জিহাদকে উদ্ধারে সরকার ব্যর্থ হয়েছে
জিহাদ উদ্ধারে ব্যর্থদের পদত্যাগ দাবিতে উইমেন্স ফর গুড গভর্নেন্স নামে একটি সংগঠন ২রা জানুয়ারি, ২০১৫ শুক্রবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ জিহাদের জন্য কাঁদছে, শিরোনামে মানববন্ধনের আয়োজন করে। উইমেন্স ফর গুড গভর্নেন্সের সভাপতি ড. দিলারা চৌধুরীর নেতৃত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন-সংগঠনের সদস্য সচিব রুবী আমাতুল্লা, সদস্য ব্যারিষ্টার রাবেয়া ভূঁইয়া, জাকিয়া বেগম, ফরিদা আখতার, ইলা মল্লিক, নাসিমা মান্নান, মাহমুদুর রহমান মান্না, প্রমুখ। বক্তারা বলেন আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কতটা দুর্বল শিশু জিয়াদের করুন মৃত্যুই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বক্তারা দাবি করেন যে রাষ্ট্র আমাদের জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে সে রাষ্ট্রের যারা সংশ্লিষ্ট তাদের পদ ত্যাগ দাবি জানান। অবিলম্বের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। জিহাদের মুত্যুর জন্য সরকারি দায়ি। শিশু জিহাদ এখন বাংলাদেশের প্রতীক। জিহাদের হত্যাকরীদের বিচার চাই। জিহাদের পরিবারের উপযুক্ত কক্ষতিপূরণ দেয়ার ও দাবি জানান বক্তারা। সরকার জিহাদকে উদ্ধার করতে গিয়ে যে নাটক করেছে দেশ বাসি তা মেনে নিতে পারছে না।
জিহাদকে উদ্ধার করতে না পারলেও তার শোকার্ত বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে ১২ ঘন্টা আটকে রেখে যে নির্যাতন করেছে। তা দেশবাসি মেনে নিতে পারে না। সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনী এলাকায় ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ শুক্রবার বিকেল ৪ টার দিকে খেলতে গিয়ে রেলওয়ে পাম্পের পরিত্যক্ত পানির পাইপে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিহাদ। হাজারো মানুষ সারারাত পাইপের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের প্রিয় জিহাদকে উদ্ধারের আশায়। সেখানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাইপের ভিতরে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা ফেলেন, ক্যামেরা উঠিয়ে বলেন পাইপের ভিতরে জিহাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কর্মকর্তারা বলেন এটা গুহব। ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। হাজারো মানুষের আশাকে ব্যর্থ করে দিয়ে উদ্ধার কাজের এক পর্যায়ে পর দিন বিকেল পৌনে তিনটায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হল আর কোন আশার আলো নেই। পাইপের ভিতরে কোন শিশুর অস্তিত্ব নেই। তাই উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। এই ঘোষণার পর পর এলাকাবাসি ক্ষোভে পেটে পড়ে। ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ বেলা তিনটার দিকে সরকারকে উপেক্ষা না করে সেচ্ছাসেবী কয়েকজন যুবকের সহায়তায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাত্র ১৩ মিনিটের মাথায় উদ্ধার করা হয় শিশু জিহাদকে। তারা হলেন, সুজন দাস, রাহুল, আবদুল মজিদ, শফিকুল, রহমতউল্লা, আলমগীর ও অনোয়ার। যদিও মৃত উদ্ধার হয়েছে তবুও তাদের ধন্যবাদ জানাই এই জন্য যে, শিশু জিহাদ কে উদ্ধার করতে না পারলে জিহাদের বাবার জীবনে আরো হুমকি নেমে আসত। জিহাদকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কর্মরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে জিহাদকে মৃত ঘোষণা করেন। উদ্ধার কাজে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
জিহাদের বাবা নাসির উদ্দিন ফকির মতিঝিলের একটি স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী। জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার দুই আসামী রেলওয়ে উপসহকারী প্রেকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ও ঠিকাদার আবদুস সালামকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এটাকেও রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলে মনে করেন জনগণ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেন্সি বিভাগের প্রধান হাবিবুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্ত করে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইপে পড়ার দুই ঘন্টার মধ্যে জিহাদের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে সে মারা যায়। মাথাও আঘাত রয়েছে। জুস খাওয়ার কোন আলামত তারা পায়নি বলে জানান। বক্তারা বলেন তা হলে সরকার কেন জনগণের সাথে এ ধরণের নাটক করলেন এর জবাব আমরা চাই?