কৃষি যান্ত্রিকায়নের পরিনাম ভয়াবহ
কৃষি মানব জাতির জন্য স্বর্গীয় উপহার। আদিতে মানুষ বনে বাস করতেন। শিকার করতেন। বনে ফল মূল আহরণ করতেন। যখন থেকে মানুষ ঘর বাঁধতে শিখলেন ঘরের আশে পাশের জমিতে ফল ফসলের বীজ পুতলেন। পশু পাখি পুষতে শুরু করলেন। যখন থেকে জমি চাষ করে বীজ বুনতে শুরু করলেন তখন থেকে কৃষি সভ্যতা শুরু হল।
ফসল আবাদ করতে জমি চাষের প্রয়োজন হল। জমি চাষের সহায়ক শক্তি হিসাবে গরু মহিষের ব্যবহার শুরু হল। জমি চাষের জন্য কাঠের লাঙল, জোয়াল, মই ইত্যাদির ব্যবহার চলেছে বহুদিন। কালক্রমে বাণিজ্যিক কৃষির প্রসার ঘটেছে। বাণিজ্যিক কৃষির সাথে সাথে শুরু হয়েছে কৃষি যান্ত্রিকায়ন। উন্নত দেশের অনুকরণে উন্নয়নশীল দেশে ও কৃষি যান্ত্রিকায়ন প্রসারিত হয়েছে। জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজ বপন, আগাছা নিধন, পোকা মাকড় দমন, সেচ, ফসল কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই, প্রাক্রিয়া করণ, সংরক্ষণসহ সব ক্ষেত্রেই এখন যন্ত্রের ব্যবহার চলছে ।
এখন প্রশ্ন উঠেছে কৃষি যান্ত্রিকায়ন কি কৃষকের প্রয়োজনে ঘটেছে নাকি বহু জাতিক কোম্পানির বাণিজ্যিক স্বার্থ সম্প্রসারনের উদ্দেশ্যে ঘটেছে? ক্রম বর্ধমান জন সংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরনের কথা বলে অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও আনুসাঙ্গিক উপকরন বাজারজাত করা হয়। এসব যন্ত্রপাতি ও উপকরন বাজারজাত করার দায়িত্ব পালন করেন বহুজাতিক কোম্পানি এবং তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা। বাজার সম্প্রসারনের দায়িত্ব পালন করেন দেশের সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগি প্রতিষ্ঠান। নগদ অর্থের চাহিদা পূরন করতে এগিয়ে আসেন সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক এবং এনজিও।
নিত্য নতুনযন্ত্রপাতি এবং উপকরন বাজারজাত করার জন্য বহুজাতিক কোম্পানি গুলি সব সময় গবেষণা করছে। বর্তমানে তাদের বক্তব্য হচ্ছে ট্টাক্টর ও পাওয়ার টিলার দ্বারা চাষের ফলে মাটির ক্ষয় হচ্ছে। অতত্রব জমি চাষ না করে বীজ বপন করে আগাছানাশক ব্যবহার করে, চাষাবাদ করতে হবে। কৃষকদের এখন বীজ বপন যন্ত্র এবং আগাছা নাশক ক্রয়ের জন্য উৎপাহিত করা হচ্ছে। এসব ক্রয়ের জন্য ভর্তুকী দেয়া হয়। ঋন শুবিধাও দেয়া হয়। তবে বাস্তব সত্য হচ্ছে আগাছানাশকের মত মারাত্মক বিষ ফসলের ক্ষেতে ব্যবহারের ফলে মাটিতে যে সব উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রতিনিয়ত মাটির উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে নির্বিচারে তাদের ধ্বংশ করা হচ্ছে। প্রাণ বৈচিত্র ধ্বংশ হচ্ছে।
কৃষি যান্ত্রিকায়নের ধ্বংশাত্মক প্রক্রিয়া থেকে মাটি ও প্রাণ বৈচিত্র রক্ষার জন্য নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকদের উদ্ভাবিত পরিবেশ বান্ধব নয়াকৃষির দশ নীতি দেশের সকল কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।