অবরোধের ধাক্কা সকলের গায়


৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে টানা অবরোধ ও হরতাল। আজ অবরোধ ও হরতাল মিলিয়ে ১৯ দিন পার হতে চলেছে। এই ১৯ দিনে অবরোধের কারণে নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে ধাক্কা লেগেছে সকলের গায়ে। সবার দু:চিন্তা ও অস্থিরতা বেড়ে গেছে। অর্থনৈতিক ভাবে সবাই ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছেন। প্রথমেই ধরা যাক কৃষকের কথা আমরা দেখছি অবরোধের কারণে কৃষক তার উৎপাদিত ফসল নায্য মূলে বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে রেখেছে এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি হলো টমেটো, মূলাসহ শীতকালীন শাক সবজি । ট্রাক চলছে না ফলে কৃষক তার উৎপাদিত মাল পাঠাতে পারছে না। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা শহরের বাজারে। বাজারের আরতদারা মাল কিনতে না পারার কারণে চড়া দামে মাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাঁচাবাজরের ব্যবসায়ীরা মাল না আসায় তাদেও বেচাঁকেনা কমে গেছে। সরবরাহ কম থাকায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে । ফলে সবাইকে বাজারে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। আবার যে সব মাল প্রতিদিন দুই তিন মন বিক্রি হতো সেই মালের বিক্রিও কমে গেছে। ফলে আরতদারদের ব্যবসায় চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে ঢাকার কাঁচা বাজারে যে দরে সব কাঁচামাল বিক্রি হয়েছে তার একটি তালিকা দেয়া হলো গত সপ্তাহে শিম এর দাম ছিল ৪০ টাকা কেজি এ সপ্তাহে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা, গাজর, ৩০-৩৫ টাকা, আর পেঁয়াজ ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা কেজি, করলা ৫০ টাকা কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা কেজি, বাঁধাকপি প্রতিপিচ, ২০ টাকা, ফুলকপি প্রতিপিচ ২৫-৩০ টাকা, মশুর ডাল ১২০ টাকা কেজি ডাল ও তেলের দাম কেজিতে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। চালের সরবরাহে ঘাটতি অবরোধে পরিবহন সংকট চরমে। ১৫ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া এখন ৩০ হাজার টাকা। গোদামগুলোতে চালের ব্যাপক মজুদ থাকা সত্বেও সরবরাহ না থাকায় বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। তবে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এভাবে অবরোধ চলতে থাকলে চালের সরবরাহে বিপর্যয় নেমে আসার আশংকা রয়েছে। চাল মিলবে কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।

পণ্যের মূল্য বাড়ার কারণে যে সব শ্রমিকরা বেশী সমস্যায় পড়েছেন তারা হলেন যে সব গার্মেন্ট শ্রমিকরা নতুন কাজে যোগদান করেছেন তারা ও নির্মাণ শ্রমিকরা। এই সব শ্রমিকরা সাধারণত ছোট দোকানিদের কাছ থেকে বাকি বাজার করে থাকেন। ঠিকমত কাজ না থাকায় শ্রমিকরা দোকানের বাকী পরিশোধ করতে পারছেন না। আবার এদিকে বছরের প্রথম মাস অনেক শ্রমিক তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। ভর্তির টাকা, স্কুলের ইউনিফর্ম সব মিলিয়ে শ্রমিকের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তেমনি একজন নির্মাণ শ্রমিক ময়নাল তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে জানান তার ছেলে একটি প্রাইভেট কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে পড়ে। সে নিয়মিত পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে কিন্তু তাকে আবার ভর্তি হতে হবে টাকা দিয়ে। এ কথা শুনে সে হতবাগ হয়ে গেছেন আসলে ময়নাল গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন কাজের তাগিদে। এখন শিক্ষা যে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে তা তার জানা নেই। সব মিলিয়ে সে এখন মহা সমস্যায় পড়েছেন।

এদিকে সহিংসতা বন্ধ না হলে দেশব্যাপী দোকানপাট বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সংগঠনটির নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অলোচনার জন্য সময় চেয়ে দুই নেত্রীর কাছে চিঠি পাঠাবেন। সময় না দিলে ১ সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে। এর পরও সহিংসতা বন্ধ না হলে তারা মানববন্ধন এবং অনশন কর্মসূচী পালন করবেন। চুড়ান্ত কর্মসূচী হিসেবে সব দেকানপাট বন্ধ করে দেবেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান প্রতিদিন দোকান ভাড়া বাবদ ১৫০ টাকা করে খরচ হচ্ছে।

ফলে অনেক দোকান মালিক আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেন ২৫ লাখ দেকানে গড়ে তিনজন করে কর্মচারী ধরলেও দেশে মোট কর্মচারী আছেন ৭৫ লাখ। শ্রমিক ও মালিক মিলিয়ে এককোটি পরিবার এসব দেকানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আর প্রতি প্ররিবারে ৪ জন করে ধরলেও এসব দোকানের ওপর চারকোটি মানুষের ভাগ্য জড়িত। লেখক হিসেবে আমি অনুরোধ জানাই আমাদের দেশের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই হরতাল ও অবরোধ এবং সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধকরা হোক।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter