প্রতিবেশী। এখানে ঘরগুলো এতো কাছাকাছি যে প্রত্যেকে প্রত্যেকের অনেক কাছের মানুষ। এখানে কে আত্মীয়, কে আত্মীয় নয় তা বিচার করা যাবে না। এক বুড়ো বাবা, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বসে আছে, তাকে ঘিরে রেখেছে অনেক মানুষ। তার ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। সান্তনা দেবার ভাষা কারো নেই।
কানে খালি একটি কথা বাজছিল, সেটা হচ্ছে ঘরের ভেতর মানুষ থাকা অবস্থায় বাইরে থেকে ‘তালা মেরে” আগুন লাগিয়েছে, যেন কেউ বের হতে না পারে। ছোট ছোট এক কামরা বিশিষ্ট এই বাড়ীগুলো রাস্তার পাশেই। আমরা মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে কয়েকজন সেখানে গিয়েছিলাম ১৫ জুন তারিখে। বিকেল ৪ঃ৩০টায় আমরা কুর্মিটোলা ক্যাম্পে যাই। মিরপুর পল্লবী এলাকার বিহারীদের চারটি ক্যাম্পের একটি। এখানে প্রায় ২০,০০০ মানুষের বাস। বাকী তিনটি ক্যাম্পের বাসিন্দারাও এখানে এসে প্রতিবাদ করছে। থেকে থেকে মিছিল হচ্ছে। তখনও তারা ১০টি লাশ পায়নি। হাসপাতালে আহত রয়েছে অনেকে। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সবার মনে আতংক ও ভয়। তারা জানে কারা এই কাজ করেছে। আতশবাজীর কাহিনী ইতিমধ্যেই, টিভি, পত্র-পত্রিকা থেকেও উধাও হয়ে গেছে। এর সাথে বিদ্যুত সংযোগ ও জমি দখলের সম্পর্ক সু-স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই কারা এই কাজ করেছে তাই স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।
আমাদের দেখে তারা বুঝেছে আমরা বাইরে থেকে এসেছি, সংহতি প্রকাশের জন্য। আমাদের তাই সবাই ঘিরে ধরে একের পর এক কথা বলতে থাকলো। সাংবাদিক হিশেবে যাইনি, তাই নোট নিতে পারিনি। তবুও তাদের কথাগুলো কানে ভাসছে। সত্যি কথা, নির্যাতিত মানুষের কথা। মহিলারাই বেশী। তাদের কষ্ট তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। তারা বলছে এই এলাকার সংসদ সদস্য এই কাজের জন্য দায়ী। ইলিয়াস মোল্লা। তার কি দায়িত্ব নয় এসে দেখার কি হয়েছে! তিনি একবারও দেখতে আসেন নাই, কারণ তিনি নিজেই এর সাথে জড়িত। ওরা বলছিল, গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত এমপি সাহেব আসেন নাই।
জানেন, ওরা কেমন নিষ্ঠুর? পুড়ে মারা যাওয়ার পরও ওদের রেহাই দেয় নাই। ওদের পোড়া গায়ে ঠান্ডা পানি না দিয়ে গরম পানি ঢেলে দিয়েছে। আমরা যখন ওদের তুলতে গেছি তখন ওদের শরীরের চামড়া খুলে গেছে। আমরা তুলতে পারিনি। একজন মহিলা এই দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আর যারা কাছে এসেছে তাদের চোখে মুখে মরিচের পানি দিয়েছে, চোখ জ্বলে গেছে তাই কাছে কেউ আসতে পারেনি।
আপনারা আমাদের বলে দেন যে আমরা এদেশে থাকতে পারবো না। এভাবে মেরে ফেলার চেয়ে এটাই ভাল। আমাদের জন্ম একাত্তুরের পরে, আমরা তো এদেশের মানুষ। কিন্তু আমাদের সাথে এমন আচরণ কেন করা হয়? আমরা কি দোষ করেছি?
এই ঘটনার পর দুই দিন হচ্ছে। আমরা তো বসে থাকি না। আমরা সুচের কাজ করি, বেনারসী শাড়ী বোনার কাজ করি। কিন্তু এখন এখানে যে অবস্থা তাতে আমাদের কোন কাজ হচ্ছে না। আমাদের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা কি না খেয়ে থাকবো? কাজ করতে না পারলে আমাদের খাবার জুটবে না।
আমরা কি করবো আপনারা আমাদের বলে দেন। আমরা বিচার চাই।