রাশেদুল ইসলাম এর অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত
রাশেদুল ইসলাম আর আমাদের মাঝে নেই। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোরে আমাদের কাঁদিয়ে সে এই পৃথিবী ছেড়ে বহু দূরে চলে গেছে। একাউন্টিং অনার্সের ছাত্র ছিল রাশেদ। পড়াশুনা করতো ঝিনাইদহ কে. সি কলেজে। থাকতো ঝিনাইদহ হোষ্টেলে। আর ৬ মাস পরেই ছিল তার ফাইনাল পরীক্ষা। কিন্তু রাশেদের আর কোন দিনই পরীক্ষা দেওয়া হলো না। এই GBS (Guillain Barre Syndrome) Autoimmune Disease তাকে চিরতরের জন্য থামিয়ে দিয়েছে। এটা একটা ভাইরাস। প্রথমে জ্বর হয়। তারপরে খুব তাড়াতাড়ি শরীরের নার্ভগুলো অকেজো হয়ে পরে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রাশেদই ছিল বড়।
রাশেদুলের বাবা মো: রেজাউল আমার সহকর্মী। ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪ টাংগাইলের বিষ্ণুপুর গ্রামে উবিনীগ বিদ্যা ঘরে ছিল এক আলোচনা সভা। আমরা সেই সভায় অংশগ্রহণ করি। ঝিনাইদহ থেকে বিকাল ৪টায় রেজাউলকে ফোন করে রাশেদ। ফোনে বলে, “ বাবা আমার বাঁ হাতে শক্তি পাচ্ছি না। অবশ লাগছে”। রেজাউল চোখের জল মুছে ছেলের কাছে যাওয়ার জন্য সঙ্গে সঙ্গে রওনা দেয় ঝিনাইদহে। একদিন আগে ছেলের সাথে কথা হয়ে রেজাউল জেনেছিল রাশেদের ডান পায়ে শক্তি পাচ্ছে না। ভেবেছিল অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়েছে। হয়তো সে জন্য এমন হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ রাশেদ এর জ্বর হয়েছিল। সাথে ছিল ঠান্ডা, কাশি। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেয়ে জ্বর কমেও ছিল। কিন্তু জ্বর কমে যাওয়ার ২/৩ দিন পরে রাশেদ অনুভব করে তার ডান পায়ের আঙ্গুল অবশ লাগছে। রাতে বাথরুমে যেতে গিয়ে পায়ে জোর না পেয়ে পড়ে যায়। ওর হোষ্টেলের বন্ধুরা রাশেদকে তুলে ঘরে নেয়। পরদিন সকালেই রাশেদের ডান পা সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যায়। ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ রাশেদকে ঝিনাইদহের বড় ক্লিনিকে নেওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান হয়।
মনে মনে একটা দুঃচিন্তা ছিল। তাই রাশেদের শারীরিক অবস্থা জানার জন্য আমি রেজাউলকে ফোন করি। আমার ফোনে রেজাউল কাঁদতে কাঁদতে বলে আপা আমার ছেলের আরও এক হাত ও এক পা অবশ হয়ে গেছে। আমি এ কথা শুনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি চিৎকার করে বল্লাম তাড়াতাড়ি ছেলেকে ঢাকায় আনেন। আমি তখনও জানিনা এই রোগের ভয়াবহতা।
১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ রাশেদকে ঢাকা আগারগাঁও এর ন্যাশনাল ইনিষ্টিটিউট অব নিউরো সাইন্স হাসপাতলে আনা হয়। এর মধ্যেই রাশেদের সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যায়। শুধু মুখ অল্প অল্প নাড়তে পারছিল। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় চিকিৎসা। সন্ধ্যায় রাশেদকে I.C.U তে নেয়া হয়। আর রেজাউল ও তার স্ত্রী জায়গা নেয় I.C.U র বারান্দায়। প্রতিদিন বিকাল ৫টায় ছেলেকে চোখের দেখা দেখতে পাবে বলে এক মুহূর্তের জন্যও স্থান ত্যাগ করে নাই রাশেদের মা-বাবা।
১৪ থেকে ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১৬ দিন ডাক্তারদের সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে আমাদের সকলকে কাঁদিয়ে রাশেদ পাড়ি দেয় অজানার পথে। যেখান থেকে আর ফেরা যায় না।
রাশেদ ভাত খেতে চেয়েছিল। কিন্তু সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যাওয়াতে মুখে কোন কিছু খাওয়ানো সম্ভব হয় নাই। সন্তান হারানোর বেদনা, মায়ের মনে এই কষ্ট কি কখন দূর হবে?
আমরা রাশেদের আত্মার শান্তি কামনা করি।