পাঁচফোড়নের পুষ্টি গুণ
পাঁচফোড়নের অনেক সুনাম। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল এবং বাংলাদেশে আদিকাল থেকে পাঁচ ফোরনের ব্যবহার চলে আসছে। পাঁচ ফোরনের শাব্দিক অর্থ পাঁচটি মসলা। এ পাঁচটি বীজের মধ্যে রয়েছে মৌরি (fennel), মেথি (fenugreek), জিরা (cumin), কালো জিরা (black cumin), ও সরিষা (mustard), কোথাও আবার সরিষার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ধনে (coriander)। কোথাও আবার উল্লেখিত পাঁচটি বীজের যে কোন একটি বা দুটি পরিবর্তে অন্য একটি বা দুটি বীজ যুক্ত হতে পারে। উল্লেখিত যে কোন বীজ সম্পর্কে বিতর্ক থাকতে পারে । এসব বিষয় মতামত লেখাটিকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
পাঁচ জাতের বীজ একত্রে মিশিয়ে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এ বীজ কখন ও বেটে ব্যবহার করা হয়না। সব সময় আস্ত বীজ ব্যবহার করা হয়। শাক সবজি, মুরগী, গরুর গোশত, মাছ, শুকতা, ডাল, ও আচারে পাঁচ ফোরন ব্যবহার করা হয়। সাধারনত রান্নার তেল অথবা ঘিয়ে ভেজে এসব বীজ রান্নার সময় ব্যবহার করা হয় ।
খ্রীষ্ট পৃবের্ব ৭০০০ বছর অর্থাৎ সনাতন কাল থেকেই এ অঞ্চলে মসলার ব্যবহার চলে আসছে। বৌদ্ধযুগ পেরিয়ে কাল পরিক্রমায় আরব, মধ্য এশিয়া, পারস্য, মুঘল আমল পেরিয়ে সব শেষ ইউরোপিও দের প্রভাব বলয় অতিক্রম করে এ অঞ্চলের রন্ধন শিল্পের যে বিকাশ ঘটেছে তারই অবদান আজকের রান্না ঘরের পাঁচ ফোরন।
পাঁচফোড়নে ব্যবহৃত বীজ গুলির রয়েছে অনেক পুষ্টি ও ওষুধি গুণ। রয়েছে খাদ্য প্রাণ ও খনিজ লবন। এ সব বীজে কম বেশী রয়েছে ভিটামিন-এ, বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৬, বি-৯, সি, ই এবং কে। রয়েছে খনিজ লবন যেমন পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ম্যগনেশিয়াম, জিংক, আররন, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম ও কপার। খাদ্য প্রাণ ও খনিজ লবন ছাড়াও পাঁচ ফোরনে ব্যবহৃত বীজে রয়েছে অনেক ওষুধিগুন।
মেথিঃ প্রাচীন কাল থেকে এজমা ও আর্থরাইটিস রোগের ওষুধ হিসাবে মেথির ব্যবহার চলে আসছে। পরিপাক তন্ত্র ও শ্বাসনালীর রোগ এবং ডায়াবেটিস চিকিৎসা ক্ষেত্রে ও মেথি ব্যবহার হয়। নিয়মিত মেথি ব্যবহার করলে মানব দেহে কোলেসট্টল নিয়ন্ত্রনে থাকে।
জিরাঃ জিরা মুখ মন্ডলের উজ্জলতা বাড়ায়, হজম শক্তিবাড়ায়, গ্যাস কমায় এবং পেট ব্যথা কমায়। শরীরে কাটা, ছেড়া ও পোড়া ঘা শুকাতে সহায়তা করে। জিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও জিরা শরীরের ওজন কমাতে, বার্ধক্য প্রতিরোধে, চামড়ার উজ্জলতা বাড়াতে, চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুল বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন মিশরীয় এবং গ্রীক সভ্যতার সময় থেকে ওষুধের উপকরণ হিসাবে জিরার ব্যবহার চলে আসছে।
সরিষাঃ খাদ্য সুগন্ধি যুক্ত করা ছাড়া ও সরিষার রয়েছে বহু ওষুধি গুণ যেমন এজমা, ঠান্ডা লাগা এবং বুকে জমাট বাধা কফ কমাতে, শরীরের ওজন কমাতে, পরিপাক তন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে, বাতের ব্যথা কমতে, কোলেষ্ট্রল কমাতে, চুল বাড়াতে, কোষ্ঠ কাঠিন্য, পাইলস ও ফিসার কমাতে, সর্বোপরি সরিষা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
মৌরিঃ পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং পেট ব্যাথা কমাতে মৌরি ব্যবহার করা হয়। বুকে জমাট বাদা কফ ও শ্বাসকষ্ট কমাতে মৌরি ব্যবহার করা হয়। শিশু সন্তানদের সার্বিক সেবাদান কারি মায়েদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সুস্বান্থ্য রক্ষার জন্য মৌরির ব্যবহার চলো আসছে প্রাচীন কাল থেকে। মুত্রাশয়ের পাথর সরাতে, হিস্কি/ হিক্কা কমাতে, বমি বমি ভাবমুক্ত হতে, বাতের ব্যাথা কমাতে, এবং জন্ডিস রোগের চিকিৎসায় মৌরির চা ব্যবহার করা হয়।
কালো জিরাঃ প্রাচীন কাল থেকে চুলের পরিচর্যা, চুল পড়া বন্ধ করা এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য কালো জিরার ব্যবহার চলে আসছে। শরীরের ওজন কমাতে, বার্ধক্য প্রতিরোধ, মুখ মন্ডলের কালো দাগ সারাতে, এবং মুখ মন্ডলের উজ্জলেতা বাড়াতে কালো জিরা ব্যবহার হয়। মিসরের ফেরাউনের সমাধিতেও কালোজিরার বীজ পাওয়া গেছে। পবিত্র বাইবেল ও হাদিস শরীফেও কালো জিরার উল্লেখ দেখা যায়।
ডায়াবেটিস, আলজাইমার, হেপাটাইটিস, মাইগ্রেন, এলার্জি এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় কালোজিরার ব্যবহার হয় ।
ধনিয়াঃ প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ধনের ব্যবহার চলে আসছে। মানব দেহে ইনস্যুলিন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। ক্ষুধা বৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করে। মাথা ধরা উপশম হয়। মুখে ঘা সারায়। ডায়রিয়া, আমাশায়, ঠান্ডা, কফ, মুখে ঘা, বসন্ত প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
প্রধানত : খাবার সুগন্ধি করতে এবং স্বাদ বাড়াতে পাঁচ ফোরন ব্যবহার হয়। তবে বাড়তি পাত্তনা হিসাবে পাঁচ ফোরনে ব্যবহৃত বীজের লুকায়িত পুষ্ঠি ও ওষুধি গুণ খাদ্যকে আরো সমৃদ্ধ করে।