শরবত দিয়ে মাছ রান্না
পাঠক আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি রাধুনি বা ডেকুর কোন রেসিপি নিয়ে। না আমি যে বিষয়টি নিয়ে আসছি তা হলো কুষ্টিয়া নবপ্রাণ আখড়া বাড়ি কেন্দ্রের সাজেদার রান্না নিয়ে। ৯ জুলাই, ২০১৪ কুষ্টিয়া নবপ্রাণ আখড়াবাড়িতে ইফতারির পর আমরা কয়েকজন সহকর্মী ও আমাদের ঢাকা থেকে আগত দুইজন অতিথি রাতের খাবার খেতে বসে ছিলাম। অতিথিরা হলেন একজন গৌতম দাস ও আলমগীর নিশাদ। বিভিন্ন ধরনের তরকারি ছিল রাতের খাবারে। যেমন কাটুয়া ডাটা, কাঁঠালের এচোর, চিচিংগা ভাজি, ডাল বিশেষ যে রান্নাটি হয়েছিল তা ছিল শরবত দিয়ে রুই মাছ রান্না। খেতে বসে সবাই বলছে মাছটা চিনির মতো মিষ্টি লাগছে কেন? মাছে চিনি দিয়েছে নাকি? খাবার পরিবেশন করছিলেন আমাদের দুইজন সহকর্মী নুরুল ইসলাম ও পরেশ কুমার মন্ডল। তারা কেউ কিছু বলছে না। শুধু একজন আরেক জনের দিকে তাকাচ্ছে। কারণ তারা জানে না এখানে কি ঘটনা ঘটে গেছে। আমাদের দুই বন্ধু এতক্ষনে এই খাবার নিয়ে ইথুপিয়া পর্যন্ত চলে গিয়েছেন। একজন বলছেন ভারতের পাশাপাশি এলাকাতো তাই রান্না একই রকম। যেহেতু কুষ্টিয়া নদীয়ার অন্তর্গত তাই এদের কালচার অনেকটা মিল আছে। আরেকজন বলছেন ইথুপিয়ার রান্না এই রকম আঠালো ভাব থাকে এবং খেতে মিষ্টি লাগে। ফরিদা আপা বলছেন কি রোকেয়া মাছে ওরা চিনি দিয়েছে নাকি? আমি তো হাঁ করে তাকিয়ে আছি। বলছি আপা তরকারিটা রুই মাছের কোরমার মত মিষ্টি লাগছে কিন্তু এটাতো কোরমা না। পাঠক আসল ঘটনা কি হয়েছে জানেন? ঘটনাটি হয়েছে এটাতো রোজার মাস রোজার মাসে সবাই ইফতারিতে শরবত খায় আমরাও ইফতারিতে লেবু দিয়ে চিনির শরবত খেয়েছি। সবাই খাওয়ার পরে যে শরবত এলমুনিয়ামের জগে ছিল সেই শরবত দিয়ে আমাদের সাজেদা মাছের তরকারি রান্না করেছে। তারও কোন দোষ নেই কারণ বিদ্যুত না থাকায় বেচারা মোম বাতির আলোতে রান্না করছিলেন। রোজার দিন ছাড়া অন্য সময় ঐ জগের মধ্যে পানি নিয়ে রান্না করে। সে জানতো না জগে পানি না শরবত। পানি মনে করে ঐটা দিয়ে মাছের ঝোল দিয়েছে। ঘটনা জানা গেল পর দিন সকালে সাজেদাকে জিজ্ঞেস করেছি সাজেদা আপা কাল রাতের মাছ এত মিষ্টি লেগেছে কেন? বেচারা ভয়ে কাচু মাচু হয়ে বলছে আপা আর বইলেন না। ওরা যে জগে শরবত রেখেছে তা আমি জানি না। ঐ শরবত আমি মাছ রান্না করেছি। যেহেতু সাজেদার কাছে টক দই ছিল না। একটু চালাক হলে সে হয়তো আমাদের রুই মাছের কোরমা রান্না করে খাওয়াতে পারতো। পাঠক এই হলো আমাদের আসল রহস্য।