নীল সবুজ শেওলার গুরুত্ব
শেওলা উদ্ভিদ জগতের একটি সহজ সরল সদস্য। নীল সবুজ শেওলা শেওলার মধ্যে সবচেয়ে সরলতম উদ্ভিদ। অবয়বে সূক্ষ্ম হলেও নীল সবুজ শেওলার গুরুত্ব অনেক। মানব কল্যাণে তাদের যেমন উপকারি ভূমিকা রয়েছে তেমনি কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে।
শেওলার সংগায় নীল সবুজ শেওলা পরিপূর্ণ শেওলা নয়। কারণ, তাদের কোষের মধ্যে কোন নিউক্লিয়াস নাই। নীল সবুজ শেওলা গঠন ও কার্যকারিতার দিক থেকে ব্যাকটেরিয়ার কাছাকাছি। এরা জলে স্থলে সর্বত্র বিরাজমান।
পরিবেশ প্রতিকূলতা সহনশীলতার ক্ষেত্রে এরা সকল জৈব সত্ত্বার উর্ধে। তারা এমন পরিবেশে বাস করতে পারে যেখানে অন্য কোন উদ্ভিদ টিকতে পারে না। জীবাশ্মের পরীক্ষায় দেখা গেছে তিন বিলিয়ন বছর আগে থেকে নীল সবুজ শেওলা পৃথিবীতে ছিল। সম্ভবত: নীল সবুজ শেওলাই সৃষ্টির প্রথম জৈব সত্ত্বা। যার মধ্যেমে জীবনের আবির্ভাব ঘটে এবং মোলিক অক্সিজেন উৎপাদন শুরু হয়। নীল সবুজ শেওলার আবির্ভাবের পূর্ব্বে পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে অক্সিজেন ছিল না । অক্সিজেন জীব জগতের অপরিহার্য পদার্থ। যৌক্তিক ভাবেই বলা যায়, নীল সবুজ শেওলার মধ্য দিয়েই জীব জগতের সূচনা হয়। কালক্রমে অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদ্ভব ঘটে।
আধিকাংশ নীল সবুজ শেওলা বায়ুজীবী ও সালকসংশ্লেষণ ক্ষমতা সম্পন্ন। জীবন যাত্রার জন্য তাদের প্রযোজন অক্সিজেন, আলো এবং রাসায়নিক পদার্থ। ওস্সিলেটরিয়া নামের নীল সবুজ শেওলা যা ইংল্যান্ডের টেম্স নদীর তলদেশে কাদা মাটিতে বাস করে। তা অক্সিজেন বর্জিত পরিবেশে বাস করতে পারে। এ শেওলা চরম পরীবেশে Ñ ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে +৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ মাত্রায়ও বাঁচতে পারে। কিছু নীল সবুজ শেওলা উচ্চ মাত্রার লবনাক্ততা (২৭% পর্যন্ত, উল্লেখ্য সমুদ্রের গড় লবনাক্ততা ৩%) সহ্য করতে পারে। ক্ষারীয় পরিবেশ নীল সবুজ শেওলার পছন্দ। অম্লীয় পরিবেশ তাদের পছন্দ নয়।
এ যাবৎ পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশে কমপক্ষে ২৫০০ প্রজাতির নীল সবুজ শেওলার সান্ধান পাওয়া গিয়াছে। এর মধ্যে ৩০৭ প্রজাতি বাংলাদেশে পাত্তয়া যায়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল, উপকুলবর্তী জেলা সমূহ সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এলাকায় লবনাক্ত মাটিতে নীল সবুজ শেওলার বংশ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্ঠি করে মাটির জৈব পদার্থ বৃদ্ধি এবং উৎপাদিকা শক্তি বাড়ানো যেতে পারে। রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহার বন্ধ করে সার হিশাবে নীল সবুজ শেওলা ব্যবহার করা যেতে পারে। একইভাবে দেশের আন্যান্য অঞ্চলেও নীল সবুজ শেওলার বংশ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। রাসায়নিক সার, বালাইনাশক ও আগাছা নাশকের ব্যবহার বন্ধ করে প্রাকৃতিক কৃষির আবাদ বাড়াতে হবে। সার হিসাবে নীল সবুজ শেওলা ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের স্যাতস্যতে মাটিতে বহু প্রজাতির নীল সবুজ শেওলা জন্ময়। এর মধ্যে উল্লেখাযোগ্য হচ্ছে ক্লোরকক্কাস, ড্যাকটাইলোকক্কাস, এপানোথেছি, পোরফাইরোসাইফোন, সাইজোথ্রিকস, অসসিলেটরিয়া, লিম্বিয়া, সাইলিনড্রোসপারমাম, ক্যালোথ্রিকস, নস্টক, স্টিগোনেলা, হ্যাপলোসাইফোন, রিভুলারিয়া, ইত্যাদি। পানিতে এবং ছায়াযুক্ত উঁচুস্থানে যেমন পুরানো দেয়াল, বড় গাছের গুড়ি ও বাকল ইত্যাদিতেও বহু প্রজাতির নীল সবুজ শেওলা জন্মায় ।
এনাবেনা এ্যাজোলি নামের একটি সবুজ শেওলা এ্যাজোলা পিনাটা, জলজ ফ্যার্নের দেহে বাস করে এবং বায়ু থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে নিজ দেহে ধারণ করে। মাটির উর্বরতা, বাড়াবার জন্য বাইওফারটিলাইজার হিসাবে এ্যাজোলা ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্পাইরুলিনা, একটি এক কোষি বহু গুণে সমৃদ্ধ ভাসমান নীল সবুজ শেওলা। এর দেহে ৬০% প্রোটিন রয়েছে । আরো আছে ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এবং খনিজ লবন। খাদ্য, পুষ্টি ও ওষুধ হিসাবে ব্যবহারের জন্য স্পাইরুলিনা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় মাটির লবনক্ততা ব্যবস্থা করে উৎপাদিকা শক্তি বাড়াবার জন্য নীল সবুজ শেওলা অবদান রাখতে সক্ষম