মেয়েরা কি শুধুই অভিশাপ ?


কিছুদিন আগের কথা, একজন মা আমার সামনে বলছে –‘আমি মেয়ে সন্তান দু’চোখে দেখতে পারি না। মেয়ে সন্তান আমার চোখে কাটার মত। যখন আমার বড় মেয়ে হয় তখন আমি খুব রাগ করেছিলাম। রাগ করে আমি তিন দিন মেয়ে কোলে নেইনি। মেয়ে দিয়ে কি হয়, মেয়ে হলো বোঝা। কিন্তু যখন আমার ছোট ছেলে জন্ম গ্রহন করলো তখন আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম’। এই কথাগুলো শুনে মুহুর্তের মধ্যে আমার চোখে পানি চলে আসে। মনে মনে ভাবি একজন মা যিনি কত কষ্ট করে দশ মাস গর্ভে ধারন করে সন্তান জন্ম দিলেন তিনিই তার প্রতি অসন্তষ্ট কিভাবে হন! তারপর একদিন নিজেই প্রশ্ন করি, চাচী আপনি নিজেও তো একজন মেয়ে ও মা। তবে মেয়ে সন্তানকে বোঝা মনে করেন কেন? তিনি উত্তরে বললেন, মেয়ে বড় করে পরের ঘরে দিতে হয়,বিয়ে দিতে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু ছেলে মানুষ করলে বড় হয়ে উপার্জন করে। বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মার কাজে লাগে। এমনকি ছেলের বিয়ের সময় কিছু নিয়ে আসা যায়। এসব যুক্তির কথা শুনে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। আজকের যুগে এই যুক্তি কি আদৌ সঠিক?

এ প্রসঙ্গে আমার এক বোনের কথা মনে পড়ে গেল। বিয়ের সময় বাবা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে যৌতুক দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখে ছিলেন। কিন্তু বর বাবা-মার একমাত্র সন্তান হওয়ায়  ও তাদের প্রচুর অর্থবিত্ত থাকায় ছেলের বাবা-মা যৌতুক নিতে রাজি হলেন না। তারা বললেন, যৌতুক নেয়া তাদের কাছে হারাম । খুবই ভাল কথা। মেয়ের বাবা হাসি মুখে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। কিন্তু বিয়ের মাত্র দুই বছর পর ওদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসলো, শাশুড়ি যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করলো মেয়েটির উপর। ততোদিনে মেয়ের বাবার গচ্ছিত টাকা খরচ হয়ে গেছে। কোথায় পাবেন এত টাকা একমাত্র উপার্জনশীল মধ্যবিত্ত আয়ের ওই অসহায় মানুষটি। একটু ভাবুন তো ?। তিনটি সন্তানের পড়ালেখার খরচ সহ সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় বাবাকে। তবুও এরমধ্যেও মেয়ের সুখের জন্য বিভিন্ন সহযোগিতা এবং নিজ বাড়ির অর্ধেক অংশ বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়। তার ইচ্ছে মেয়ে যেন শ্বশুর বাড়িতে ভাল থাকে এবং  লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে পারে। যাতে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাতে রাজি নয়। এই অসহায় অবস্থা শুধুমাত্র মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারনেই কি?

অথচ সমাজে এমন ছেলেরও অভাব নেই যারা নিজে সংসার পেতে বাবা-মাকে আর দেখে না,ছোট ভাই-বোনদের খবর রাখে না। তাহলে শুধু মেয়ে বলে তাকে অবহেলা না করে উপযুক্ত লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করলে কোন মেয়েই এখন আর বোঝা বা সমাজের তথাকথিত অভিশাপ নয়। বহু মেয়ে উচ্চ শিক্ষিায় মিক্ষিত হয়ে সুশৃংখলভাবে সংসার জীবন অতিবাহিত করছে। সুতরাং পুরুষশাষিত এই সমাজে এখনও যারা ‘মেয়ে বিদ্বেষী’ মনোভাব দেখান তারা তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করুন। এতে সমাজে শান্তি বাড়বে,পরিবারগুলোতেও শৃংখলা আসবে। শিক্ষিত মেয়ে সব সময় সম্পদ, বোঝা নয় এই দৃষ্টিভঙ্গীতে এগুতে হবে সবাইকে।

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter