সিলেটে্র টিলা পাড়ায় গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি
অপুষ্টি সব দেশেরই উদ্বেগের বিষয়, অনেক উচ্চ আয়ের দেশেও এই সমস্যা আছে। এই পুষ্টির উন্নতি করতে হলে মানুষের জীবিকা বা মানুষের ভাল উপার্জনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুধু ধান উৎপাদন করে কৃষির উন্নতি দেখালে হবেনা। অপুষ্টির হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষির কোন বিকল্প নেই। এটা অনুভব করতে পেরেছি সিলেটে একটি দাই প্রশিক্ষণে গিয়ে।
সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার একটি গ্রামের নাম টিলাপাড়া। এলাকাটি পাহাড়ী এলাকা। এই গ্রামের মানুষ পাহার কেটে বাড়ি ঘর তৈরি করেছে। রাস্তা খুব উচু নীচু। টিলাপাড়া গ্রামে কোন সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এখান থেকে বেশ দূরে। বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসার জন্য ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। ওসমানি মেডিকেল কলেজ সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র । টিলাপাড়া দাইঘর থেকে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৭ কিলো মিটার দূরে। এখানকার রাস্তা পাকা। সিএনজি চালিত বেবী সবসময় পাওয়া যায়। এখানকার বেশির ভাগ লোক লন্ডনে থাকে। যারা আছে তারা অনেক ধনী। আবার এমন পরিবারও আছে যার কিছুই নেই। ছোট ছোট পুকুর আছে। এই পুকুর থেকে ছোট মাছ খেতে পারে। এই এলাকায় শাক সবজির চাষ নেই শাকসবজি অনেক কম। বেশির ভাগ মানুষ কেনা সবজির উপর নির্ভর করে। শুধু ধানের ফলন বেশি।
এই প্রশিক্ষণে আমরা পুষ্টি পরিস্থিতি বুঝার জন্যে দাইমাদের দিয়ে একটি পুষ্টি থালা করিয়ে ছিলাম। পুষ্টি থালা একটি নতুন ধারণা।
দাইদের বলে ছিলাম দুটি দলে ভাগ হয়ে আপনারা দুটি থালা সাজান। একজন গরীব গর্ভবতী মা এক বেলার খাবারে কি ধরণের খাবার খেতে পারেন। আরেক দলকে বলা হয়েছিল একজন ধনী পরিবারের মা একবেলা কি ধরণের খাবার খেতে পরেন। গরীব পরিবারের থালাটি সাজান দাই রীনা বেগম। আর ধনী পরিবারের থালাটি সাজান দাই নাসিমা বেগম।
দাইমারা যখন থালাটি তৈরি করে সামনে নিয়ে আসে তাতে খুবই কষ্টকর একটি চিত্র দেখা যায়। তা হলো একজন গরীব পরিবারে গর্ভবতী মা এক বেলায় যে খাবার খান তা হলো ভাত, কচুর শাক, রসুন, মরিচ, শুটকি, অনেক সময় শুধু লবণ দিয়েও ভাত খায়। মাঝে মাঝে তেল ছাড়াও রান্না করেন।
ধনী পরিবারের মা যে খাবার খান তা হলো ভাত, মাছ, লালশাক, সব সবজি দিয়ে একটা তরকারি, এবং ডাল। এই অবস্থা দেখে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না যে দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি কত ভয়াবহ। এখানে একটি সরাসরি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছি। ৬ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে টিলা পাড়া গ্রামে একটি মায়ের বাচ্চা জন্ম হয়েছে দাই মা হালিমার হাতে। যিনি বাচ্চা প্রসব করেছেন তিনি খুব গরীব পরিবারের একজন মা। তার ঘরে কোন খাবার না থাকায় তার প্রতিবেশি জোৎস্না বেগম তার প্রসবের পর নিজের বাড়ি থেকে ভাত রান্না করে রুজট পাতার বড়া করে প্রসুতিকে খাইয়েছেন। গর্ভবস্থায়ও এই সব মাদের খাবারে নিশ্চয় তেমন কোন পুষ্টিকর খাবার থাকেনা? এই অপুষ্টির ভয়াবহতা থেকেই জন্ম হচ্ছে অপরিণত নবজাতকের। অপরিণত নবজাতকের জন্ম হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে সেগুলি হলো অল্প বয়সে বিয়ে, পুষ্টিহীনতা, কমসময়ের ব্যবধানে বারবার গর্ভধারণ করা, ধুমপান, গর্ভাবস্থায় মায়ের উচ্চরক্তচাপ, গর্ভাবস্থায় রক্তপাত ইত্যাদী।
অপুষ্টি দুর করতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পুষ্টিকর খাবারের প্রতি জোর দিতে হবে।