খাবারে আর্সেনিক !
আর্সেনিক একটি রাসায়নিক পদার্থ। প্রাকৃতিক পরিবেশে এবং মানুষের তৈরি দ্রব্য যেমন বালাইনাশকে আর্সেনিক আছে। কিছু পরিমান আর্সেনিক স্বাভাবিক ভাবে মাটিতে, পানিতে এবং বাতাসে ও আছে। গাছপালা স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খাদ্য গ্রহনের সময় অন্যান্য উপাদানের সাথে আর্সেনিকও গ্রহণ করে। এভাবে গাছপালার মাধ্যমে আর্সেনিক আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে যুক্ত হয়। সব চেয়ে বেশী আর্সেনিক থাকে শাক সবজিতে, ফলে এবং দানাদার শস্যে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে এক কেজি কচুর মধ্যে ১৫৮ মিলিগ্রাম আর্সেনিক রয়েছে। এক কেজি চালের মধ্যে ১.৮ মিলিগ্রাম আর্সেনিক পাওয়া গেছে। স্মরণ যোগ্য মানব দেহে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা প্রতি কেজিতে ০১ মিলিগ্রাম। মানব দেহে প্রাথমিক ভাবে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশী আর্সেনিকের প্রভাবে ঘন ঘন মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, মানসিক অস্থিরতা, চুল পড়া,ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের ফলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, পিত্তথলির ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, চামড়ার ক্যান্সার, রাতকানা রোগসহ আরো অনেক রোগ হতে পারে। বাংলাদেশে গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে মাটির তলার পানি তুলে সেচ দিয়ে ইরি বোরো ধান চাষ শুরু হয়। দিনে দিনে সেচ নির্ভর কৃষির প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মাটির তলা থেকে যে পানি তোলা হয় তার ৯৫% সেচের জন্য ব্যবহার হয়। এভাবে বৎসরে প্রায় ১০০০ টন আর্সেনিক মাটির তলা থেকে উপরে তোলা হয়। কাল ক্রমে মাটি থেকে যে আর্সেনিক তোলা হয় তা গাছ পালা, ফল ফসল, পশু পাখী, মাছ, অন্যান্য প্রাণীসহ মানব দেহে সঞ্চিত হয়। শাক সবজি, ফলমূল, দানা শস্য, ডাল ইত্যাদির মধ্যে আর্সেনিক সঞ্চিত হয়।
দানাদার শস্যের মধ্যে গম, ভুটা, মিলেট ইত্যাদীর চেয়ে চালে বেশী আর্সেনিক সঞ্চিত হয়। চাল নির্ভর দেশ যেমন বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, লাওস, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে আর্সেনিক জনিত স্বাস্থ্য সমস্যা বেশী দেখা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে ডাটাশাকে সব চেয়ে বেশী আর্সেনিক আছে এবং মানের ক্রমানুষারে পুঁইশাক, মরিচ, গোল আলু, করল্লা, বাধাকপি, বেগুন, ঢেরশ এবং ফুল কপিতে আর্সেনিক আছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৫৯ জেলার মাটির তলার পানি আর্সেনিকে
দূষিত। আর্সেনিক মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর জন্য মারাত্বক হুমকি। আর্সেনিকে দূষিত পানি দ্বারা বছরের পর বছর সেচের ফলে মাটি দূষিত হয়েছে। আর্সেনিকে দূষিত মাটি ও পানি দ্বারা উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদেহে আর্সেনিক প্রবেশ করছে। বাংলাদেশের মাটিতে আর্সেনিকের পরিমান কোজ প্রতি ৪-৮ মিলিগ্রাম। ক্ষেত্র বিশেষে দীর্ঘদিন মাটির তলার পানি দ্বারা সেচের ফলে মাটিতে সঞ্চিত আর্সেনিরে পরিমান কেজি প্রতি ৮৩ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হয় (বারি, ২০১০)।
আর্সেনিক দূষন থেকে অব্যাহতি পেতে হলে তথা কথিত সবুজ বিপ্লবের ছকে সাজানো শস্য পর্যায় পরিবর্তন করতে হবে। সেচ নির্ভর কৃষির পরিবর্তে বৃষ্টি নির্ভর কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। রবি মৌসুমে সেচ নির্ভর বোরো ধানের পরিবর্তে গমের চাষ বাড়াতে হবে। মাটির তলার পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূউপরি ভাগের পানি জমিয়ে রেখে সেচ দিতে হবে। সেচ দিতে হয়না এমন ফসলের আবাদ বাড়াতে হবে। বৃষ্টি নির্ভর আউশ এবং আমন ধানের আবাদ বাড়াতে হবে।
আজ দেশে বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে আর্সেনিক কণ্টামিনেটেড চাল স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ? আরো জানা প্রয়োজন জন স্বাস্থ্যের উপর আর্সেনিকের প্রভাব কত ব্যাপক? মানব দেহে বিদ্যমান আর্সেনিকের পরিমানের সাথে রোগ ব্যাধির সম্পর্ক কি? আর্সেনিক কণ্টামিনেটেড চালের ভাত খেয়ে মানব দেহে কি প্রতিক্রিয়া হয়? এ সব প্রশ্নের জবাবের জন্য জরুরী ভিত্তিতে স্বাস্থ্য গবেষণা প্রয়োজন।