লজ্জা নারীর নয়, রাজনীতির ভূষণ হওয়া উচিত
লজ্জা নারীর ভূষণ বলে আমরা জানি, তাই নারীদের লজ্জা পেতেও দেখি। এটাই ট্রডিশান হয়ে আসছে। দেখে অভ্যস্থ সবাই। নারী বিশেষ বয়সে কথায় কথায় লজ্জায় লাল হয়ে যায়, আর সারা জীবনই লজ্জায় নিজের অধিকারটুকুও প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। কাজেই লজ্জা নারীর জন্যে ভূষণ না হয়ে একটি প্রতিবন্ধকতাও মনে হতে পারে। বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। যা তার প্রয়োজন তা সে মুখ ফুটে চাইতে পারে না। সমাজকে ভয়, পরিবারকে ভয়, তার মনের মধ্যে যে বাঘ আছে তা লজ্জা রূপে ফুটে ওঠে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে হয়তো এই কারণে জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও সামাজিক অনেক সুচকে নারী পিছিয়ে থাকে। যেমন নারীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা, অসুস্থ্য হলে চিকিৎসা না পাওয়া, পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলেও কিছু বলতে না পারা – এ রকম অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। নারীর মধ্যে লজ্জা না থাকলে সে হয়তো অনেক কিছু ‘আদায়’ করতে পারতো।
কিন্তু তার মানে কি এই যে আমরা নারীকে ‘নির্লজ্জ” হবার পরামর্শ দিচ্ছি? না, সেটা মোটেও নয়। লজ্জা বাদ দিলেই সব অর্জন হবে না। নারী নির্লজ্জ হবে না, এটা তার ভূষণ। নারী তার এই ভূষণ বজায় রেখেই অধিকার আদায় করবে। কিন্তু আমরা বলছি, লজ্জা শুধু নারীর নয়, পুরুষেরও ভূষণ হওয়া দরকার। লজ্জা সকল মর্যাদাশীল মানুষের ভূষণ। পুরুষ নির্লজ্জ হলে পরিবার ধ্বংস হয়। সে তার স্ত্রীর অধিকার হরণ করে, মা-বাবার প্রতি দায়িত্বহীন হয় এবং নিজ কর্মক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজ এবং স্বেচ্ছাচারী হয়। শরম থাকার অর্থ এই নয় যে তাকে মুখ ঢেখে রাখতে হবে, বা কথা বলা বন্ধ করতে হবে। শরম থাকা মানে তাকে দায়িত্ববান হতে হবে। একইভাবে নারী তার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে নির্লজ্জ হবে না, বরং লজ্জাহীনতার সংস্কৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত করে পুরুষকেও শরমের ধরম শেখাবে। জানি এই আলোচনা কঠিন, এবং এতে অনেকেই বিরক্ত হতে পারেন। তবুও বলছি।
কিন্তু এখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রাজনীতিবিদদের নির্লজ্জতা। এই নির্লজ্জতা পোশাকের নয়, আচরণের এবং কথার। মুখে যা আসছে রাজনীতিবিদরা তাই বলছেন। প্রতিপক্ষের প্রতি তাদের আচরণ এমন অশালীন পর্যায়ে যাচ্ছে যে তা চোখে দেখা যায় না। চোখ মুখের ভাবভঙ্গীতে অশালীনতা। ক্ষমতাশীন হওয়ার অর্থ যদি হয় নির্লজ্জ হওয়া তাহলে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে নির্লজ্জ হয়ে যায় তাদের ক্ষমতায় বসাবার দরকার নেই। একই রাজনীতিবিদ সকালে এক কথা বলছেন, বিকালে আর এক কথা বলছেন। একই সরকারের মন্ত্রী একে অপরের কথার বিপরীত কথা বলছেন। পরে ঠিকই দেখা যাচ্ছে তারা যা বলেছেন তা ঠিক ছিল না, ভুল ছিল, মিথ্যা ছিল, তথ্য গোপন করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও একজন রাজনীতিবিদ বা মন্ত্রীকে লজ্জিত হতে, বা শরমিন্দা হতে দেখছি না। সরকারের ভুলের কারণে বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে লঞ্চের মানুষ ডুবে মরছে, গার্মেন্ট শ্রমিক পুড়ে মরছে, ভবন ধ্বসে মরছে। বাসে করে যেতে গিয়ে লাশ হতে হচ্ছে। কিন্তু কেউ লজ্জিত নয়, কেউ শরমিন্দা নয়, কেউ দুঃখিত নয়!
গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচন হয়নি, তাও কারও লজ্জা পেতে দেখা যায় না।
তাই বলছি, লজ্জা নারীর নয়, রাজনীতির ভূষণ হওয়া উচিত। আপনি কি বলেন?